রাঁচী: দুর্নীতি, গ্রেফতারি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ-কোনও ইস্যুই কাজ করল না। ঝাড়খণ্ডে রেকর্ড গড়ে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে হেমন্ত সোরেনের জেএমএমের নেতৃত্বে মহাগঠবন্ধন। ঝাড়খণ্ডের ৮১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫১টিতেই এগিয়ে ইন্ডিয়া জোট। হেমন্ত সোরেন নিজেও জিতছেন। মহারাষ্ট্রে যেখানে গেরুয়া ঝড় উঠেছে, সেখানেই ঝাড়খণ্ডে কেন পুরনো সরকারের উপরেই আস্থা রাখল জনগণ?
ঝাড়খণ্ডেও এনডিএ জেতার আশা রেখেছিল। নির্বাচনী প্রচারে কোমর বেঁধে নেমেছিল বিজেপি। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, জমি দখল, লাভ জিহাদ ইস্যুতে সরব হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফলে তা বুমেরাং হয়ে গিয়েছে বলেই দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে রয়েছে জেএমএমের নেতৃত্বে থাকা ইন্ডিয়া জোট।
ঝাড়খণ্ডের ৮১টি আসনের মধ্যে জেএমএম ৩০টি আসনে এগিয়ে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ১৪টি আসনে। আরজেডি ৫টি আসনে এগিয়ে। ম্যাজিক সংখ্যা পার করে গিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। সেখানেই বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৫টি আসনে।
১০টি আসনে জেএমএম ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন বারহাইত আসন থেকে লড়ছেন। ১৭ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে তিনি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে যে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও বিজেপি কেন ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতা দখল করতে ব্যর্থ হচ্ছে?
1. মুখ্যমন্ত্রীর কোনও মুখ নেই- ঝাড়খণ্ডে ভারতীয় জনতা পার্টির স্থানীয় স্তরে কোনও শক্তিশালী মুখ নেই। দলের মুখ্যমন্ত্রী মুখের দাবিদার দুইজন।বাবু লাল মারান্ডি এবং চম্পাই সোরেন। এরা দুইজনই দল বদলে বিজেপিতে এসেছিলেন। ফলে মানুষের আস্থা সেভাবে পাননি তারা। এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সেই তুলনায় চম্পাই সোরেন বা বাবুলাল মারান্ডির দ্বিগুণ জনপ্রিয়তা হেমন্ত সোরেনের। দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেও রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষই মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের উপরেই আস্থা রেখেছেন।
2. মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক- ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, জেলমুক্তির পর ফের যখন হেমন্ত সোরেন মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন, তখন নিজের ভাবমূর্তি শোধরাতে মহিলাদের ভোট ব্যাঙ্কের উপরেই জোর দিয়েছিলেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে রাজ্যের মহিলাদের জন্য ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’ শুরু করেছিলেন। এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের প্রত্যেক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে জমা পড়ত। ভোটের আগেই হেমন্ত সোরেন সেই অঙ্ক বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা করে দেন। বিধানসভা ভোটে এই প্রকল্প বিশেষ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।
3. আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ- ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের মন পেতে সব রকমের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশে আদিবাসীরা জমি হারাচ্ছে বলেই নির্বাচনী প্রচারে গলা ফাটিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো শীর্ষ নেতারা। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় একতরফাভাবে হেমন্ত সোরেনই জয়ী হচ্ছেন। সংরক্ষণের মতো ইস্যুতে বিজেপিকে কোণঠাসা করছিলেন হেমন্ত সোরেন। আদিবাসীদের সংরক্ষণ নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পাস করলেও রাজ্যপাল তাতে অনুমোদন দেননি। সেই ইস্যুকেই বারবার তুলে ধরেছিলেন হেমন্ত সোরেন।
4. ছত্রভঙ্গ কুড়মি ভোটাররা- ঝাড়খণ্ডে কুড়মি ভোট পেতে এজেএসইউ (AJSU)-এর সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি। বিশেষ করে কোলিয়ারি অঞ্চলে নির্ণায়ক এই কুড়মিরাই। কিন্তু সুদেশ মাহাতোর দল মাত্র ২-৩টি আসনেই লিড পাবে বলে মনে হচ্ছে। এই ভোটের বড় অংশই যাচ্ছে হেমন্ত সোরেনের ঝুলিতে।
5. ব্যর্থ বড় নেতারা- ঝাড়খণ্ডে বিজেপির বড় নেতারা ব্যর্থ। বোকারোয় পিছিয়ে বিরাঞ্চি নারায়ণ। দেওঘরে নারায়ণ দাসের অবস্থাও একই। গোড্ডার অমিত মণ্ডলও অনেক পিছিয়ে। জগন্নাথপুরের মধু কোডার স্ত্রীকেও পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়।