লখনউ : মহা সমারোহে সমাপ্ত হল উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। ৪০৩ টি বিধানসভা আসন সমন্বিত উত্তর প্রদেশে সাত দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তম দফার নির্বাচন আজ অনুষ্ঠিত হল। উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর গোটা দেশের। কারণ উত্তরপ্রদেশে দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি বিধানসভা আসন। লোকসভা আসন সংখ্য়ার নিরিখে সর্ববৃহৎ উত্তরপ্রদেশ। তাই ২০২৪ এ কেন্দ্রে গদিতে কে বসবে তার অনেটাই নির্ভর করে উত্তর প্রদেশে ক্ষমতা কোন দলের হাতে। তাই উত্তর প্রদেশের মসনদ কার দখলে থাকল তার দিকে নজর থাকে গোটা দেশের।
সপ্তম দফার নির্বাচন শেষে টিভি৯ নেটওয়ার্কের দ্বারা পোলস্ট্র্য়াটের করা বুথ ফেরত সমীক্ষায় উত্তর প্রদেশের আসন বণ্টনের হিসেবের একটি সম্ভাবনা প্রকাশ করা হল। ১০,০০০ জন নমুনার উপর এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে। তবে এই সমীক্ষা একটি সম্ভাব্য মাত্র। এই সমীক্ষা বাস্তবে প্রতিফলিত নাও হতে পারে। চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে ১০ মার্চ। তবে টিভি৯ নেটওয়ার্কের সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে উত্তর প্রদেশের জনগণ পুনরায় যোগীতেই ভরসা রাখতে পারে। উত্তর প্রদেশের ৪০৩ টি আসনের মধ্যে ২১১-২২৫ টি আসন পেয়ে মসনদে বসতে পারে বিজেপিই। তবে গতবারের তুলনায় প্রায় শতাধিক আসনের হেরফেরের সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকার সম্ভাবনা সপা। আসন পেতে পারে ১৪৬-১৬০ টি। ১৪-২৪ টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকতে পারে মায়াবতীর বিএসপি। কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ৪-৬ টি আসন।
শতাংশের নিরিখে বিজেপি পেতে পারে ৪০.১ শতাংশ ভোট। ৩৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারে সপা। যেখানে গতবছর সপা পেয়েছিল ২১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট সেখানে ৩৪.৯ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা আদতে সপার সাফল্যই বটে। বিএসপি পেতে পারে ১৪ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে ৭.৪ শতাংশ ভোট থাকতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভোট শতাংশ ভাগ করলে ভোট শতাংশের ধারণা আরও পরিষ্কার হবে। ২৩ বছরের কম বয়সী যাঁরা প্রথমবারের জন্য ভোট দিচ্ছেন তাঁদের ভোটের নিরিখে বিজেপি ভোট পেতে পারে ৩৭.৭ শতাংশ। সপা ৩৬.৭ শতাংশ, বিএসপি ১২.৪ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৭.৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। অর্থাৎ নতুন ভোটদাতাদের মধ্যে বিজেপি এবং সপাকে ভোট দানের হার সমান সমান।
বিজেপিকে হিন্দুত্ববাদের দল হিসেবেই দেখা হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি বিজেপি প্রধানত উচ্চবর্ণের দল। তার প্রতিফলন উত্তর প্রদেশের ভোটেও দেখা যেতে পারে বলে এই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। গত নির্বাচনেও তা প্রকট হয়েছে। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভোটের নিরিখে বিজেপি পেতে পারে ৭২.৫ শতাংশ। সপা ১৫.৮ শতাংশ, বিএসপি ৪.৭ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৪.৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে। হিন্দু উচ্চবর্ণের ভোটের ক্ষেত্রে বিজেপি এবং সপার মধ্যে ব্যবধান লক্ষ্যণীয় হতে পারে। কারণ সপা সংখ্যালঘুদের দল হিসেবেই পরিচিত। ওবিসি ভোটের নিরিখে বিজেপি পেতে পারে ৪৬.৬ শতাংশ। সপা ৩৯.৯ শতাংশ, বিএসপি ৫.৩ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৫.১ শতাংশ ভোট পেতে পারে। গতবারও বিজেপি দলিতদের সমর্থন পেয়েছিল। এইবারও সেই ধারা বজায় রাখার ইঙ্গিত মিলেছে বুথ ফেরত সমীক্ষায়।
