বেজিং: এক, দুই, তিন… ধারাপাতের নিয়মে যেন জন্মের জরিপ! রাষ্ট্র যদি এক বলে, নাগরিকের সাধ্যি নেই দুই নিয়ে ভাবার। রাষ্ট্র যদি তিন বলে, এক বা দুই চাইলেও নাগরিকের সেই স্বাধীনতা থাকে না। জন্মনিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের এ হেন আচরণে নাগরিকের উর্ধ্বে নারী জাতি আসলে সন্তান প্রসবের যন্ত্র হয়ে ওঠে। চিনের (China) নয়া তিন সন্তান নীতিই আরও একবার সেই বিতর্কই উস্কে দিল। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ করে যে মা সন্তানের প্রথম স্পর্শটুকু পেতে চায়, তাঁর কাছ থেকে যদি রাষ্ট্র সন্তান কেড়ে নেয়। কিংবা যদি জোরপূর্বক প্রত্যেক দম্পতিকে ৩ সন্তানের বাবা-মা হতে বলে, তাহলে রাষ্ট্রের সে সব নীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে যায়। ১৯৭৮ সালে এক সন্তান নীতি নেয় চিন। যা কার্যকর হয় ১৯৮০-তে। সেই নিয়ম বদলে ২০১৬ সালে দুই সন্তান নীতি আর ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতিতে হাঁটল চিন। এক সন্তান নীতি কার্যকরী করতে রাষ্ট্রের হাতে যা যা শক্তি থাকে, তার যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিল চিন। অত্যাচার, শোষন, স্বৈরতন্ত্রর যোগফল চিনের এক সন্তান নীতি। রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কত দূর যেতে পারে, তার স্পষ্ট উদাহরণ চিনের এক সন্তান নীতি কায়েমের পদ্ধতি। তাই আশঙ্কা থাকছে, মানবসম্পদ বাড়াতে গিয়ে সেই একই পথে হাঁটবে না তো শি জিনপিংয়ের সরকার!
এক সন্তান নীতি: চিনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মাও জ়ে দংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। মাও দেখেন, দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধি। মাঠে-কারখানায় প্রচুর উৎপাদন চাই। তার জন্য চাই শ্রমিক। কারণ ১৯৫০-৬০ এর চিন যন্ত্রনির্ভর ছিল না। তাই সন্তান নীতিতে উদার ছিল মাও জ়ে দংয়ের প্রশাসন। এরপর ক্ষমতায় আসেন ডেং জিয়াপং। ১৯৭৮ সালে চিনের প্রশাসন বুঝে যায়, আগামী বছরে জনবিস্ফোরণ হতে চলেছে। তা রুখতে প্রয়োজন সন্তান নীতি। তখন থেকেই তৈরি হতে থাকে এক সন্তান নীতির খসড়া। ১৯৮০ সালে ফ্যামিলি প্ল্যানিং কমিশনের আদলে কার্যকরী হয় চিনের এক সন্তান নীতি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ এত সহজ ছিল না। কার্যত গায়ের জোরে এই নীতি কায়েম করে চিন।
এক সন্তান নীতি প্রয়োগে কী কী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার?
