২০১৬-র তুলনায় ১০ সংখ্যালঘু প্রার্থী কম তৃণমূলের তালিকায়, নেপথ্যে কি বিজেপির চাপ!

২৯১ আসনের সেই তালিকায় এ বার ৪৭ জন সংখ্যালঘু (Minorities) প্রার্থী দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যা গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় ১০ জন কম। প্রত্যাশিত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন এই সিদ্ধান্ত?

২০১৬-র তুলনায় ১০ সংখ্যালঘু প্রার্থী কম তৃণমূলের তালিকায়, নেপথ্যে কি বিজেপির চাপ!
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 06, 2021 | 1:44 AM

কলকাতা: একুশের যুদ্ধে বিজেপির (BJP) ‘হিন্দুত্বের তাস’ কি তবে পরোক্ষে চাপ বাড়িয়ে বাড়িয়েছে শাসকদলের উপর? বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা দেখে এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশ। কেননা, ২৯১ আসনের সেই তালিকায় এ বার ৪৭ জন সংখ্যালঘু (Minorities) প্রার্থী দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যা গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় ১০ জন কম। প্রত্যাশিত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন এই সিদ্ধান্ত? যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, গেরুয়া শিবিরকে ‘মেরুকরণের’ ফায়দা তুলতে বাধা দিতেই এই সিদ্ধান্ত।

রাজ্যের ২৯৪ টি আসনের মধ্যে পাহাড়ের তিনটি আসন ছেড়ে ২৯১ আসনে এ দিন প্রার্থী ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী। অন্যান্য ভোটের মতো এ বছরের ভোটেও সবার আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। ২০১১ সালে যে বছর তৃণমূল ক্ষমতায় আসে, সে বছর নির্বাচনে ৩৮ জন মুসলিম প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালে একধাক্কায় সেটা বেড়ে হয়ে যায় ৫৭। এ বার ১০ কমে তা দাঁড়াল ৪৭-এ। মোট প্রার্থীদের মধ্যে শতকরা হারের নিরিখে যা ১৬ শতাংশ।

এ রাজ্যের নির্বাচনে সংখ্যালঘু ফ্যাক্টর যে বড় ভূমিকা নেয় তা নিয়ে কোনও সময়ই সংশয় ছিল না। কারণ ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এমন ১২৫ টি বিধানসভা আসন রয়েছে যেখানে ২০ শতাংশর বেশি সংখ্যালঘু মানুষ বসবাস করেন। রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলায় কমপক্ষে ১ জন করে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। বাকি ১০ জেলায় তাদের কোনও সংখ্যালঘু প্রার্থী নেই।

অবশ্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলোয় অধিক সংখ্যক সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার রেওয়াজ অব্যাহত বজায় রেখেছে শাসকেরা। ২০১১ সালের জনগণনা বলছে, উত্তর দিনাজপুর, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ, রাজ্যের এই তিন জেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ। উত্তর দিনাজপুরে জনসংখ্যার ৪৯.৯২ শতাংশ মুসলিম। সেই মতো জেলার ৫৬ শতাংশ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। মালদহে মোট জনসংখ্যার ৫১.২৭ শতাংশ মুসলিম। জেলার ৩৩ শতাংশ আসনেই সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। আবার মুর্শিদাবাদে জনসংখ্যার ৬৬.২৭ শতাংশ মুসলিম। তাই জেলার ৬৮ শতাংশ আসনেই সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে ঘাসফুল শিবির।

২০১৬ সালে তৃণমূল যে বিধানসভা আসনগুলিতে জয়লাভ করেছিল তার মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। ২০১৯ সালে সেই হার আরও বেড়ে যায়। তৃণমূলের এগিয়ে থাকা বিধানসভা আসনগুলির মধ্যে ৫৬ শতাংশই আসনই দেখা যায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। ফলে ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার চাহিদায় শাসকদলের একাধিক পদক্ষেপকে ‘তোষণের রাজনীতি’ বলেই অ্যাখা দেয় বিজেপি।

পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের আধার যে অনেকটাই মজবুত তা পরিষ্কার। তা সত্ত্বেও কৌশলগত কারণেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এ বার তার প্রতিফলন সেভাবে নেই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: ‘ভোট কাটুয়া’ তকমা এড়াতে নন্দীগ্রামে কি অ-মুসলিম প্রার্থী দেবে আইএসএফ

তৃণমূলের ওপর সংখ্যালঘু সমাজের এই আস্থা অবশ্য আচমকা তৈরি হয়নি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ক্রমশ বামেদের ছেড়ে তৃণমূলের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেন। গত দুই লোকসভা ও বিধানসভা ভোটেও তার হাতে গরম প্রমাণ মিলেছে। এ বারও বিধানসভা ভোটের কঠিন লড়াইয়ে মুসলিম ভোটাররাই ঘাসফুল শিবিরের বড় ভরসা বলেই মনে করছেন সেফোলজিস্টরা। কিন্তু, সেখানে ভাগ বসানোর আশঙ্কা বাড়িয়ে রেখেছে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ এবং আসাদউদ্দিন ওয়েইসির মিম। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বিজেপি লাগাতার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘তোষণের রাজনীতির’ অভিযোগ তুলছে। সেই কারণেই কি তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় সংখ্যালঘু প্রার্থীদের আধিক্য কমে গেল? রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তোষণের অভিযোগ তুলে, মেরুকরণের ফায়দা যাতে বিজেপি না নিতে পারে, সেদিকে তাকিয়েই এই কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

আরও পড়ুন: তালিকায় ৫০ মহিলা, বাংলার ‘নিজের মেয়ে’দের উপরেই আস্থা তৃণমূলের