International Shree Sitaram Bank: অযোধ্যার এই ব্যাঙ্কে একটি টাকাও নেই, আর কোটি টাকা থাকলেও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না
International Shree Sitaram Bank: ব্যাঙ্কের সঙ্গে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত টাকা-পয়সার কোনও সম্পর্কই নেই। তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যা ৩৫,০০০। আর সুদ হিসেবে তাঁরা পান শুধুমাত্র মানসিক শান্তি, আস্থা এবং আধ্যাত্মিকতা! কোথায় আছে এমন ব্যাঙ্ক? আর কোথায়, 'রাম জন্মভূমি' অযোধ্যায়।
অযোধ্যা: সাধারণত, নিজেদের আমানত সুরক্ষিত রাখতেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখেন মানুষ। সেই সঙ্গে থাকে, যত বেশি সম্ভব সুদ পাওয়ার লক্ষ্য। কিন্তু, যদি বলা হয়, এমন এক ব্যাঙ্ক রয়েছে যার সঙ্গে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত টাকা-পয়সার কোনও সম্পর্কই নেই। তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যা ৩৫,০০০। আর সুদ হিসেবে তাঁরা পান শুধুমাত্র মানসিক শান্তি, আস্থা এবং আধ্যাত্মিকতা! কোথায় আছে এমন ব্যাঙ্ক? আর কোথায়, ‘রাম জন্মভূমি’ অযোধ্যায়। নাম, ‘আন্তর্জাতিক শ্রী সীতারাম ব্যাঙ্ক’। আর এখানে মানুষ অর্থের বদলে সঞ্চয় করেন রাম-সীতার নাম লেখা পৃষ্ঠা-সহ পুস্তিকা। এটা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের কাছে রামের পুজো করার সমান। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই অভিনব ব্যাঙ্ক সম্পর্কে –
অনেকেরই মনে হতে পারে, ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বোধহয় এই ব্যাঙ্কের কোনও যোগ রয়েছে। প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর অযোধ্যায় যেমন ভক্তদের ভিড় বেড়েছে, একইভাবে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই ব্যাঙ্ক নিয়েও। তবে, ব্যাঙ্কটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ৫০ বছর আগে, ১৯৭০ সালের সালের নভেম্বরে। শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রধান মোহান্ত নৃত্যগোপাল দাস এই ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে ‘আন্তর্জাতিক শ্রী সীতারাম ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ছড়িয়ে রয়েছে ভারত ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নেপাল, ফিজির মতো বিভিন্ন দেশে। দেশ-বিদেশ জুড়ে রয়েছে ব্যাঙ্কটির ১৩৬টি শাখায় জমা রয়েছে অ্য়াকাউন্ট হোল্ডারজের ২০,০০০ কোটি ‘সীতারাম’ বুকলেট।
#WATCH | Uttar Pradesh: A unique bank in Ayodhya called International Shri Sitaram Naam Bank lets devotees deposit ‘Ram Naam’ in their accounts. pic.twitter.com/j5wqo3NqU4
— ANI (@ANI) January 18, 2024
ব্যাঙ্কের বর্তমান ম্যানেজার পুনিত রাম দাস। তিনি জানিয়েছেন, এই অভিনব ব্যাঙ্কে কেউ অ্যাকাউন্ট কুলতে চাইলে, তাঁকে বিনামূল্যে একটি সীতারাম বুকলেট এবং লাল কলম দেওয়া হয়। তাতে, কমপক্ষে ৫ লক্ষ বার ‘সীতারাম’ লিখলে তবেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। দেওয়া হয় পাসবুক। দেশ-বিদেশ থেকে এই বুকলেটগুলিতে ‘সীতারাম’ লিখে অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা ব্যাঙ্কে জমা করেন। এমনকি, বুকলেটগুলি ডাকযোগে পাঠানোরও ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ হিসেব রাখে, কোন অ্যাকাউ্ট হোল্ডার, কতবার সীতারাম লিখেছেন।
#WATCH | Ayodhya, UP: The manager of International Shri Sitaram Naam Bank, Punit Ram Das ji says, “Just like money is deposited in banks, here the name of ‘Sita-Ram’ is deposited…The objective of this bank is to spread the name of lord Ram…” pic.twitter.com/ViLfsCuiYq
— ANI (@ANI) January 18, 2024
ব্যাঙ্কের কথা উঠলে, রিটার্ন বা সুদের কথা আসবেই। এই ব্যাঙ্কে টাকা জমা নেওয়া হয় না, তাই আর্থিক সুদ পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পুনীত রাম দাস জানিয়েছেন, আসলে আমরা যেমন মানসিক শান্তি, বিশ্বাস এবং পুণ্যলাভের জন্য দেব-দেবীর মন্দিরে যাই, সেই একই কাজ হয় ‘সীতারাম’ লিখে। এই ব্যাঙ্কে সীতারাম বুকলেট জমা করা আসলে এক ধরনের প্রার্থনা। ঈশ্বর যেমন সকলের ভালো-মন্দের হিসেব রাখেন, তেমনই এই ব্যাঙ্কে কে কতবার রামনাম লিখলেন তার হিসেব রাখা হয়। রামের নাম লিখে, জপ করে, স্মরণ করে অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা গভীর আধ্যাত্মিক শান্তি পান। এছাড়া, হিন্দুদের একাংশের বিশ্বাস রয়েছে, ৮৪ লক্ষ বার সীতারাম লিখলে ‘মোক্ষ’ লাভ করা যায়।
কাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে এই ব্যাঙ্কে? ১৪ বছর আগে সীতারাম ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বিহারের গয়ার বাসিন্দা জিতু নাগর। তিনি জানিয়েছেন, তারপর থেকে তিনি মন্দিরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। পরিবর্তে, শুধুই সীতারাম লেখেন। যখনই কোনও সমস্যায় পড়েন, রামনাম লেখেন। এই ভাবে সারা বছর ধরে রামনাম লিখে পুস্তিকা ভরে যায়। এরপর, বছরে একবার তিনি ব্যাঙ্কে এসে সেটি জমা দিয়ে যান। ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, ইতিমধ্যে তাঁর ১.৩৭ কোটি বার সীতারাম লেখা হয়ে গিয়েছে। উত্তর প্রদেশের বেরেলির সুমন দাসের হিসেব বলছে, তিনি লিখেছেন ২৫ লক্ষ বার। তিনি জানিয়েছেন, সীতারাম লিখলেই আধ্যাত্মিক বোধে তাঁর মন পূর্ণ হয়ে যায়। সাধারণ ব্যাঙ্কে রাখা টাকা যদি আপনার মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে একবার এই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে দেখতে পারেন।