ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঝুলছে ইমরানের ভাগ্য, ভেঙে পড়তে পারে পাকিস্তানের অর্থনীতি
'আলজাজিরা' এর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলেছে উগ্র মুসলমানরা তাঁকে মুসলমানদের সর্বাধিক জনপ্রিয় মুখ হিসাবে বিবেচনা করেন।
জ্যোতির্ময় রায়: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদে পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ হয়েছে। এই প্রস্তাবে সাফ জানানো হয়েছে, পাকিস্তানে মৌলবাদীদের আধিপত্য, সেখানে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে নিন্দামূলক আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই পাকিস্তানকে দেওয়া বিশেষ ব্যবসায়িক অধিকার (জিএসপি স্ট্যাটাস) অবিলম্বে কার্যকরভাবে বাতিল করা হবে।
এই প্রস্তাবটির পক্ষে ৬৮১ এবং বিপক্ষে মাত্র ৬ টি ভোট পড়ে। প্রস্তাবটিতে এ-ও বলা হয় যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর জনগণের অধিকার রক্ষা না করে ইহুদি গণহত্যার (হলোকাস্ট) কথা উল্লেখ করে মানুষকে আরও উস্কানি দিচ্ছেন। এই প্রস্তাবের অন্যতম কারণ, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) এর সহিংস বিক্ষোভ। এই সংস্থাটি ইমরান সরকারের কাছে পাকিস্তান থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার দাবি জানায়। এই বিক্ষোভ হিংসায় পুলিশ, রেঞ্জার ও সাধারণ মানুষ সহ মোট ২২ জন মারা যান। ইমরান সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের চাপে এই উগ্র সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করলেও পরের দিনই তাদের সঙ্গে আবার কথা বলা শুরু করে। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে দেশ থেকে অপসারণের প্রস্তাব সংসদে পর্যন্ত যায়।
ইমরান খান নিজেকে মুসলিম দেশগুলির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে প্রজেক্ট করছেন। ‘আলজাজিরা’ এর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলেছে উগ্র মুসলমানরা তাঁকে মুসলমানদের সর্বাধিক জনপ্রিয় মুখ হিসাবে বিবেচনা করেন। ইমরান ফ্রান্সে নবীর অপমানের মামলার বিষয়টি তুলে ধরেন, যা এখন তাঁর সরকারের পক্ষে খুব গম্ভীর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা ফ্রান্সের সঙ্গে একমত। জিও নিউজের ব্রাসেলস ব্যুরো চিফ খালিদ হামেদ ফারুকী বলেছেন, “এই প্রস্তাবটির মাধ্যমে পাকিস্তান বিশেষ মর্যাদা হারাবে। এর পরিণতি পাকিস্তানের জন্য কতটা গুরুতর হবে সে সম্পর্কে এখন কেউ অনুমান পর্যন্ত করতে পারছেন না।”
বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ইউরোপীয় সংসদ কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রস্তাবটিকে পাস করবে। এর আগে অবশ্য পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। তারপরে প্রস্তাবটি নিয়ে বিতর্ক হবে এবং সর্বশেষে ভোট নেওয়া হবে। এখন যেহেতু প্রস্তাবের পক্ষে ৬৮১ টি ভোট রয়েছে এবং এর বিপরীতে মাত্র ৬ টি ভোট রয়েছে, সেখান থেকে ধরে নেওয়া যায় যে পাকিস্তানকে এই মর্যাদা হারাতে হতে পারে। যদি এটি হয়, তবে পাকিস্তানের কিছু রফতানি (বেশিরভাগ ইউরোপ) বন্ধ হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, পাকিস্তান ইতিমধ্যে এফএটিএফের ধূসর তালিকায় রয়েছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিদিন বিক্ষোভ চলছে। দেশে করোনার কোনও টিকা নেই এবং করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল একটি অলৌকিক ঘটনাই এই জলাবদ্ধতা থেকে পাকিস্তানকে সরাতে সক্ষম হবে।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন: করোনা রুখতে ভারতকে সম্পূর্ণ লকডাউনের পরামর্শ মার্কিন স্বাস্থ্যকর্তার