জেরুসালেম: ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের হামাস গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ থামার কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতেও ইজরায়েলে রকেট বর্ষণ করেছে হামাস। ইজরায়েল জুড়ে শোনা গিয়েছে সাইরেন। ইজরায়েলের পক্ষ থেকেও পাল্টা বিমান হামলা চালানো হয়েছে গাজায়। ইতিমধ্যেই দুই পক্ষ মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর দুই পক্ষের এই গোলাগুলির মধ্যে আটকে পড়েছেন প্রায় ১৮,০০০ ভারতীয় নাগরিক। হ্যাঁ, ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই মুহূর্তে ইজরায়েলে প্রায় ১৮,০০০ ভারতীয় আটকে পড়েছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে তাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, দুই দেশের এই উত্তেজনার ভারতীয়রা কি আদৌ নিরাপদ? তাঁরা কোথায় লুকিয়ে আছেন? কী বলছে কেন্দ্রীয় সরকার? প্রশ্নগুলির পাশাপাশি, কেন ভারতীয়রা ইসরায়েলে যাচ্ছেন?
বিদেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইজরায়েলে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সেখানকার বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা করার কাজ করেন। সেই দেশে বসবাসকারী ১৮,০০০ ভারতীয়র মধ্যে প্রায় ১৪,০০০ মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাকিদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করেন। তাদের সংখ্যাটাও কয়েক হাজার। এছাড়া আরও অনেকে আছেন, যারা হিরা ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরে ইজরায়েলে আরও প্রায় ৮৫,০০০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি বাস করেন।
কেন এত বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ইজরায়েলে যান? কীসের আকর্ষণে? বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা করার জন্য কী যোগ্যতা লাগে? তাঁরা কত বেতন পান? পশ্চিমী দেশগুলিতে নার্সিং-এর মতো পেশায় ভারতীয়দের জন্য ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ইজরারায়েলে নার্সিং পেশায় বেতন অত্যনত আকর্ষণীয়। এছাড়া, আরও অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়, যা অন্যান্য দেশে মেলে না। তাই বহু ভারতীয় সেখানে যেতে পছন্দ করেন।
ইজরায়েলে বয়স্কদের দেখাশোনার কাজে মাসে মাসে ন্যূনতম ১.২৫ লক্ষ বেতন পাওয়া যায়। এছাড়া, থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার কোনও খরচ নেই, বিনামূল্যে পাওয়া যায়। ওভারটাইম কাজের জন্য অতিরিক্ত টাকাও দেওয়া হয়। আর, শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত, সরকারি নিয়ম মেনে ছুটিও পাওয়া যায়। এই জন্য অনেক ভারতীয়ই ইজরায়েলে এই পেশা বেছে নেন।
সাধারণত, চার বছর তিন মাসের জন্য কেয়ারগিভার ভিসা দেওয়া হয়। এর পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। ইজরায়েল থেকে চলে আসার সময়, মোট কর্মকালের উপর নির্ভর করে এককালীন অর্থও পাওয়া যায়। বয়স্কদের দেখাশোন যারা করেন, তাঁরা বেশিরভাগই কোনও নার্সিং হোমের সঙ্গে যুক্ত। তবে, গ্রাহকদের বাড়িতে পরিষেবা দিলে বাড়তি সুবিধা পওয়া যায়। গ্রাহকের মৃত্যু হলে, নতুন নিয়োগকর্তার সন্ধান করা যায়। অন্যথায়, চাকরির এক বছর পরও নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করা যায়। বছরে একবার বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটিও পাওয়া যায়।
কেয়ারগিভারের চাকরির জন্য কী যোগ্যতা লাগে? অনেক দেশে এর জন্য নার্সিং-এ স্নাতক ডিগ্রি লাগলেও, ইজরায়েলে তা লাগে না। এএনএম (ANM) অর্থাৎ, সহকারী নার্সিং – মিডওয়াইফারি বা জিএনএম (GNM) অর্থাৎ, জেনারেল নার্সিং – মিডওয়াইফারি কোর্স করলেই ইজরায়েলে বয়স্কদের দেখাশোনার কাজের জন্য আবেদন করা যায়। সেই সঙ্গে হিব্রু ভাষা শেখার জন্য এক মাসের একটি কোর্স করতে হয়। অন্যান্য অনেক দেশেই এই চাকরির জন্য প্রায়ই কঠিন ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু ইজরায়েলে এর প্রয়োজন নেই।