দুই সন্তান হলে চাকরির সুবিধা পাবে না। শাসক শিবির যদি টের পায় দ্বিতীয় সন্তান হতে চলেছে, তাহলে বাড়িতে চড়াও হয়ে জোর করে গর্ভপাত করানো হত। সামাজিক বয়কট, রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চনা, উদাহরণের পর উদাহরণ। কার্যত তুঘলকি কায়দায় জনবিস্ফোরণ রুখেছিল চিন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের এই নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল তাড়া করেছে চিনা নাগরিকদের।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনও ব্যক্তির বাড়িতে যদি দুই সন্তান হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি চাকরি হারাতেন। পরের দিকে কিছুটা শিথিল হয়েছিল এই নীতির। আসে আর্থিক জরিমানা। দ্বিতীয় সন্তান হলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হত পরিবারকে। জরিমানা না দিলে দ্বিতীয় সন্তানের কোনও সরকারি প্রমাণ পত্রই অনুমোদন করত না চিনের প্রশাসন। অর্থাৎ সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হত দ্বিতীয় সন্তান।
প্রভাব: চিনের এই নীতির বিস্তর প্রভাব পড়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিজ্ঞাপনের নিয়ম বলে, একটা কথা বারবার শোনালে, সেটা নিয়মে পরিণত করে ফেলে মস্তিষ্ক। তেমনই চিনাদের মনে এই নীতি গেঁথে দিতে পেরেছিল সরকার। একটা সময়, এক সন্তান নীতিই হয়ে যায় প্রথা। চিনের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। নাগরিকদের ধারণা, ছেলেই বৃদ্ধ বয়সে দেখবে। মেয়ে তো পরের বাড়ি যাবে। তাই এক সন্তান নীতিতে মেয়ে হলে, রাষ্ট্রশক্তির আড়ালে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলতেন চিনা নাগরিকরা। হারিয়ে যেত অনেক চিনা মেয়ে, তখন একটি ছেলে নেওয়ার চেষ্টা করতেন তারা। এই হারিয়ে যাওয়া মেয়েরা চিনে ‘লস্ট গার্লস’ নামে পরিচিত। বিদেশি সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদনে অনেক সময় দাবি করে এই মেয়েরা দেহ ব্যবসায়ও ব্যবহৃত হত। ফলে চিনে এক সন্তান নীতিতে জন্মহার কমে, দেশের সার্বিক বয়স বৃদ্ধি পায় এবং নারী-পুরুষের অনুপাত নষ্ট হয়ে যায়। মহা বিপদে পড়ে চিন। তখন ২০১৬ সালে ২ সন্তান নীতি নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। খাতায় কলমে এলেও সেই নীতির বাস্তবিক প্রয়োগ হয়নি। জনগণ মেনে নেয়নি। তাই ২০২১ সালে ৩ সন্তান নীতি এনেছে অর্থনীতিতে ঠিক আমেরিকার পিছনে থাকা চিন।
অর্থনীতিতে প্রথম হতে মরিয়া জিনপিং। তাই মানব সম্পদ হারাতে চান না তিনি। এখন ৩ সন্তান নীতি এনে দেশের সার্বিক বয়স ও জন্মহার ঠিক করতে চাইছেন সিপিসি প্রেসিডেন্ট। জনগণ বিরোধিতা করছে। প্রশ্ন উঠছে পরিবার পিছু ৩ সন্তান হলে দায়িত্ব কি সরকার নেবে? পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষজ্ঞদের মত, চিন ৩ সন্তান নীতি কায়েম করার জন্য যা যা করণীয় সব করবে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময়ে এক সন্তান নীতি থাকায়, একের বেশি সন্তান নেওয়ায় অনীহা তৈরি হয়েছে অধিকাংশ মহিলাদের মধ্যে। একাধিক সন্তান পালনে অর্থনৈতিক সমস্যা প্রধান অন্তরায় বলেও মনে করেন মহিলারা। ৩ সন্তান চাপিয়ে দিলে, প্রশ্ন ওঠে রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য মহিলারা স্রেফ কি সন্তান প্রসবের যন্ত্র? তাঁদের শারীরিক ঝুঁকি কি রাষ্ট্রের পর্যালোচনার বিষয় নয়?
