ইসলামাবাদ: আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসের বাসা একাধিকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নয়া দিল্লি। রাষ্ট্রপুঞ্জেও ইসলামাবাদকে চাঁচাছোলা ভাষায় বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই কাশ্মীর নিয়ে মাথাব্যথা কোনওভাবেই কমছে না পাকিস্তানের। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল, সেই ছবি সবারই জানা, তার মধ্যে ভোটও আসন্ন। তবু সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিল, সেদিকে নজর রেখেছিল ইসলামাবাদ।
২০১৯-এর ৫ অগস্ট কাশ্মীরের ‘স্পেশাল স্টেটাস’ বা ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত চার বছরে সেই নিয়ে দেশের অন্দরেও বিতর্ক হয়েছে। তবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কার্যত ক্লিনচিট পেয়েছে কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত। শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, এই ৩৭০ অনুচ্ছেদ লাগু করা একটা সাময়িক ব্যবস্থা হতে পারে। তাই সেটা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক বলেই মনে করেছে শীর্ষ আদালত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন, তখন আওয়াজ তোলার কথা বলছে পাকিস্তান। ভারতের সুপ্রিম-রায় নিয়ে ঘোর আপত্তি তাদের।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শেহবাজের দাবি, এই রায়ে নাকি কাশ্মীর আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে!
সুপ্রিম রায় চিন্তায় ফেলেছে পাকিস্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানিকেও। তিনি বলেছেন, “২০১৯-এর ৫ অগস্ট ভারত যে পদক্ষেপ করেছে, তাকে মান্যতা দেয় না কোনও আন্তর্জাতিক আইন।” তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের নাকি কোনও মূল্যই নেই। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে রায় দেওয়ার পর পাকিস্তান দাবি করেছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারে না, কারণ এই ভূখণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিল তাতে পাকিস্তানের কীই বা করার আছে? কিন্তু পাক বিদেশমন্ত্রী বলছেন, এরপর পাকিস্তান কী করবে, তা নিয়ে নাকি রীতিমতো বৈঠক বসবে সে দেশে। বারবার আন্তর্জাতিক চুক্তি আর আন্তর্জাতিক আইনের কথা বলছে তারা। একই কথা বলেছেন, পাকিস্তানের পিপিপি দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। তাঁর মতে, ভারত এভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তি ভাঙতে পারে না।
যেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। সেখানে পাকিস্তানের এই ধরনের বক্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তাদের বক্তব্য, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে না ভেবে পাকিস্তানের উচিত নিজের দেশে সন্ত্রাস দমনে ব্যবস্থা নেওয়া।