হুগলি: কলকাতার পরে রাজ্যের চারটি পুরনিগমের ভোট সমাপ্ত। প্রত্যেকটিতেই ব্যাপক জয়লাভ করেছে তৃণমূল (TMC)। বাকি ১০৮ টি পুরসভাতেও তৃণমূলই জয়লাভ করবে এমনই দাবি করলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। সাম্প্রতিককালে, দলের অন্দরেই ‘বিতর্কিত মন্তব্যের’ জেরে আলোচনার শিরোনামে ছিলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ। দলীয় প্রার্থীর প্রচারে গিয়ে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য না করলেও কেবলই দলনেত্রীর নামেই প্রশংসা করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত,তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির গঠন অনুযায়ী, এখন মাত্র একটি পদই আসীন। চেয়ারাপার্সনের। আর সেই পদের অধিকারী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া আর কোনও পদ ঘোষিত হয়নি। ফলে, অভিষেকও আর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নন। কিন্তু, দলের অন্দরে বা উচ্চ নেতৃত্বদের মন্তব্যে ঠারেঠারে এটা স্পষ্ট, তৃণমূল নেত্রীর পর দলের ‘প্রধান’ অভিষেকই। কিন্তু, পূর্বেই স্পষ্ট হয়েছিল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে ছাড়া কাউকেই নেত্রী মানতে রাজি নন। এমনটা, নিজেই বলেছিলেন সাংসদ। সেই ভাবনা তিনি এখনও বহন করে চলেছেন এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। নয়ত দলীয় প্রার্থীর প্রচারে বেরিয়ে কেন শোনা গেল না অভিষেকের নাম?
মঙ্গলবার বৈদ্যবাটিতে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে বেরিয়ে কল্যাণ বলেন, “চারটে পুরনিগমের ভোটের ফলে স্পষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা রেখেছেন। মানুষ আমাদের নেত্রীকে ভরসা করেন। তাঁর নেতৃত্বেই তৃণমূল বাকি ১০৮ টি পুরসভাও দখল করবে। সারা রাজ্য জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সাক্ষী ছিলেন সাধারণ মানুষ। পুরনিগমের ভোটে ষাট শতাংশ যে ভোট হয়েছে বাকি পুরসভার ভোটে তা পঁয়ষট্টি সত্তর হয়ে যাবে।” পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, “বিজেপির পশ্চিমবঙ্গে কোনও জায়গা নেই। যাঁরা নির্দল হয়ে লড়াই করছেন তাঁরা আসলে বিজেপির দালালি করছেন।”
বস্তুত, পুরভোটের আগেভাগেই রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের ‘ব্যক্তিগত মতপ্রকাশ’ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই শুরু বিতর্কের সূত্রপাত। কল্যাণ দাবি করেছিলেন অভিষেক নেত্রীর বিরুদ্ধে গিয়ে মন্তব্য করছেন। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কিন্তু, নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন কল্যাণ। একে একে এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মদন মিত্র থেকে অপরূপা পোদ্দার, কুণাল ঘোষের। কার্যত, আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় তৃণমূল শিবির। দলের তরফে সতর্ক করা হয় কল্যাণকে। কিন্তু, বিরোধ সেখানে থামেনি। দলের অন্দরের ক্ষোভ কার্যত প্রকাশ্যে চলে আসে।
সেই প্রভাব পড়ে পুরভোটের প্রার্থী তালিকাতেও। সব মিলিয়ে শাসক শিবিরে কার্যত যুযুধান দুই পক্ষ তৈরি হয়ে যায় বলেই কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। যদিও নেত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কোনওভাবেই যেন দলের কোন্দল প্রকাশ্যে না আসে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে কেবল চেয়ারপার্সনের নামই ঘোষিত হয়েছে। বাকি কোনও পদ ঘোষিত হয়নি। এরই মধ্যে কল্যাণকেও সেই অর্থে শিরোনামে দেখা যায়নি। যদিও, প্রচারে গিয়ে তাঁর ফের এই ধরনের মন্তব্য আরও একবার স্পষ্ট করল যে নেত্রী বলতে মমতাকেই মানতে প্রস্তুত সাংসদ, অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন: ‘গীতশ্রী’-র অকালপ্রয়াণ, উত্তরবঙ্গ থেকে আজই কলকাতায় ফিরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী