Alzheimer’s disease: নাক খুঁটলে ক্ষতি মস্তিষ্কের, হারাতে পারে স্মৃতি; দাবি গবেষণায়
Nose picking pose Alzheimer risk: অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, নাক খোঁটার বদ অভ্যাসের সঙ্গে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের সরাসরি যোগ রয়েছে। জেনে নিন বিস্তারিত।
ব্রিসবেন: আপনার কি নাক খোঁটার বদ অভ্যাস আছে? এতে কিন্তু, আলঝাইমার্স ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, নাক খোঁটার বদ অভ্যাসের সঙ্গে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের সরাসরি যোগ রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা ‘আলঝাইমার্স ডিজিজ’। এই স্নায়বিক ব্যাধি মস্তিষ্কের গুরুতর ক্ষতি করে। যার ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং ক্রমে জ্ঞানগম্যি হারিয়ে যায়। যত দিন যাচ্ছে, ততই আলঝাইমার্স ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সত্যি বলতে, কেন আলঝাইমার্স হয়, এই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই চিকিৎসক-গবেষকদের কাছে। রহস্য রয়েই গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছে অস্ট্রেলীয় গবেষকদের এই দাবি। এই গবেষণায় অবশ্য বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। গবেষণাটি এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ইঁদুরের উপরই করা হয়েছে। তবে, এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত মূল্যবান। বিশেষ করে এই গবেষণা আলঝাইমার্স রোগকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নাক খোঁটার ফলে নাকের অভ্যন্তরীণ কলার ক্ষতি হয়। এর ফলে ক্ল্যামিডিয়া নিউমোনিয়া নামে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সহজেই মস্তিষ্কে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষকে সংক্রামিত করলে নিউমোনিয়া হতে পারে। ডিমেনশিয়ার রোগীদের অধিকাংশের মস্তিষ্কে এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। একবার এই ব্যাকটেরিয়া মানব মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে, তারা আলঝাইমার্স ডিজিজের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ব্যাকটেরিয়াগুলি ইঁদুরের ঘ্রাণজনিত স্নায়ুর মাধ্যমে নাসিকাগহ্বর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। নাক খুঁটলে নাকের এপিথেলিয়াম, অর্থাৎ, নাসিকা গহ্বরের উপর যে পাতলা টিস্যু থাকে, তার ক্ষতি হলে এই স্নায়বিক সংক্রমণ আরও গুরুতর হয়। এই সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে অ্যামিলয়েড-বিটা প্রোটিন নিঃসৃত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইঁদুরের মস্তিষ্কে এই প্রোটিন অত্যন্ত বেশি পরিমাণে জমা হয়। আলঝাইমার্স ডিজিজে আক্রান্তদের মস্তিষ্কেও এই প্রোটিন অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী জেমস সেন্ট জন বলেছেন, “এই গবেষণাতেই প্রথম দেখা গেল যে, ক্ল্যামিডিয়া নিউমোনিয়া সরাসরি নাক এবং মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে এবং আলঝাইমার্স রোগের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে। আমরা এটা ইঁদুরের দেহে ঘটতে দেখেছি এবং মানুষের ক্ষেত্রেও এটা হওয়া সম্ভব।” তবে, যে দ্রুততায় ইঁদুরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সংক্রামিত করেছে ক্ল্যামিডিয়া নিউমোনিয়া, তাতে অবাক হয়ে গিয়েছেন গবেষকরা। জানা গিয়েছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। সেন্ট জন বলেছেন, “আমাদের এই গবেষণাটি মানুষের মধ্যে করতে হবে। তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ইঁদুরের মতো মানুষের ক্ষেত্রেও একই ভাবে এবং একই পথে কাজ করে ব্যাকটেরিয়াটি। আমরা যা জানি, একই ব্যাকটেরিয়া মানুষের মস্তিষ্কেও দেখা যায়। কিন্তু, তারা কীভাবে সেখানে পৌঁছয়, তা নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি।”
বর্তমান বিশ্বে বহু প্রবীণ মানুষই আলঝাইমার্স রোগের শিকার। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া, ভাষা হারিয়ে ফেলা, মানসিক বিভ্রান্তি, মনমেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন ইত্যাদি। যত দিন যায়, ততই এই লক্ষণগুলি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। আক্রান্তরা ক্রমে স্নান-খাওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজকর্ম করতেও অসুবিধায় পড়েন। এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোনও প্রতিরোধ বা প্রতিকার নেই। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া, সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধির মতো জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে উপসর্গগুলির মোতকাবিলা এবং রোগের অগ্রগতি মন্থর করা ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও চিকিৎসা নেই।