শুধু ট্রাম্পই নয়, চুরি থেকে চুমু – বাইডেন বিতর্কেরও পাল্লা ভারী

মহিলাদের সঙ্গে কুরুচিকর ব্যবহার থেকে শুরু করে ছেলে হান্টার (Hunter Biden), বিতর্কের শেষ নেই জো বাইডেনের (Joe Biden) জীবনে। তবু নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ও অসাধারণ বক্তব্যের জোরে আজ তিনি আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট।

শুধু ট্রাম্পই নয়, চুরি থেকে চুমু - বাইডেন বিতর্কেরও পাল্লা ভারী
অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Dec 01, 2020 | 6:18 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: মহিলাদের সঙ্গে কুরুচিকর ব্যবহার থেকে শুরু করে ছেলে হান্টার (Hunter Biden), বিতর্কের শেষ নেই জো বাইডেনের (Joe Biden) জীবনে। তবু নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ও অসাধারণ বক্তব্যের জোরে আজ তিনি আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট। বারাক ওবামার থেকেও বেশি ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউসে ঢুকেছেন জো। তবে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা তাঁর নাম ঘোষণার আগে একাধিক বার বোমা ফাটিয়েছেন আরেক ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি সেন্ডার্স (Bernie Sanders)। একাধিক অভিযোগে বিঁধেছেন বাইডেনকে। যা পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে ট্রাম্পের (Donald Trump) অস্ত্র। পরে অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে সরে এসে বাইডেনের হয়ে সওয়ালও করেন বার্নি।

গবেষণা চুরি:

সিরিউকাস ইউনিভার্সিটি ল কলেজে পড়কালীন একটি আইন জার্নাল থেকে গবেষণা চুরি করেছিলেন জো বাইডেন। কলেজে তা নিজের বলে চালান। এই অভিযোগ উঠেছিল বাইডেনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এতটাই গভীর ছিল যে বাইডেনকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করার কথাও ভেবেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বাইডেন ক্ষমা চেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাঁকে বিতাড়িত না করার অনুরোধ করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নামেন, তখন তাঁকে এই বিষয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। তখন অবশ্য তিনি বলেছিলেন, “তখন আমি বোকা ছিলাম। ভুল করে ফেলেছি। নিয়ম বুঝতে পারিনি।” একাধিক প্রচারে বাইডেন জানিয়েছিলেন, ২২ বছর আগের সেই বাইডেন আর আজকের বাইডেন এক নয়। ১৫ বছর ধরে তিনি রাজনীতি করছেন তা নেহাত কম সময় নয়। তবে এই গবেষণা চুরি আরও জোরাল হয় বক্তব্য চুরির মাধ্যমে। লোয়ার এক প্রচারে বাইডেনের বক্তব্য মিলে যায় ব্রিটিশ ল্যাবর পার্টির (Labor Party) নেইল কিনকের (Neil Kinock) বক্তব্যের সঙ্গে। অভিযোগ ওঠে, যেভাবে কিনক বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই একই অভিব্যক্তিতেই বক্তব্য রেখেছেন বাইডেন।

মহিলাদের হেনস্থার অভিযোগ:

যে বিতর্ক বাইডেনকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছিল তা হল নারীদের সঙ্গে তাঁর কুরুচিকর ব্যবহারের অভিযোগ। তিনি নাকি যখন তখন মহিলাদের চুমু খান, তাদের অস্বাভাবিক ভাবে স্পর্শ করেন এই ধরনের একাধিক অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নেভাডার (Nevada) রাজনীতিবিদ লুসি ফ্লোরস অভিযোগ করেন লাস ভেগাসে বাইডেন তাঁর কাঁধে আস্বাভাবিক স্পর্শ করেছেন।

Joe Biden

জো বাইডেন

কয়েক দিন পর জিম হিমস নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন বাইডেন তাঁকে অস্বাভাবিক ভাবে ধরে তাঁর শরীরে নাক ঘষেছেন, তবে তাতে নাকি যৌনতার ইঙ্গিত ছিল না। এক দিন পরে আরও ২ মহিলা একই ধরনের অভিযোগ করেন। কাইতিলিন কারুসো জানান, বাইডেন তাঁর উরুতে অস্বাভাবিক স্পর্শ করেছেন। অন্য দিকে ডিজে হিল জানান, বাইডেন তাঁর পিঠে অস্বাভাবিক স্পর্শ করেছেন। এখানেই শেষ নয়, তারা রিড নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন, বাইডেন তাঁর ঘাড়ে সেনেট অফিসের মধ্যেই অস্বাভাবিক স্পর্শ করেছেন। বাইডেনের নামে যৌন হেনস্থারও অভিযোগ করেন রিড। তবে সে অভিযোগ ধোপে টিকতে দেননি বাইডেন। তিনি জানান, তিনি দুঃখিত যে তাঁর স্পর্শে অনেকে এমন মনে করেছেন। তবে তাঁর স্পর্শে কখনওই কোনও অভিসন্ধি ছিল না, তাই তিনি ক্ষমাপ্রার্থী নন।

Joe Biden

জো বাইডেন

ইরাক যুদ্ধ (Irak War):