এ বিষয়ে চিকিৎসক মহল কী বলছে?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু জানান, যদি নর্ম্যাল ডেলিভারি হয়। তাহলে ৩ সন্তানেও কোনও সমস্যা হবে না। যদি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হয়, তাহলে তৃতীয় অস্ত্রোপচারের সময় কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে হবেই যে এ কথা বলা যায় না। আজ থেকে বছর ২০ আগে পরিবার পিছু ৩ সন্তান দেখা যেত এই ভারতের। তাই তাঁর মতে, এখন নীতি তৈরি করে গর্ভপাত করানো যেতে পারে। কিন্তু জোর করে কাউকে গর্ভধারণের কথা বলা যায় না। চিনের এই নীতিও জোরপূর্বক আরোপ করা সম্ভব নয় বলেই মত তাঁর।
প্রশ্নের মুখে মানবধিকার
মানবধিকার কর্মী শাশ্বতী ঘোষের মতে, “এটা কিন্তু নতুন কোনও ব্যাপার নয়। নাৎসি জার্মানি থেকে বামপন্থী রুমানিয়া, গর্ভধারণে মেয়েদের শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পর্তুগাল, ইতালিতে গর্ভপাত সম্পূর্ণ ভাবে আইনবিরুদ্ধ। বিষয়টা দুটো স্তরে দেখতে হবে। ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক স্তরে। ক্যাথলিক দেশ ছাড়াও বহু সমাজবাদী দেশেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ। শ্রমিকের জোগান রাখতে এই নির্দেশ দেওয়া হয় ওই দেশগুলিতে। চিন মানুষের অধিকারকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নীচে ঠাঁই দেয়। আরও শ্রমশক্তি প্রয়োজনে মেয়েরাই অস্ত্র। তাই চিন গর্ভপাত পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। বে-আইনি পথেও মুশকিল করে দেবে। ইতিমধ্যেই চিনা নাগরিকরা এ বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে। সেখানে সন্তান পালনের খরচা অনেক বেশি। তবে স্বেচ্ছার কোনও গুরুত্ব নেই। চিন যদি এটা কায়েম করার চেষ্টা করে যেনতেন প্রকারেণ করবে।”
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: সরষের ভেতরেই ভূত! ১ বছরে রান্নার তেলের দাম বাড়ল ৬৩ টাকা, কীভাবে?
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ভেনেজুয়েলায় ১ টাকায় পেট্রল, ভারতে ১০২! নেপথ্যে কার কারসাজি?
বেজিং: এক, দুই, তিন… ধারাপাতের নিয়মে যেন জন্মের জরিপ! রাষ্ট্র যদি এক বলে, নাগরিকের সাধ্যি নেই দুই নিয়ে ভাবার। রাষ্ট্র যদি তিন বলে, এক বা দুই চাইলেও নাগরিকের সেই স্বাধীনতা থাকে না। জন্মনিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের এ হেন আচরণে নাগরিকের উর্ধ্বে নারী জাতি আসলে সন্তান প্রসবের যন্ত্র হয়ে ওঠে। চিনের (China) নয়া তিন সন্তান নীতিই আরও একবার সেই বিতর্কই উস্কে দিল। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ করে যে মা সন্তানের প্রথম স্পর্শটুকু পেতে চায়, তাঁর কাছ থেকে যদি রাষ্ট্র সন্তান কেড়ে নেয়। কিংবা যদি জোরপূর্বক প্রত্যেক দম্পতিকে ৩ সন্তানের বাবা-মা হতে বলে, তাহলে রাষ্ট্রের সে সব নীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে যায়। ১৯৭৮ সালে এক সন্তান নীতি নেয় চিন। যা কার্যকর হয় ১৯৮০-তে। সেই নিয়ম বদলে ২০১৬ সালে দুই সন্তান নীতি আর ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতিতে হাঁটল চিন। এক সন্তান নীতি কার্যকরী করতে রাষ্ট্রের হাতে যা যা শক্তি থাকে, তার যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিল চিন। অত্যাচার, শোষন, স্বৈরতন্ত্রর যোগফল চিনের এক সন্তান নীতি। রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কত দূর যেতে পারে, তার স্পষ্ট উদাহরণ চিনের এক সন্তান নীতি কায়েমের পদ্ধতি। তাই আশঙ্কা থাকছে, মানবসম্পদ বাড়াতে গিয়ে সেই একই পথে হাঁটবে না তো শি জিনপিংয়ের সরকার!
