Rishi Sunak: কেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে পরাজিত হলেন ঋষি সুনাক? স্ত্রী-এর ধন-সম্পদই কি ক্ষতি করল তাঁর?
শুরুতে সবার আগে ছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু শেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কেন পরাজিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিক? অনেকে বলছেন, বউয়ের ধন-সম্পদই তাঁর পথের কাঁটা হয়েছে।
লন্ডন: ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দৌড় শেষ। যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন লিজ ট্রাস। অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলেন লিজ। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা ঋষি সুনাকের পক্ষে ৬০,৩৯৯ ভোট দিয়েছেন। আর লিজ পেয়েছেন ৮১,৩২৬ ভোট। জয়ের ব্যবধান ছোট হলেও, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দৌড় দ্বিমুখী হওয়ার পর থেকেই তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। অথচ বরিস জনসন ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই, ঋষি সুনাকই প্রথম পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নিজের প্রার্থিত ঘোষণা করেছিলেন। অন্যদিকে, শেষ প্রার্থী হিসেবে এই দৌড়ে যোগ দিয়েছিলেন লিজ। প্রথম কয়েক রাউন্ডে সবার আগে ছিলেন সুনাকই। কিন্তু যত দিন গিয়েছে ততই ঋষির জনপ্রিয়তা কমেছে, আর পথ পরিষ্কার হয়েছে লিজ ট্রাসের। কিন্তু, কেন প্রথম থেকে এগিয়ে থেকেও, শেষ রাউন্ডে এসে পরাজিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনাক? অনেকেই বলছেন, সম্ভবত তাঁর ভারতীয় স্ত্রী অক্ষতাই তাঁর পতনের কারণ।
পিছন থেকে ছুরি
একটা বিখ্যাত রাজনৈতিক প্রবাদ রয়েছে, “যে ছুরি চালায় সে কখনও মুকুট পায় না।” ঋষি সুনাকের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বরিস জনসনের পদত্যাগ করার পিছনে সবথেকে বড় ভূমিকা ছিল ঋষি সুনাকেরই। চ্যান্সেলর পদ থেকে সুনাকের ইস্তফার পরই একযোগে বরিস সরকারের সাংসদরা নিজ নিজ পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। পতন ঘটেছিল বরিস জনসন সরকারের। এই ঘটনার পর থেকে তাঁর প্রতি অবিশ্বাস কাজ করেছিল কনজ়ারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মনে। যে কারণে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে অনেকেই অনিচ্ছুক ছিলেন।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
এক ভিডিয়োতে ‘কেন্ট কমিউটার বেল্ট’ প্রকল্পের জন্য ‘বঞ্চিত শহুরে এলাকা’ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। সেই ভিডিয়ো ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। এর আগে যুক্তরাজ্য সরকার ব্রিটেনে অর্থনৈতিক সাম্য আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব ব্রিটেনের বাইরে সম্পদ ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। ঋষি সুনাকের পদক্ষেপ সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বলে মনে করেছেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির সদস্যরা।
পিছনে টেনে ধরলেন স্ত্রী
তবে, সুনাকের জনপ্রিয়তা কমার পিছনে সবথেকে বড় ভূমিকা তাঁর স্ত্রী অক্ষতা, এমনটাই দাবি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলির।সানডে টাইমসের ধনী তালিকা অনুসারে, অক্ষতা মূর্তি ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের থেকেও ধনী। গত মাসে লেবার পার্টি ঋষি সুনাকের ব্যবসার তহবিল সংগ্রহের জন্য ঋণ গ্রহণের বিষয়ে আরও স্বচ্ছতার দাবি করেছিল। তারপরই এই দম্পতির সম্পত্তি নিয়ে কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়। অক্ষতা মূর্তি ইনফোসিস সংস্থার ০.৯৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক, যার মূল্য ৬৯ কোটি ইউরো। এদিকে, অক্ষতা এখনও ভারতীয় নাগরিক। যুক্তরাজ্যে আবাসিক না হওয়ায় তিনি যুক্তরাজ্যে কর দিতে দায়বদ্ধ নন। তাই গত বছর তিনি প্রায় ২ কোটি পাউন্ড কর বাঁচাতে পেরেছেন। ফলে ঋষির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি গরিবদের থেকে কর নিচ্ছেন। অথচ, যেখানে তাঁর স্ত্রীই কর দেন না।
মার্কিন গ্রিন কার্ড
কফিনের শেষ পেরেক ছিল সুনাক দম্পতির ইউএস গ্রিন কার্ড ধরে রাখা। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ডে পড়াশোনা করতে গিয়েই অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ঋষি সুনাকের। ২০০৯ সালে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। তারপর দীর্ঘদিন এই দম্পতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করতেন। এখনও ক্যালিফোর্নিয়ায় সান্তা মনিকা সৈকতে তাঁদের একটি ৫০ লক্ষ টাকার একটি পেন্টহাউস রয়েছে। যেখানে তাঁরা ছুটি কাটাতে যান। চ্যান্সেলর হওয়ার পরও ১৮ মাস ধরে গ্রিন কার্ড ধরে রেখেছিলেন ঋষি সুনাক। পরে আমেরিকায় তার প্রথম সরকারী সফরের সময়, ২০২১ সালে তিনি ওই কার্ড ছেড়ে দেন। ব্রিটেন দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দিলেও, এই ঘটনা কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে ছিল ক্ষতিকর। গ্রিন কার্ড থাকার কারণে ব্রিটেন নিয়ে সুনাকের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। আর সেটাই কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের তাঁকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় ফেলেছে।