২০০২ ইরাক যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে (George Bush) সমর্থন করেছিলেন বাইডেন। কিন্তু তিনিই আবার ইরাকে ট্রাম্পের ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে। সোলেমানি (Quasem Solemsni) মৃত্যুতে তাঁর অবস্থান ভিন্ন। তাহলে কেন ইরাক যুদ্ধে জর্জ বুশকে সমর্থন করলেন বাইডেন? এ বিষয়ে বাইডেন ২০০৩ সালে বলেছিলেন, “আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে সেনা ব্যবহারের জন্য সমর্থন করেছিলাম ভবিষ্যতেও করব।”

২০০৪ সালে বলেছিলেন, “ইরাকে সেনা ব্যবহারের জন্য জর্জ বুশকে আমি সমর্থন করেছিলাম। এখনও আমি মনে করি ভোটটা তখনই ঠিক ছিল আর এখনও।” কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নেমেই বদলে গেল তাঁর বয়ান। বাইডেন জানালেন, তাঁর সমর্থনের খারাপ ব্যবহার করেছেন জর্জ বুশ। মার্কিন নির্বাচন ২০২০ যত কাছে এল বাইডেন বললেন, “এই সমর্থন ভুল ছিল। আমি তা মেনে নিচ্ছি।”

প্রসঙ্গ হান্টার:

কলেজে পড়ার সময়ই সহপাঠী নেইলিয়াকে বিয়ে করেছিলেন জো বাইডেন। জো ও নেইলিয়ার ৩ সন্তান হয়। প্রথম ছেলে বো, দ্বিতীয় ছেলে হান্টার ও তৃতীয় মেয়ে অ্যামি। পরে গাড়ি দুর্ঘটনার মারা যান অ্যামি ও নেইলিয়া। তারপর জিলকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জো বাইডেন। প্রথম পক্ষের দ্বিতীয় সন্তান হান্টার (Hunter Biden), বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে গভীর ভাবে জড়িত। একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে হান্টারই নাকি বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাধা।

ইউক্রেনের বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানিতে নাকি হান্টারের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য প্রভাব খাটিয়েছেন জো বাইডেন। এমনও অভিযোগ উঠেছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক ইমেল ফাঁস হয়। যেখানে ইউক্রেনের বুরিজমা জ্বালানি কোম্পানির কর্মকর্তা হান্টারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। ধন্যবাদের কারণ হান্টার ওই কর্মকর্তাকে তাঁর বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তখন ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর হান্টার তখন বুরিজমার বোর্ডের সদস্য। যদিও এই অভিযোগ তাঁকে কালিমালিপ্ত করার জন্য বলে উড়িয়ে দেন। বাইডেনের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সংস্থা জানায়, এরকম সাক্ষাতের বৈধ কোনও রেকর্ড নেই। কোনও প্রমাণও নেই।

Joe Biden

জো বাইডেন ও হান্টার বাইডেন

অন্য দিকে তুমুল আলোচনা হয় হান্টার যখন তাঁর দাদা বো বাইডেনের মৃত্যুর পর বিধবা বৌদি হ্যালির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। হান্টার বাইডেনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাঁর স্ত্রী ক্যাথোলিন বাইডেনের। তারপর হান্টার ও হেলি একে অপরের কাছকাছি আসেন। জো বাইডেন জানিয়েছিলেন হান্টার ও হ্যালির সম্পর্কে তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেম টেকেনি। ২০১৯ সালে মেলিসা কোহনকে বিয়ে করেন হান্টার। ব্রেন ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছিল বো বাইডেনের। তারপর হান্টার ও হ্যালির সম্পর্কের বিষয়ে জো বলেছিলেন, “আমি ও জিল খুশি যে হান্টার ও হ্যালি দুঃখের মুহুর্তেও নিজেদের মধ্যে ভালবাসা খুঁজে পেয়েছে।”

বাইডেনের চিনা যোগ:

বারবার চিনা যোগ নিয়ে বাইডেনকে বিঁধেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হান্টারকে হাতিয়ার করে বারবার বাইডেনকে বিপাকে ফেলেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে আবারও একটি ইমেল ফাঁস হয়েছিল। যেখানে হান্টার একটি মেলে লিখেছিলেন, শুধুমাত্র যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি নাকি চিনা ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা পেয়েছেন। কার সঙ্গে যোগাযোগ! এ নিয়ে কিছু জানা যায়নি।

ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চিন সফরে জো বাইডেনের সঙ্গে গিয়েছিলেন হান্টার। সেখানে হান্টার দেখা করেছিলেন চিনা ব্যাঙ্কার জনাথন লির সঙ্গে। ওই সাক্ষাৎকারের ১২ দিন পর চিনা সরকার বিএইচআর নামে একটি ফান্ডকে অনুমোদন দিয়েছিল। যার বোর্ডের সদস্য ছিলেন হান্টার ও ১০ শতাংশ মালিকানাও ছিল। এছাড়াও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, বিএইচআর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল চিনের একাধিক ব্যাঙ্কের। যদিও কোনও অভিযোগই মানতে নারাজ হান্টার। তিনি জানিয়েছিলেন, জনাথন লির সঙ্গে বসে এক কাপ কফি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি। বাইডেনের আইনজীবী জানান, জো বাইডেন যখন ২০১৭ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যান, তারপরেই ওই সংস্থায় অংশিদারিত্ব ছিল হান্টারের। তার আগে নয়।

আরও পড়ুন: বাইডেন না রবার্ট ব্রুশ! তোতলা ছেলের ‘শ্বেত প্রাসাদ’ অভিযান, ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের গল্প