তেল আভিভ: হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইজরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। মনোবল জোগাতে ইজরায়েল সফরেও গিয়েছেন মার্কিব প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবারই তিনি ইজরায়েলে পৌঁছন, বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ফাঁকেই ইজরায়েলবাসীদের সঙ্গেও দেখা করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন, তাঁদের কাছ থেকে যুদ্ধের বাস্তব চিত্র জানতে চান। সেখানেই তাঁর সাক্ষাৎ হয় র্যাচেল এডরির সঙ্গে, বছর ৬৫-র ওই বৃদ্ধাকে ২০ ঘণ্টা ধরে আটক করে রেখেছিল হামাস জঙ্গিরা। কীভাবে তিনি হামাসের হাত থেকে মুক্তি পেলেন, সেই গল্পই শুনলেন বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ-চারিতায় র্যাচেল নামক ওই বৃদ্ধা জানান, গত ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিরা তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। সেই সময় তিনি ও তাঁর স্বামী ডেভিড ছিলেন। দুইজনকেই বন্দি বানায় হামাস। বন্দুকের নলের সামনে তাঁরা কার্যত নিরুপায় ছিলেন। তবে বৃদ্ধার বুদ্ধিমত্তাতেই শেষরক্ষা হয়। প্রায় ২০ ঘণ্টা তাঁরা হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন। গোটা সময়টাই তিনি জঙ্গিদের কখনও চা-বিস্কুট, কখনও অন্য কিছু খাবার দিয়ে ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন। বৃদ্ধার আতিথেয়তায় যখন মন গলছে হামাস জঙ্গিদের, সেই সময়ই উদ্ধারে হাজির হয় ইজরায়েলি সেনা।
বৃদ্ধার স্বামী ডেভিডও জানান, হামাস জঙ্গিরা তাঁদের মারধর না করলেও, ‘শহিদ’ বানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। যেই মুহূর্তে ইজরায়েলি সেনা এসে পৌঁছয়, জঙ্গিরা হ্যান্ড গ্রেনেডের পিন খুলে দেয়। সেই গ্রেনেড ধরা হয় ঠিক র্যাচেলের মাথার উপরে। যতক্ষণ ইজরায়েলি সেনার সঙ্গে দর কষাকষি চলছিল হামাস জঙ্গির, সেই ফাঁকেই র্যাচেল উঠে গিয়ে জঙ্গিদের জন্য কফি বানান, তাদের কুকিজ খেতে দেন। তাঁদের খিদে পেয়েছে কি না, বারংবার এই প্রশ্ন করে ব্যাতিব্যস্ত করে তোলেন। এমনকী, আহত এক জঙ্গির মাথায় ব্যান্ডেজও করে দেন র্যাচেল।
তাঁর স্বামীর কথায়, র্যাচেল হামাস জঙ্গিদের প্রশ্ন করে, বকবক করে পাগল করে দিচ্ছিলেন। যদিও র্যাচেল তা মানতে নারাজ। তিনি জানান, বেঁচে থাকতেই এইসব করছিলেন তিনি। র্যাচেল বলেন, “আমি ওদের চোখে-মুখে দেখতে পাচ্ছিলাম যে রেগে আছে ওরা। তাও আমি ওদের প্রশ্ন করি যে খিদে পেয়েছে কি না, ওদের জন্য কফি ও কুকিজ আনি। যতক্ষণ অবধি নিরাপত্তা বাহিনী আসছিল, ততক্ষণ আমি নানা কথায় ওদের ব্যস্ত রাখি।”
ইজরায়েলি সেনা সূত্রেও জানা গিয়েছে, তাদের প্রাথমিত পরিকল্পনা ছিল, বোমাবর্ষণ করে বাড়িটিকে উড়িয়ে দেওয়া। পরে তারা জানতে পারেন, তাদেরই এক সহকর্মীর বাড়ি সেটি। ওই আধিকারিকের মা-বাবা হামাস জঙ্গির হাতে বন্দি রয়েছেন। এরপরই তারা হামাসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বন্দিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। সেই প্রচেষ্টা সফলও হয়। বৃদ্ধার মুখে গোটা গল্প শুনে মুগ্ধ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।