ব্যাঙ্কক: বিভিন্ন কারণে ক্রমশ পৃথিবীতে দূষণ বাড়ছে। শহরাঞ্চলে শ্বাস নেওয়াই দায় হয়ে পড়ছে। তাজা বাতাসের সন্ধানে শহর থেকে দূরে, গ্রামীন প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। আর এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়েই ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন থাইল্যান্ডে এক কৃষক। দুষণ সঙ্কটকে তিনি অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে ধরে নিয়েছেন। তাঁর খামারে তিনি ঘণ্টা হিসেবে তাজা বাতাস বিক্রি করছেন। না ভুল পড়েননি, ঘণ্টা প্রতি ১,০০০ ভাট বা ভারতীয় টাকা ২,৫০০ টাকার বিনিময়ে তাজা বাতাস বিক্রি করা শুরু করেছেন তিনি। স্থানীয় প্রতিহেদন অনুযায়ী এই অভিনব ব্যবসা ফেঁদে বসা থাই কৃষকের নাম দুসিত কাচাই। বয়স ৫২ বছর। তাঁর খামারে থাকলে, প্রথম ঘণ্টার জন্য ২৫০০ টাকা দিতে হয়। তবে তারপর পর্যটকরা বিনামূল্যে খাবার এবং থাকার সুযোগ পাবেন। শিশু আর বৃদ্ধদের অবশ্য তাজা বাতাসের জন্য কোনও অর্থ দিতে হবে না, বিনামূল্যেই তাঁর খামারে থাকতে পারবেন তাঁরা।
থাইল্যান্ডের ফু লেন খা ন্যাশনাল পার্কের এক প্রান্তে অবস্থিত দুসিতের খামারটি। থাইল্যান্ডের এই জাতীয় পার্ক তাজা বাতাস, সবুজ বনাঞ্চল এবং সুদৃশ্য পাহাড়ি এলাকার জন্য বিখ্যাত। প্রচুর পর্যটক এই এলাকায় বেড়াতে আসেন। এই পর্যটকদেরই নিশানা করছেন দুসিত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ‘এশিয়ান লাইফ’ নামে এক পরিবেশবাদী গোষ্ঠী চালান তিনি। কেন তাজা বাতাসের বিনিময়ে তিনি অর্থ নিচ্ছেন? শ্বাস নেওয়ার বাতাসও কি বিক্রির পণ্য? তিনি জানিয়েছেন, ওজোন স্তরের হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং দূষিত বাতাসের মতো পরিবেশগত হুমকি থেকে বাঁচতে আরও বেশি বেশি করে মানুষ এখন প্রকৃতির সন্ধান করছে, অভয়ারণ্যের সন্ধান করছে। তিনি বলেছেন, “ফু লেন খা উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আমার খামার। খামারের বাতাসের গুণমান এতটাই ভাল যে, এই বাতাস প্রতি ঘন্টায় ১০০ ভাট অর্থে বিক্রি করা যেতে পারে। এই বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
তবে এই অর্থ সংগ্রহের পিছনে তাঁর এক মহৎ উদ্দেশ্য আছে। ‘এশিয়ান লাইফ’-এর সেক্রেটারি হিসেবে পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে এবং বাতাসের গুণমান উন্নত করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর সেই কাজের জন্যই বাতাস বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছেন তিনি। দুসিত বলেছেন, “প্রকৃতির ধ্বংস করা বন্ধ করতে না পারলে পর্যটকদের প্রকৃতি বেড়াতে আসাই উচিত নয়।” ভারতের মতো গত কয়েক বছরে থাইল্যান্ডের বাতাসের গুণনাম নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই, বায়ুপ্রবাহের অভাবে ব্যাংককের বাতাস ধুলোকনায় ভরে গিয়েছিল। গত বছর থাইল্যান্ডের জিও ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছিল থাইল্যান্ড জুড়ে ১০৬০টি দুষণের হটস্পট তৈরি হয়েছে।