সানফ্রান্সিসকো: গত দু’দিন ধরে একাধিক কারণে শিরোনামে ফেসবুক (Facebook)। সোমবার রাতেই আচমকাই স্তব্ধ হয়ে যায় ফেসবুকসহ সংস্থার অধীনে থাকা প্রায় সবকটি অ্যাপ। একদিকে যেমন সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে বিপুল টাকার ক্ষতি হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) জায়ান্ট ফেসবুকের। এরই মধ্যে আবার ফেসবুকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সামনে এনেছেন এক মহিলা। তাঁর দাবি মানুষের নিরাপত্তার কোনও দায় নেই ফেসবুকের, কী ভাবে লাভ বাড়ানো যায় সে দিকেই নাকি শুধু নজর রয়েছে সংস্থার। আর এই দুই ঘটনার সাঁড়াশি চাপে ফেসবুকের শেয়ার নেমেছে হু হু করে। এবার তাই দুই ইস্যু নিয়েই মুখ খুললেন খোদ ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg)।
গতকালের বিভ্রাট শেষে ফেসবুক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন জুকারবার্গ। কয়েক ঘন্টা ফেসবুক বন্ধ থাকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার ফের এক লম্বা-চওড়া বার্তা দিলেন ফেসবুকে। মূলত ফেসবুকের কর্মীদের উদ্দেশে সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। পরে সেটি পোস্ট করেছেন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। আর সেখানে ফ্রান্সেস হগেন নামে ওই মহিলার আনা সব অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের সুরক্ষা বিশেষত শিশুদের মানসিক সুরক্ষায় যে ফেসবুক জোর দিচ্ছে সেই দাবি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
এ দিন ফেসবুক স্টেটাসে প্রথমেই প্রযুক্তি নিয়ে সাফাই দিয়েছেন জুকারবার্গ। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেকদিন আরও উন্নততর প্রযুক্তি প্রয়োগ করার লক্ষ্য নিয়েছেন তাঁরা। এরপরই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। ওই মহিলা এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন, ফেসবুক নাকি তাদের প্রত্যেকটা পোস্টে কেমন রিঅ্যাকশন আসে তা যাচাই করে দেখে। আর তাতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষ সহজেই অ্যাংরি রিয়াকশন দিয়ে থাকে। সেই কারণে ফেসবুক জুড়ে হিংসামূলক পোস্ট ছড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন ফ্রান্সেস। জুকারবার্গের পাবি, শুধু ফেসবুক কেন, কোনও সংস্থাই তার গ্রাহকদের রাগাতে বা বিরক্ত করতে চায়না। ফেসবুকের কাছে লাভের ঊর্ধ্বে মানুষের সুরক্ষা কখনই গুরুত্ব পায় না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, শিশুদের কথা মাথায় রেখে যে তিনি নিজে কাজ করেন সে কথাও জানিয়েছেন জুকারবার্গ। মেসেঞ্জার কিডস এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, শিশুদের জন্য আমরা কী ভাবে নিরাপদ বিকল্প আনছি, এগুলো তারই উদাহরণ।
৩৭ বছর বয়সি ডেটা সায়েন্টিস্ট ফ্রান্সেস ফেসবুকে কাজ করেছেন। ফেসবুক ছাড়াও গুগল ও পিন্টারেস্টেও কাজ করেছেন তিনি। তবে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের থেকে খারাপ সংস্থা আমি আর দেখিনি। তিনি দাবি করেছেন, ‘ফেসবুক বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা নিরাপত্তার থেকে বেশি জোর দেয় লাভে।’ তিনি মনে করেন, ফেসবুক আমাদের সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে আর বিশ্ব জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে। কিছুদিন আগেই কিছু নথি ফ্রান্সেস তুলে দেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হাতে। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, ফেসবুকের অধীনস্থ সংস্থা ইনস্টাগ্রাম যে কী ভাবে অল্প বয়সি মেয়েদের ক্ষতি করছে, তা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ফেসবুক।
ফ্রান্সেস আরও জানিয়েছেন, ফেসবুকে কোন পোস্ট কত বেশি ‘রিঅ্যাকশন’ পাচ্ছে, সেটায় নজর দেয় ফেসবুক। সংস্থার রিসার্চ টিম দেখেছে, ব্যবহারকারীদের ‘অ্যাঙ্গার’ রিঅ্যাকশন পাওয়া অন্যান্য রিঅ্যাকশনের থেকে অনেক বেশি সহজ। অর্থাৎ মানুষকে রাগিয়ে তোলাটাই সবথেকে সহজ, সেটা জানে ফেসবুক। ফ্রান্সেসের দাবি, এমন রিসার্চের ফলাফল দেখেই ফেসবুক বুঝে গিয়েছে যে, যদি নিরাপদ করে তোলা হয়, তাহলে মানুষ রিঅ্যাকশন কম দেবে, বিজ্ঞাপনে কম ক্লিক হবে আর ফেসবুকের ঘরে টাকা আসবে কম।