সিঙ্গুর: নন্দীগ্রামের মত বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতার আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র সিঙ্গুরও। এবার নজির গড়ে নন্দীগ্রামে লড়ছেন মমতা। এবার নন্দীগ্রামের ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল নেত্রী বললেন, সিঙ্গুর থেকে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি বুধবার সিঙ্গুরের জনসভা থেকে মমতার মুখে শোনা গেল মাস্টারমশাইয়ের নাম। বললেন, ‘আমি ভেবে পাই না, মাস্টারমশাই কী করে বিজেপির হয়ে দাঁড়ালেন?’
তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে অভিমানেই দল ছাড়েন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। দল বদল করার পর সেই সিঙ্গুর থেকেই বিজেপি টিকিট দেয় তাঁকে। মমতার দাবি, এ ভাবে ধার করেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘বেচারা মাস্টারমশাইকে কোথায় একটু পা টিপে দেবে, গায়ে তেল মালিশ করে দেবে, সিদ্ধ ভাত রেঁধে দেবে তা নয় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গরমের মধ্যে। কষ্ট হচ্ছে না লোকটার?’ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কথাও এ দিন বলেন তিনি। বলেন, বেচারা একজন সাংসদ, ভোটে লড়ছেন বিধায়ক পদের জন্য। মতার কথায়, ‘ছিল বাঘ, হয়ে গেল বিড়াল, এবার ইঁদুর হয়ে যাবে।’
সিঙ্গুরের সভায় মমতার গলায় স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনের স্মৃতি ফিরে আসে এ দিন। মা-বোনেরা যে ভাবে আন্দোলনে সাহায্য করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদও জানান তিনি। তাঁর দাবি, সেই সময় যাঁরা সব থেকে বেশি অত্যাচার করেছিল, তারাই আজ বিজেপিতে। এ কথা বলেই মাস্টারমশাই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না, মাস্টারমশাই কী করে বিজেপির হয়ে দাঁড়ালেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘মাস্টারমশাইকে আমি সম্মান করি। আমি তো ওনাকে চার বার জিতিয়ে নিয়ে এসেছি।’ এমনকি টিকিট না দিয়ে উপদেষ্টা করার জন্য তিনি নিজে মাস্টারমশাইকে আবেদন জানিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, আমি নিজে বলেছিলাম মাস্টারমশাই আপনি সবার থেকে বড়। আপনাকে কোনও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান করে দেব। সেখানে থেকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন আপনি।
প্রার্থী বেচারাম মান্নাকে পাঁচ বছরের জন্য কাজ করতে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, মাস্টারমশাইকে অন্য কেন্দ্র থেকে লড়ার জন্য বেচারামকে বোঝাতে বলেছিলেন তিনি। তিনি নিজে লড়তে চেয়েছিলেন সিঙ্গুর থেকে। কিন্তু বেচারাম তাঁকে বলেছিলেন, মাস্টারমশাই শুনবেন না। নন্দীগ্রামের মতো সিঙ্গুরের জন্যও যে তাঁর সমান আবেগ ছিল সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশে বলেন, বাড়িতে থেকে সম্মান বাঁচান, সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন। এবারের নির্বাচনে আপনিও বেচাকে আশীর্বাদ করুন।
ভোটে টিকিট না পেয়েই দল ছাড়েন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই বেচারাম মান্নাকে নিয়ে তাঁর অসন্তোষ সামনে আসছিল। অনেক ক্ষেত্রে মমতাকেও হস্তক্ষেপ করতে হয় সমস্যা মেটাতে। এবার অবশ্য বয়সের অজুহাতে বাদ পড়েন ৮৮ বছর বয়সী মাস্টারমশাই। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ২০ হাজার ভোটে জিতে চতুর্থবারের জন্য সিঙ্গুরের বিধায়ক হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: রাত পোহালেই ভোট, নন্দীগ্রামে জারি হল ১৪৪ ধারা
এ দিন সিঙ্গুরের লড়াইয়ের ইতিহাস ঘেঁটে মমতা বলেন, ইসলামপুর থেকে ফেরার সময় ডানকুনিতে তাঁর গাড়িতে হামলা হয়েছিল। চরম অসম্মানিত হয়েছিলেন তিনি। এরপরই জীবন বাজি রেখে শুরু করেন আন্দোলন। সেই সময় কারও পরামর্শে সন্তোষি মায়ের ব্রত শুরু করেন মমতা। পরে আন্দোলনে সফল হওয়ায় পরে সিঙ্গুরে সেই সন্তোষি মায়ের মন্দির তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।