লন্ডন: ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ এই শ্বাশ্বত সত্য সকলেই জানেন। মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আগে থেকে মৃত্যুর আগমন ধ্বনি টের পাওয়া যায়? অন্তত, প্রিয়জনদের থেকে ভালভাবে বিদায় নিয়ে নেওয়া যায়। বাকি থাকা কাজ, সেরে ফেলা যায়। তবে, সত্যিই কি কেউ মৃত্যুর বিষয়ে আগে থেকে উপলব্ধি করতে পারে? কেউ যখন মারা যায়, তখন ঠিক কী ঘটে? এই সকল প্রশ্ন প্রায় সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে বিচলিত করেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান এই বিষয়ে খুবই কম জানতে পেরেছে। তবে, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করেছেন, কোনও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যু কিছু সঙ্কেত দেয়। যা থেকে বোঝা যায়, ওই ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন।
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু বলা কঠিন। মৃত্যুর সঙ্কেত নাও মিলতে পারে। তবে, স্বাভাবিক মত্যু বা রোগভোগে মৃত্যুর ক্ষেত্রে, সাধারণত ওই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রস্তুতি তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত সময়ের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এমনটাই দাবি করেছেন এক ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট’এর চিকিৎসক। ডাক্তারি জীবনে অন্তত কয়েকশো মানুষেকে অত্যন্ত কাছ থেকে মরতে দেখেছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি রিসার্চ ফেলো সিমাস কোয়েল। এই বিষয় গবেষণা করেননি তিনি। তবে,ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই মৃত্যুকে পড়ে নিতে শিখেছেন তিনি। ‘দ্য কনভারসেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি মৃত্যু প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
এই চিকিত্সকেরমতে, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর আসে সেই দিনটি, যখন সেই ব্যক্তি পৃথিবীকে বিদায় জানান। সিমাস বলেছেন, মৃত্যুর আগে বিভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে একেবারে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। তবে, কারা চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন। তবে, সব সময় একেবারে নিখুঁতভাবে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী মেলে না। কারোর ক্ষেত্রে হয়তো মনে হল, তাঁর আয়ু আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন। তাঁর ক্ষেত্রে বাকি প্রক্রিয়াটি একদিনের মধ্যেও ঘটে যেতে পারে।
সিমাস কোয়েল বলেছেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ারের একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে, আমি মনে করি মৃত্যুর একটি প্রক্রিয়া আছে। আমাদের মৃত্যু ঘটার দুই সপ্তাহ আগে থেকে এটা শুরু হয়। এই সময় থেকে, মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এই সময় সাধারণত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের হাঁটতে কষ্ট হয়। সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে। অল্প অল্প করে তাদের ঘুমের সময় বাড়তে থাকে। ঘুমের মধ্যে আবার বারবার চমকে জেগে ওঠে। জীবনের শেষ দিনে, কোনো ট্যাবলেট গিলে নেওয়া বা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন ওই ব্যক্তি। আর তারপরই আসে চিরঘুম।’
মৃত্যুর সময় শরীরে ঠিক কী ঘটে, এই রহস্য এখনও অমীমাংসিত। তবে কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হতে শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে এন্ডোরফিনও। এই রাসায়নিকটি সাধারণত কোনও ব্যক্তির মধ্যে উচ্ছ্বাসের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন, এই রাসায়নিকটি নিঃসরণের কারণেই মৃত্যু প্রক্রিয়া চলাকালীন মানুষের ব্যথা-যন্ত্রনা কমে যায়। তবে, এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সিমাস বলেছেন, ‘মৃত্যুর আসল মুহূর্তটিকে বোঝা কঠিন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে কোনও মানুষের মানসিক চাপ, তাঁর শরীরের মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়। ক্যান্সার বা অন্য গুরুতর রোগে অসুস্থদের শরীরে প্রদাহ দেখা যায়।’