এক সন্তান নীতি: চিনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মাও জ়ে দংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। মাও দেখেন, দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধি। মাঠে-কারখানায় প্রচুর উৎপাদন চাই। তার জন্য চাই শ্রমিক। কারণ ১৯৫০-৬০ এর চিন যন্ত্রনির্ভর ছিল না। তাই সন্তান নীতিতে উদার ছিল মাও জ়ে দংয়ের প্রশাসন। এরপর ক্ষমতায় আসেন ডেং জিয়াপং। ১৯৭৮ সালে চিনের প্রশাসন বুঝে যায়, আগামী বছরে জনবিস্ফোরণ হতে চলেছে। তা রুখতে প্রয়োজন সন্তান নীতি। তখন থেকেই তৈরি হতে থাকে এক সন্তান নীতির খসড়া। ১৯৮০ সালে ফ্যামিলি প্ল্যানিং কমিশনের আদলে কার্যকরী হয় চিনের এক সন্তান নীতি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ এত সহজ ছিল না। কার্যত গায়ের জোরে এই নীতি কায়েম করে চিন।
এক সন্তান নীতি প্রয়োগে কী কী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার?
দুই সন্তান হলে চাকরির সুবিধা পাবে না। শাসক শিবির যদি টের পায় দ্বিতীয় সন্তান হতে চলেছে, তাহলে বাড়িতে চড়াও হয়ে জোর করে গর্ভপাত করানো হত। সামাজিক বয়কট, রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চনা, উদাহরণের পর উদাহরণ। কার্যত তুঘলকি কায়দায় জনবিস্ফোরণ রুখেছিল চিন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের এই নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল তাড়া করেছে চিনা নাগরিকদের।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনও ব্যক্তির বাড়িতে যদি দুই সন্তান হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি চাকরি হারাতেন। পরের দিকে কিছুটা শিথিল হয়েছিল এই নীতির। আসে আর্থিক জরিমানা। দ্বিতীয় সন্তান হলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হত পরিবারকে। জরিমানা না দিলে দ্বিতীয় সন্তানের কোনও সরকারি প্রমাণ পত্রই অনুমোদন করত না চিনের প্রশাসন। অর্থাৎ সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হত দ্বিতীয় সন্তান।
প্রভাব: চিনের এই নীতির বিস্তর প্রভাব পড়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিজ্ঞাপনের নিয়ম বলে, একটা কথা বারবার শোনালে, সেটা নিয়মে পরিণত করে ফেলে মস্তিষ্ক। তেমনই চিনাদের মনে এই নীতি গেঁথে দিতে পেরেছিল সরকার। একটা সময়, এক সন্তান নীতিই হয়ে যায় প্রথা। চিনের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। নাগরিকদের ধারণা, ছেলেই বৃদ্ধ বয়সে দেখবে। মেয়ে তো পরের বাড়ি যাবে। তাই এক সন্তান নীতিতে মেয়ে হলে, রাষ্ট্রশক্তির আড়ালে তাকে দূরে সরিয়ে ফেলতেন চিনা নাগরিকরা। হারিয়ে যেত অনেক চিনা মেয়ে, তখন একটি ছেলে নেওয়ার চেষ্টা করতেন তারা। এই হারিয়ে যাওয়া মেয়েরা চিনে ‘লস্ট গার্লস’ নামে পরিচিত। বিদেশি সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদনে অনেক সময় দাবি করে এই মেয়েরা দেহ ব্যবসায়ও ব্যবহৃত হত। ফলে চিনে এক সন্তান নীতিতে জন্মহার কমে, দেশের সার্বিক বয়স বৃদ্ধি পায় এবং নারী-পুরুষের অনুপাত নষ্ট হয়ে যায়। মহা বিপদে পড়ে চিন। তখন ২০১৬ সালে ২ সন্তান নীতি নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। খাতায় কলমে এলেও সেই নীতির বাস্তবিক প্রয়োগ হয়নি। জনগণ মেনে নেয়নি। তাই ২০২১ সালে ৩ সন্তান নীতি এনেছে অর্থনীতিতে ঠিক আমেরিকার পিছনে থাকা চিন।
