করাচি: শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। যেখানে-সেখানে মরে পড়ে আছে মানুষ। মঙ্গলবার, এই ধরনের আরও ৫টি নতুন লাশ খুঁজে পেয়েছে ছিপা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে পাকিস্তানের এক অলাভজনক কল্যাণমূলক সংস্থা। যার ফলে, লাশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২২। ছিপার স্বেচ্ছাসেবকরা থেকে শুরু করে প্রশাসন অনেক চেষ্টা করছে। তা সত্ত্বেও, ২২টি মৃতদেহের কাউকেই এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। ঠিক কীভাবে তাদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই বিষয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানি এই শহরে।
গত কয়েকদিন ধরেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ২২টি মৃতদেহ পাওয়া গেলেও, এখনও পর্যন্ত তাদের দেহ কেউ শনাক্ত করতে আসেনি। মৃত ব্যক্তিদের কোনও আত্মীয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে কেউ নিখোঁজ ছিল বলেও রিপোর্ট নেই পুলিশের কাছে। তাহলে এরা কারা? শহর জুড়ে অ্যাম্বুলেন্সের একটি নেটওয়ার্ক চালায় ছিপা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তারাই অধিকাংশ লাশ আবিষ্কার করেছে। সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা করাচির বিভিন্ন জায়গা থেকে যে পাঁচটি লাশ পেয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে তাদের মধ্যে তিনজন মাদকাসক্ত ছিল। নিশ্চিতভাবে কিছু না বলা গেলেও, এই রহস্যময় মৃতদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত ও গৃহহীনদের বলে মনে করা হচ্ছে।’ .
নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না মৃত্যুর কারণও। অনেকে বলছেন পাক বন্দর নগরীতে এই একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ, তীব্র তাপপ্রবাহ। এই মুহূর্তে করাচি পুড়ছে তীব্র গরমে। শহরের বেশ কিছু নাগরিক তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেককেই হিটস্ট্রোকের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। রাস্তায় তাপপ্রবাহে উত্তাল পাকিস্তানে। বুধবার এক পাকিস্তানি এনজিও দাবি করেছে, করাচিতে প্রচণ্ড গরমের কারণেই গত চার দিনে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার থেকে একটানা পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে। করাচির মার্গগুলিতে মৃতদেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। এই অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেরও অনেকে এই প্রচণ্ড গরমের শিকার বলেই মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া করাচি শহর জর্জরিত আরও এক সমস্যায়। মাদকাসক্তি। করাচির এনজিও, ‘ইধি ফাউন্ডেশন’-এর এক কর্তার দাবি, অজ্ঞাতপরিচয় ২২ জনের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। মাদকের প্রভাব এবং প্রচণ্ড গরমের জোড়া ফলাই তাদের মৃত্যুর কারণ বলে দাবি করেছেন তিনি। এরইমধ্যে, প্রকাশ্যে মাদক ব্যবহারের বিরোধিতা করায়, একদল মাদকাসক্তের হাতে নির্মমভাবে মার খেয়েছেন এক প্রবীণ নাগরিক। পাকিস্তানে মাদকের সমস্যা ক্রমে বাড়ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে, ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথামফেটামিনের ব্যবহার চরমে পৌঁছেছে। ‘আইস’ মাদক খুব সহজেই মিলছে করাচিতে, এর দাম অন্যান্য মাদকের তুলনায় অনেক কম। তাই তরুণ পাকিস্তানিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।