‘ভোট কাটুয়া’ তকমা এড়াতে নন্দীগ্রামে কি অ-মুসলিম প্রার্থী দেবে আইএসএফ

আগেই বামেরা জানিয়ে দিয়েছিল নন্দীগ্রাম আসনটি আইএসএফ-কে ছাড়া হবে। কিন্তু আইএসএফ আবার যদি সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটাকাটি করে গেরুয়া শিবিরের সুবিধা করে দেয়, সেক্ষেত্রে অস্বস্তি বাড়বে বাম-কংগ্রেস উভয়েরই। তাই এ নিয়ে ঘণীভূত হয়েছে জট।

'ভোট কাটুয়া' তকমা এড়াতে নন্দীগ্রামে কি অ-মুসলিম প্রার্থী দেবে আইএসএফ
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 06, 2021 | 1:47 AM

কলকাতা: একুশের বঙ্গযুদ্ধে (West Bengal Assembly Election 2021) সব থেকে নজর কাড়া কেন্দ্র নন্দীগ্রাম (Nandigram)। বাংলার বিগত এক যুগের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে ইতিমধ্যে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এর উপর শুক্রবার স্পষ্ট হল, কেবল নন্দীগ্রাম থেকেই এবার প্রার্থী হবেন মমতা। এদিকে, আবার নন্দীগ্রামেই বিজেপি-র টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছেন একদা মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক তথা নন্দীগ্রামের শেষ বারের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। এর আগেই বামেরা জানিয়ে দিয়েছিল নন্দীগ্রাম আসনটি আইএসএফ-কে ছাড়া হবে। কিন্তু আইএসএফ আবার যদি সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটাকাটি করে গেরুয়া শিবিরের সুবিধা করে দেয়, সেক্ষেত্রে অস্বস্তি বাড়বে বাম-কংগ্রেস উভয়েরই। তাই এ নিয়ে ঘণিভূত হয়েছে জট।

মাসকয়েক আগেই শেষ হওয়া বিহার বিধানসভা ভোটে মুসলিম ভোট কেটে বিজেপি তথা এনডিএ-র সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল এআইএমআইএম-র বিরুদ্ধে। সঙ্গে জুটেছিল ‘ভোট কাটুয়া’ এবং ‘বিজেপির বি টিম’-এর মতো তকমা। একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলায় বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ (ISF) জোটকেও যাতে একই নামে না দেগে দেওয়া হয়, তার জন্য নন্দীগ্রামের আসনের জন্য পৃথক পরিকল্পনা করছে তিন দলই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, প্রথম দুই দফার নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হলেও নন্দীগ্রামের প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য নিজেকে নন্দীগ্রামের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। বিজেপির হয়ে শুভেন্দু অধিকারীই তাঁর বিরুদ্ধে লড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন বলে খবর বিজেপি সূত্রে। ফলে ভোটের লড়াই যে কাঁটায় কাঁটায় হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে এই লড়াইয়ে রং বদলে যেতে পারে সংযুক্ত মোর্চার অন্যতম শরিক আইএসএফ যদি সেখানে হেভিওয়েট কোনও সংখ্যা লঘু প্রার্থী দেয়। প্রাথমিকভাবে সেরকম পরিকল্পনাই করা হয়েছিল জোট নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। তবে ভোট কাটুয়া ও ‘বিজেপির বি টিম’ তকমা এড়াতে এখন নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে ত্রিপাক্ষিক জোটকে, এমনটাই খবর সূত্রের।

দিনকয়েক আগেও শোনা গিয়েছিল, নন্দীগ্রামে সিদ্দিকি পরিবারের কাউকে প্রার্থী করতে পারেন আব্বাস। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকির নাম। এই ভাবনার কারণটা স্পষ্ট। নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘু ভোটের হার প্রায় ৩৮-৪০ শতাংশ। এই বিরাট সংখ্যক মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যে প্রার্থীর দিকে ঝুঁকবেন, তাঁর জয়ের সম্ভাবনাও যে বেড়ে যাবে সেই বিষয়টাও দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। তাই মমতা-শুভেন্দুর দ্বৈরথে আইএসএফ-র হাত ধরে কোনও সংখ্যালঘু বড় মুখকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী না করার বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে আলিমুদ্দিন। সূত্রের খবর, আইএসএফ-কে বলা হতে পারে নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘু প্রার্থীর বদলে অমুসলিম প্রার্থী দেওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়ছেন দীনেশ বাজাজ! সাক্ষাৎ করবেন মুকুলের সঙ্গে

জানা যাচ্ছে, এই নন্দীগ্রামের আসন নিয়েই আরেকদফা বৈঠক শুরু হয়েছে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ-র মধ্যে। সেকুলার ফ্রন্টের সভাপতি শিমল সোরেন জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখানে আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে সংযুক্ত মোর্চাকে। তা হল, সেখানে কোনও আনকোরা ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হলে মমতাকে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠতে পারে আবার। সেই অভিযোগও এড়াতে আপাতত ঠিক করা হয়েছে, কোনও অমুসলিম ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা হবে।

তবে কোন দল সেই প্রার্থী দেবে তা নিয়ে জট রয়েছে। সিপিআই ও কংগ্রেস হাত তুলেই রেখেছে এ বিষয়ে। নন্দীগ্রামের আসনে দেওয়ার মতো তাদের কোনও ওজনদার প্রার্থী নেই, এমনটাই খবর সূত্রের। ফলে সিপিএমের কোনও হেভিওয়েট বা আইএসএফ-র অমুসলিম কাউকে এই আসনে লড়তে দেখা যেতে পারে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যত্র নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের পরিস্থিতি তৈরি হলেও, জাতীয় স্তরে ভাবমূর্তি রক্ষার দায়ে নন্দীগ্রামে তা করতে চাইছে না সংযুক্ত মোর্চা।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ফের চাঁদের হাট, সায়নী-কাঞ্চন-রাজ কে কোন কেন্দ্রে?