দলিতদের ভোটের নিরিখে বিজেপি পেতে পারে ৩৯.৫ শতাংশ। সপা ২১.৪ শতাংশ, বিএসপি ২৮.৪ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৭.৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে দলিতদের বিএসপির ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকত। সেখানে বিজেপির ঝুলিতে দলিত ভোটের একটা বড় অংশ যেতে পারে বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। মহিলাদের ভোটের নিরিখে বিজেপি পেতে পারে ৪৪.৯ শতাংশ। সপা ৩৫.১ শতাংশ, বিএসপি ১১.২ শতাংশ এবং কংগ্রেস পেতে পারে ৫.৭ শতাংশ। এক্ষেত্রেও বিজেপির উপর মহিলারা ভরসা রাখতে পারে। এইবারের উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে মহিলা ভোটের একটা গুরুত্ব ছিল। কারণ ভোটের আগে হাথরস, উন্নাওয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। সেখানে কংগ্রেস এইদিক থেকে প্রচারে জোর দিয়েছিল। তাদের নির্বাচনী প্রচারে স্লোগান উঠেছিল, “লড়কি হু, লড় সকতি হু”। কিন্তু ভোটবাক্সে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের কোনও প্রতিফলন হতে নাও পারে বলেই জানা গিয়েছে। হাথরস কাণ্ডকে ঘিরে দলিত এবং মহিলা ভোটকে নিজেদের ঝুলিতে আনতে বিরোধীরা প্রচার চালিয়েছিল। তবে এই বুথ ফেরত সমীক্ষায় সেই প্রচারের প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায়নি। যোগীতেই ভরসা রেখেছে দলিত এবং মহিলা ভোটাররা। প্রকৃত ফলাফলে কী ছবি উঠে আসে সেটাই দেখার। উত্তর প্রদেশের ৪০৩ টি আসনের পুরুষদের ভোটের নিরিখে বিজেপি পেয়েছে ৩৮.১ শতাংশ। সপা ৩৪.৭ শতাংশ। বিএসপি ১৬.৪ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৭.৬ শতাংশ।
উত্তর প্রদেশে লড়াইয়ের ময়দানে সামনের সারিতে ছিল বিজেপি, সপা এবং কংগ্রেস। মায়াবতীর বিএসপিকে প্রথম দিকে অতটা নির্বাচনী ময়দানে দেখা যায়নি। পরে অবশ্য মায়াবতীকে ময়দানে দেখা গিয়েছে। উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের এইবার মূল ফোকাস ছিল পশ্চিম উত্তর প্রদেশ। পশ্চিম উত্তর প্রদেশ জাট এবং জাটভ অধ্যুষিত। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে প্রধানত কৃষকদের জনসংখ্যা বেশি। এই পশ্চিম উত্তর প্রদেশ সাধারণত বিজেপির গড় হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এক বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এই অঞ্চলের জাটরা। তাই অনুমান করা হয়েছিল বিজেপির গড়ে এইবার প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে রাষ্ট্রীয় লোক দলের নেতা জয়ন্ত চৌধুরীর প্রভাব অনেকটাই। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল সপা। এইবার সপা রাষ্ট্রীয় দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন লড়ার ঘোষণা করার পরে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে টিভি৯ নেটওয়ার্কের বুথ ফেরত সমীক্ষায় উঠে এসেছে টানা দ্বিতীয়বারের জন্য মসনদে বসতে পারে বিজেপিই।
* ইহা একটি সমীক্ষা মাত্র। ভোটারদের মতামত নিয়ে ফলাফলের একটি আভাস পাওয়া যায় এই সমীক্ষা থেকে। তবে এই সমীক্ষার যে বাস্তবে প্রতিফলন হবেই তা টিভি৯ নেটওয়ার্ক দাবি করে না।
আরও পড়ুন : Russia-Ukraine Conflict: ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরতে নারাজ ভারতীয় চিকিৎসক, কারণ জানলে অবাক হবেন…