অর্থনীতিতে প্রথম হতে মরিয়া জিনপিং। তাই মানব সম্পদ হারাতে চান না তিনি। এখন ৩ সন্তান নীতি এনে দেশের সার্বিক বয়স ও জন্মহার ঠিক করতে চাইছেন সিপিসি প্রেসিডেন্ট। জনগণ বিরোধিতা করছে। প্রশ্ন উঠছে পরিবার পিছু ৩ সন্তান হলে দায়িত্ব কি সরকার নেবে? পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষজ্ঞদের মত, চিন ৩ সন্তান নীতি কায়েম করার জন্য যা যা করণীয় সব করবে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময়ে এক সন্তান নীতি থাকায়, একের বেশি সন্তান নেওয়ায় অনীহা তৈরি হয়েছে অধিকাংশ মহিলাদের মধ্যে। একাধিক সন্তান পালনে অর্থনৈতিক সমস্যা প্রধান অন্তরায় বলেও মনে করেন মহিলারা। ৩ সন্তান চাপিয়ে দিলে, প্রশ্ন ওঠে রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য মহিলারা স্রেফ কি সন্তান প্রসবের যন্ত্র? তাঁদের শারীরিক ঝুঁকি কি রাষ্ট্রের পর্যালোচনার বিষয় নয়?
এ বিষয়ে চিকিৎসক মহল কী বলছে?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু জানান, যদি নর্ম্যাল ডেলিভারি হয়। তাহলে ৩ সন্তানেও কোনও সমস্যা হবে না। যদি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হয়, তাহলে তৃতীয় অস্ত্রোপচারের সময় কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে হবেই যে এ কথা বলা যায় না। আজ থেকে বছর ২০ আগে পরিবার পিছু ৩ সন্তান দেখা যেত এই ভারতের। তাই তাঁর মতে, এখন নীতি তৈরি করে গর্ভপাত করানো যেতে পারে। কিন্তু জোর করে কাউকে গর্ভধারণের কথা বলা যায় না। চিনের এই নীতিও জোরপূর্বক আরোপ করা সম্ভব নয় বলেই মত তাঁর।
প্রশ্নের মুখে মানবধিকার
মানবধিকার কর্মী শাশ্বতী ঘোষের মতে, “এটা কিন্তু নতুন কোনও ব্যাপার নয়। নাৎসি জার্মানি থেকে বামপন্থী রুমানিয়া, গর্ভধারণে মেয়েদের শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পর্তুগাল, ইতালিতে গর্ভপাত সম্পূর্ণ ভাবে আইনবিরুদ্ধ। বিষয়টা দুটো স্তরে দেখতে হবে। ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক স্তরে। ক্যাথলিক দেশ ছাড়াও বহু সমাজবাদী দেশেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ। শ্রমিকের জোগান রাখতে এই নির্দেশ দেওয়া হয় ওই দেশগুলিতে। চিন মানুষের অধিকারকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নীচে ঠাঁই দেয়। আরও শ্রমশক্তি প্রয়োজনে মেয়েরাই অস্ত্র। তাই চিন গর্ভপাত পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। বে-আইনি পথেও মুশকিল করে দেবে। ইতিমধ্যেই চিনা নাগরিকরা এ বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে। সেখানে সন্তান পালনের খরচা অনেক বেশি। তবে স্বেচ্ছার কোনও গুরুত্ব নেই। চিন যদি এটা কায়েম করার চেষ্টা করে যেনতেন প্রকারেণ করবে।”
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: সরষের ভেতরেই ভূত! ১ বছরে রান্নার তেলের দাম বাড়ল ৬৩ টাকা, কীভাবে?
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ভেনেজুয়েলায় ১ টাকায় পেট্রল, ভারতে ১০২! নেপথ্যে কার কারসাজি?