কাবুল: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলু খাগড়ার প্রাণ যায়। আপাতত আফগানিস্তান(Afghanistan)-র অবস্থা এমনটাই। গোটা দেশের দখল নিয়েছে তালিবান(Taliban), পতন হয়েছে পূর্ববর্তী ঘানি সরকারের। দেশের শাসনভার কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই যখন টানাপোড়েন চলছ্, তখন সাধারণ মানুষের দিকে তাকাবে আর কে। চরম অর্থসঙ্কটে অনেকেই এক মুঠো খাবার জোগাতে চুরির পথ বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা নেই, একবার তালিব বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেই মিলছে চরম শাস্তি।
কথায় আছে, গরিবদের কাছে অর্থ বা বিপুল সম্পত্তি না থাকলেও আত্মসম্মান ও অপমান বোধ রয়েছে ভরপুর। আর সেই আত্মসম্মানই কেড়ে নিচ্ছে তালিবান। সামান্য কিছু চুরি করলেও, সেই বস্তুরই মালা তৈরি করে তাঁর গলায় মালা হিসাবে পরিয়ে ভরা বাজারে সবার সামনে ঘোরানো হচ্ছে।
ইসলাম ধর্মে চুরি পাপ হলেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই অনেকে দোকান থেকে টুকটাক খাবার জিনিস চুরি করছে। দোকানির নজর এড়াতে পারলেও গোটা শহর জুড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তালিব বাহিনীর নজর এড়ানো অসম্ভব। তাদের হাতে ধরা পড়লেই শাস্তি হিসাবে জনসমক্ষে অপমান করা হচ্ছে।
যেমন এক ব্যক্তি পরিবারের সদস্য়দের মুখে সামান্য খাবার তুলে দেওয়ার জন্য একটি মুরগি চুরি করেছিলেন। ভেবেছিলেন, হয় বিক্রি করে দেবেন এই মুরগি এবং সেই টাকা দিয়ে খাবার কিনবেন, কিংবা নিজেরাই এই মুরগি কেটে খাবেন। কিন্তু চুরি করে পালাবার আগেই ধরা পড়ে গেলেন তালিবানের হাতে। ব্যস, শাস্তিস্বরূপ ওই মুরগিই গলায় বেঁধে ঘোরানো হল ওই ব্যক্তিকে।
TB detained a man accused of stealing someone's chicken. The man was then paraded in the public with the chicken around his neck….. #Afghanistan pic.twitter.com/Idyfp0drKk
— FJ (@Natsecjeff) September 8, 2021
অন্যদিকে, কান্দাহারেও প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে কান্দাহারেও। সেখানে এক ব্যক্তি কয়েকটি বেদানা চুরি করেছিলেন, তাও তরতাজা নয়, প্রায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছিল ওই বেদানাগুলি। কিন্তু তালিবানের যুক্তি, যতই ক্ষিদে পাক, চুরি করবে কেন। তাই ওই ব্যক্তিকেও চুরি করা বেদানার মালা পরিয়ে ঘোরানো হল গোটা বাজারে। এভাবেই অপমান করে আপাতত শাস্তি দিচ্ছে তালিবান।
Meanwhile in Kandahar, some guy who allegedly stole some pomegranates was detained by TB. He was then made to wear some pomegranates around his neck and paraded in public. #Afghanistan pic.twitter.com/RfHO0CaN2J
— FJ (@Natsecjeff) September 8, 2021
বুধবারই জালালাবাদ পুরসভা থেকে এক কর্মচারীকেও ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা হয়। শাস্তি হিসাবে তালিব বাহিনী ওই ঘুষের টাকা দিয়েই একটি মালা তৈরি করে ওই ব্যক্তিকে পরিয়ে দেয় এবং তাকে ওইভাবেই সকলের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে অনেকের মতে, চরম শাস্তি দেওয়ার থেকে জনসমক্ষে অপমান করা ঢের গুণ ভাল। তালিব সরকার আগেই জানিয়েছে, তারা শরিয়া আইন অনুসরণ করে চলবে। এই শরিয়া আইন অনুযায়ী, চুরি করা মহা পাপ। যদি কোনও ব্যক্তি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তবে তাঁর বাঁ-হাত কেটে নেওয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সহ একাধিক মুসলিম শাসিত দেশে এই নিয়ম চালু রয়েছে এখনও। এ বার আফগানিস্তানেও একই নিয়ম চালু করা হয় কিনা, তা কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে।
আরও পড়ুন: টেবিলের তলা দিয়ে ঘুষ নিতে গিয়েই ধরা পড়ল পুরকর্মী, তারপর যা করল ‘আদর্শবাদী’ তালিবান…
আরও পড়ুন: অনুমতি ছাড়া দেওয়া যাবে না স্লোগান, প্রতিবাদ করতেও লাগবে তালিব সরকারের সম্মতি!