ইসলামাবাদ: বর্ষায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির জেরে ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে পাকিস্তান। সোমবার (২৯ অগস্ট) সেই দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকাই এখন জলের নীচে। ফলে এক “অকল্পনীয় সংকট” তৈরি হয়েছে। বন্যার প্রকোপ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে মৃত্যু। রবিবারই বৃষ্টি ও বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সোমবার তা দাঁড়িয়েছে ১,০৬১-এ। পাকিস্তানের বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে এর পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১,৩৪৩ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেছেন, “এটা একটা বিশাল সমুদ্রের মতো, জল বের করার জন্য কোনও শুষ্ক জমিই নেই। দেশের এক তৃতীয়াংশই এখন জলের নীচে। এক অকল্পনীয় অনুপাতের সংকট তৈরি হয়েছে।” পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বেলুচিস্তান প্রদেশের জন্য ১০০০ কোটি পাকিস্তানি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে জাতীয় ত্রাণ তহবিল এবং বেনজির আয় সহায়তা প্রকল্প থেকে ২৫০০০ পাকিস্তানি টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি অনুদান হিসেবে আরও ৩৮০০ কোটি পাকিস্তানি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বন্যার এই ভয়াল রূপে তিনি “আতঙ্কিত” বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। শেহবাজ শরিফ বলেছেন, “খাইবার পাখতুনখোয়ায়, মুষলধারে বৃষ্টির ফলে সোয়াত এবং কালামে নদী এবং খালগুলি ফুসে উঠেছে, চোখের পলকে হোটেল এবং বাড়িঘর ভেসে গিয়েছে। বন্যা এবং অবিরাম বর্ষণে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্ট হয়েছে, তা ভয়াবহ।” সোমবার (২৯ অগস্ট) হেলিকপ্টারে করে, সিন্ধ ও বেলুচিস্তান প্রদেশের বন্যা কবলিত এলাকাগুলির পরিদর্শন করেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে আকাশপথে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রমেও অংশ নেন।
সেনাদের প্রস্তুতির খোঁজ খবর নিতে, এদিন বন্যা কবলিত প্রদেশগুলি পরিদর্শন করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়াও। সিন্ধের খায়রপুর এবং কাম্বার-শাহদাদকোট এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গেও দেখা করেন। সোয়াত, দির আপার, কোহিস্তানের মতো বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বন্যায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
তবে, এখনও পর্যন্ত বন্যাক জল নামার তো কোনও সম্ভাবনা দেখাই যাচ্ছে না, বরং সিন্ধ এবং কাবুল নদীতে জল ক্রমে বাড়ছে। ১,০৬১ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বন্যায় ইতিমধ্যেই ব্যাপক পরিমাণে সম্পত্তির ক্ষতিও হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, অন্তত ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ঘর-বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। আরও ২ লক্ষ ১৮ হাজার বাড়ি বন্যার জলে পুরো ভেসে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ লক্ষ ৯৪ হাজারেরও বেশি পশু-সম্পদের। সেই সঙ্গে ২০ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।