কলম্বো: টাকা-পয়সা আর নেই। কোনওভাবেই সম্ভব নয় ঋণ পরিশোধ (Debt)। চরম আর্থিক সঙ্কটের মাঝেই আজ শ্রীলঙ্কা (Seri Lanka) নিজেকে ঋণখেলাপী (Defaulty) বলে ঘোষণা করল। সে দেশের তরফে জানানো হয়েছে, বিদেশি যে ঋণগুলি তারা নিয়েছেন, তা এই মুহূর্তে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। সম্প্রতিই সরকারের তরফে একটি বিশেষ প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করার জন্য।
এদিন সকালেই শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, “আইএমএফের সহায়তায় অর্থনৈতিক সমন্বয় পোগ্রামের বিচার বিশ্লেষণের পর শ্রীলঙ্কা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য সব ধরনের ঋণের পরিশোধ করার কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”। চিঠিতে জানানো হয়, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। সরকারের তরফে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করা হলেও, এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়।
মার্চ মাসের শেষভাগ থেকেই চরম আর্থিক সঙ্কট দেখা যায় শ্রীলঙ্কায়। করোনাকালে পর্যটন শিল্প থমকে দাঁড়ানোয় বিগত দুই বছরে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। একইসঙ্গে বিদেশী ঋণ নিয়ে একাধিক প্রকল্প ঘোষণার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি। আর্থিক সঙ্কটের জেরে ফুরিয়ে গিয়েছে জ্বালানি তেলের ভাণ্ডার। অগ্নিমূল্য শাকসবজি থেকে বাকি খাদ্যপণ্যের।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের একটি বড় অংশই চিন থেকে নেওয়া। তবে সঙ্কটের মুহূর্তে পাশে থাকা তো দূরস্ত, বরং টাকা ফেরত দিতে চাপাচাপি শুরু করেছে চিন। প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার অর্থাত্ ২৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার কাছাকাছি ফেরত দিতে বলা হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। এই টাকা পরিশোধের জন্য মাত্র ২ বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে চিন। এরমধ্যে চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নেওয়া প্রায় ৫২,৪০০ কোটির ঋণ পরিশোধ করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
কিন্তু টাকা কোথা থেকে দেবে শ্রীলঙ্কা? তাদের হাত বাঁধা। বিদেশি মুদ্রার কোষাগার প্রায় খালি! কোষাগারে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ মেরেকেটে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা হবে। পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক ঋণ এবং সুদের অঙ্ক পরিশোধ করতে পারবে না শ্রীলঙ্কা সরকার। অন্যদিকে, বিদেশি ঋণ পাওয়ার পথও নেই শ্রীলঙ্কার কাছে।