ঢাকা: আরও বিপাকে পড়লেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক মাসের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জুলাই-অগস্টের গণহত্যার ঘটনা নিয়ে মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার এই নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) গণহত্যার মামলার শুনানির পর ট্রাইব্যুনালের প্রধান গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেয়। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্টও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে এ বছরের জুলাই-অগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ প্রাক্তন মন্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধেও এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হয়। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ জেল থেকে অভিযুক্তদের এজলাসে আনা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেই ট্রাইব্যুনালেই শুরু হল বিচার।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদালতে তোলা হয় ১৩ জনকে। গণহত্যার ঘটনায় করা একাধিক মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও প্রাক্তন এক সচিব মিলিয়ে মোট ১৪ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনার কথা ছিল। তবে কেরানিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ অভিযুক্তকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। এছাড়া প্রাক্তন মন্ত্রী শাহজাহান খান অসুস্থ থাকায় প্রথমে আনতে না চাইলেও পরে সবার সঙ্গে তাঁকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী সুষ্ঠু বিচার হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও জানান, অতীতে ট্রাইব্যুনাল যে অবিচারের ইতিহাস তৈরি করেছে তা আর এই ট্রাইব্যুনালে হবে না। এই সরকারের সুবিচার করার সদিচ্ছা আছে। আগের সরকারের সময়ে গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচারও এই ট্রাইব্যুনালে হবে। তবে এখন জুলাই-অগস্টে গণহত্যার বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সব চেষ্টা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আসতে পারবেন। যথাযথ আইডি কার্ড নিয়ে সাংবাদিকরাও ঢুকতে পারবেন। তবে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের কার্যক্রম শুরু হয়।
এবছরের ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ভারতে আসেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও প্রাক্তন মন্ত্রী, সাংসদদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হতে থাকে। মূলত ওই সব মামলায় দ্রুত বিচারের জন্য ২০১০ সালে হাসিনা সরকারের তৈরি করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। আওয়ামী লীগ এসব মামলাকে প্রহসন বলে অভিযোগ করেছে। এই সব আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা মামলার কোনও ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।