ওয়াশিংটন: বছর শেষেই খোঁজ মিলেছিল করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের (Omicron)। এক মাসের মধ্যেই বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই সংক্রমণ। বিশ্বজুড়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, একাধিক দেশে হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করবে না এই সংক্রমণ। বিশ্বজুড়ে একাধিক গবেষণায় এই ফলাফলই জানা গিয়েছে।
কমপক্ষে ৫০ বার অভিযোজিত (Mutation) হওয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশ তথা বিশ্বজুড়েই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকা, ফ্রান্স সহ একাধিক দেশে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমিত হচ্ছে কমবয়সীরাও। বিশেষত শিশুদের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত শিশুদের করোনা টিকাকরণের (Vaccination of Children) উপর জোর দিয়েছেন।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মিলেছিল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের। একাধিকবার অভিযোজিত হলেও ওমিক্রন গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করবে না বলেই দাবি গবেষক-বিশেষজ্ঞদের। বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ডজনখানেক গবেষণা করা হয়েছে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে। এরমধ্যে কমপক্ষে ৬টি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনার বাকি ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে মৃদু বা মাঝারি সংক্রমণই দেখা যায়।
আমেরিকান অকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (American Academy of Pediatrics)-র গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহেই প্রায় ১ লক্ষ ৯৯ হাজার শিশুর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে, যা গত মাসের পরিসংখ্যানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশী। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম বলে জানা গিয়েছে। সংক্রমণের শুরু থেকে এখনও অবধি আমেরিকায় ৮ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৮০৩।
হংকংয়েও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি গবেষণায় ওমিক্রন আক্রান্তের কোষ বা টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ফুসফুসের প্রবেশ পথ ব্রঙ্কিতে প্রায় ৭০ গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন। এরফলেই মানবদেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভ্যারিয়েন্ট।
হংকংয়ের ওই গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, দ্রুত ফুসফুসে পৌছলেও, ডেল্টার তুলনায় কমপক্ষে ১০ গুণ ধীরগতিতে ফুসফুসের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন। সেই কারণেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করছে না।
ব্রিটেনে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাকি দেশের তুলনায় অনেক বেশি হলেও, সেখানে আক্রান্তদের মধ্যে সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করেনি, মৃত্যুর হারও ডেল্টার তুলনায় অনেকটাই কম। ব্রিটেনের গবেষকদেরও দাবি, অতি সংক্রামক হলেও ডেল্টার তুলনায় কম ভয়ানক ওমিক্রন। সে দেশের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনা ভ্যাকসিনগুলিও নয়া ভ্য়ারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা দিতে কার্যকর।