পঞ্জশির: কার্যত তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে আফগানিস্তান। পেন্টাগনের হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়ে রাতারাতি কাবুলের দখল নিয়েছে তালিবান। প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন আসরাফ ঘানি। কাবুল বিমানবন্দরের চেহারাই বলে দিচ্ছে কী ভাবে আতঙ্কের প্রহর গুনছে আফগানিস্তান। অথচ এই আফগানিস্তানেরই একাংশে গিয়ে ধাক্কা খেল তালিবান। আধুনিক সমরসজ্জা, চোখরাঙানিতেও কোনও লাভ হল না। প্রথম বিরোধিতার মুখে পড়ল তালিবান। রুখে দিল নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। পঞ্জশির প্রদেশ এখনও কব্জা করতে পারেনি তালিবান।
পার্সি থেকে অনুবাদ করলে পঞ্জশির শব্দের অর্থ হয় পাঁচ সিংহ। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে এটিও একটি। যেখানে রয়েছে ৭টি জেলা, ৫১২টি গ্রাম। ২০২১-এর শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রদেশের জনসংখ্যা ১,৭৩,০০০। বজারক এদের প্রাদেশিক রাজধানী।
হিন্দু কুশের কোলে এখনও মাথা তোলেনি তালিবানি পতাকা:
গোটা দেশ যখন ছেয়ে গিয়েছে তালিবানের সাদা-কালো পতাকায়, তখন পঞ্জশিরে উড়ছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের পতাকা। ২০০১-থেকে হিন্দু কুশ পর্বতমালার কোলে এই উপত্যকায় এই পতাকা উড়ছে। প্রয়াত আফগান রাজনীতিক আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে এই নর্দান অ্যালায়েন্সে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে আফগানদের। জানা যাচ্ছে, আফগান সেনার যে সব সদস্য কোনোরকমের তালিবানদের থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন তাঁরা একে একে পৌঁছচ্ছে পঞ্জশিরে। আহমেদ মাসুদ সেখানে স্বাধীনতার ডাক দিচ্ছেন।
পঞ্জশিরে থেকেই নিজেকে ‘কেয়ারটেকার প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা আমরুল্লাহ সালেহ-র
আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ পঞ্জশির উপত্যকায় পৌঁছেছেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, কোনও প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব থেকে সরে গেলে, পদত্যাগ করলে বা মৃত্যু হলে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট হন। তাই তিনি যেহেতু আফগানিস্তানে আছেন, তাই তিনিই প্রেসিডেন্ট। আহমেদ মাসুদ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহম্মদি সালেহ তাঁকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। রবিবারই তালিবান যখন আফগানিস্তান দখলে নেয়, তার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। তবে সালেহ পঞ্জশিরে যান। প্রথম থেকেই তালিবানের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। টুইট করে বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কোনও পরিস্থিতিতেই তালিবানের সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নত করব না।’
তালিবানকে আগেও রুখে দিয়েছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স:
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান ছিল তালিবানের হাতে। কিন্তু এই নর্দার্ন অ্যালায়েন্স কখনই তাদের ঢুকতে দেয়নি পঞ্জশিরে। ১৯৯৬ তেই তৈরি হয় এই বাহিনী। তালিবানকে রুখতে এই বাহিনী তৈরিতে সাহায্য করে ইরান, ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান। এই বাহিনীর জন্য গোটা দেশে রাজত্ব চালালেও পঞ্জশির তালিবানদের হাতে আসেনি। এই অঞ্চলের সঙ্গে অন্য কোনও দেশের সীমান্ত নেই। সুতরাং এই অংশের চারপাশ ঘিরে রয়েছে তালিবান ঘাঁটি।
এই পঞ্জশির আসলে এক দূর্গের মতো। তালিবানের আগে সোভিয়েত বাহিনীও কখনও আঁচড় কাটতে পারেনি পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকায়। তবে আগের তালিবানের সঙ্গে এ বারের তালিবানের কিছুটা তফাৎ রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের কাছে আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। তাদের বাহিনীও আগের থেকে অনেক বেশি পেশাদার। মার্কিন বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া বহু অস্ত্রই এখন রয়েছে তাদের কব্জায়। তাই এ বার তালিবানের পঞ্জশিরের কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। আরও পড়ুন: ‘চটি খুলে বুটটাও পরার সময় পাইনি’, মৌনতা ভেঙে বাইডেনকেও জবাব দিলেন ঘানি