কলম্বো: রাতারাতি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সপরিবারে মলদ্বীপে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। এদিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেননি তিনি। তাঁর অবর্তমানে স্পিকার বা অন্য কারোর হাতে প্রেসিডেন্ট পদ সামলানোর দায়িত্বভারও দিয়ে যাননি। প্রেসিডেন্টের এই হঠকারি সিদ্ধান্তের জেরেই বিপাকে পড়েছে গোটা দেশ। যতক্ষণ না তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন বা অন্য কাউকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার দিচ্ছেন, ততক্ষণ অবধি প্রশাসকহীন থাকবে শ্রীলঙ্কা, কারণ গত সপ্তাহেই ইস্তফা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘেও। দেশের সেনাবাহিনীর হাতেও শাসন ক্ষমতা তুলে দেওয়া হতে পারে। উল্লেখ্য, আজ বুধবারই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ছিল গোতাবায়া রাজাপক্ষের।
এ দিন সকালেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানানো হয়, দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। কিছুক্ষণ পরই এই খবর নিশ্চিত করা হয় স্পিকারের অফিসের তরফেও। প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দেশ ছাড়ার আগে কাউকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়ে যাননি গোতাবায়া রাজাপক্ষে। আজ, বুধবার তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনও অবধি ইস্তফাও দেননি। মলদ্বীপে তিনি কতদিন থাকবেন বা আদৌই ফিরবেন কি না, সে সম্পর্কেও কিছু জানা নেই। এরফলে কার্যত অভিভাবক-হীন হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ৩৭(২) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পিকারের সঙ্গে কথা বলে ও সহমতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এবং কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও একটি বাধা রয়েছে। গত সপ্তাহেই দেশবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। ফলে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার কোনও প্রধানমন্ত্রীও নেই।
গত সপ্তাহের শেষভাগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে দেশবাসীর দাবি মেনে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেবেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথম ভাগ ছিল এই সিদ্ধান্তই। গোতাবায়া রাজাপক্ষ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেই সাতদিনের মধ্যে সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসাতে হবে। ওই অধিবেশনেই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নেওয়া হবে। সর্বদলীয় সরকার গঠন করে আপাতত দেশশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে শ্রীলঙ্কার। এরপর যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করে, তার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করা হত। কিন্তু হঠাৎ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা না দিয়েই গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে গোটা দেশ।