Chanchal Chowdhury: ‘ভুলে যান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ’, ওপার বাংলায় চঞ্চলকে বয়কটের ডাক
Controversy: উত্তরে চঞ্চল যা বলেন, তাতেই এবার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে গরম। বাংলাদেশে একশ্রেণি তুলছেন চঞ্চল চৌধুরী বয়কটের ডাক। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে তাঁকে পড়াচ্ছেন মুক্তি যুদ্ধের পাঠ।

বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত অষ্ট্রেলিয়া যুদ্ধ, যেখানে শেষ হাসি হাসে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের এই হারে কিংবা অস্ট্রেলিয়ার জয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সামনে আসতে থাকে সেদিন সন্ধ্যে থেকেই। তালিকা থেকে বাদ পড়েনি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। তবে সেখানে বেশ কিছু ছবি এমনই চোখে পড়ে, যেখানে ভারতের হারে আনন্দ উৎসব ফ্রেমবন্দি হয়। এই মর্মেই মুখ খুলেছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। দুই বাংলার বড় প্রিয় তিনি। চুটিয়ে কাজও করছেন। সেদিন বাংলাদেশের সেই উচ্ছ্বাসের ছবিটা তিনি কীভাবে দেখছেন, প্রশ্ন করা হয়েছিল আজতক বাংলা থেকে। তার উত্তরে তিনি যা বলেন তাতেই এবার পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে গরম। বাংলাদেশে একশ্রেণি তুলছেন চঞ্চল চৌধুরী বয়কটের ডাক। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে তাঁকে পড়াচ্ছেন মুক্তি যুদ্ধের পাঠ।
সেদিন ঠিক কী বলেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী?
bangla.aajtak.in-কে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে অনেকে ভারত বিদ্বেষী আছে এটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। এটা বাস্তব। সব দেশেই এমন থাকে। বাংলাদেশেও আছে। তবে এটা বাংলাদেশের সার্বিক ছবি নয়। আর যারা ভারত বিদ্বেষী তাদের তো জনে জনে গিয়ে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে, ভারতকে সাপোর্ট করো।’
‘একটা দেশে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ আছে। বাংলাদেশের বহু মানুষ এখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, অনেকে আবার সমর্থনও করে। আবার ভারত পাকিস্তান খেলা হলে অনেকে পাকিস্তানকেও সমর্থন করে। তবে আমার মনে হয়, এটা গোটা বাংলাদেশের ছবি নয়। যারা ভারত বিরোধী তারা ইন্ডিয়ার সমর্থন করেনি। এমন নয় যে বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষই ভারত বিদ্বেষী। তাই এমন আচরণ করেছে।’
চঞ্চল চৌধুরী আরও জানান, ‘এটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষীর সংখ্যা কম নয়। সেটা রাজনীতি হোক বা খেলাধুলো, সবক্ষেত্রেই। উল্টোদিকে বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ ভারতের সিনেমা ভালোবাসে, মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে মনে রাখে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে মনে রাখে না, তারা বংশ পরম্পরায় ভারত বিরোধী। তারা সব সময় পাকিস্তানের পক্ষে।’
তাঁর কথায়, ‘আমি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নই, ফলে এটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এসব নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা বলতে পারবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, ইন্ডিয়ার হারার ফলে যে ঘটনা বাংলাদেশে হয়েছে, তা একটা অংশের উচ্ছ্বাস। এটা বলতে পারি না, কাল যে ঘটনা ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের সব অংশের মানুষ সমর্থন করেছেন। আমি এমন অনেককে দেখেছি, যারা ভারতকেও সমর্থন করেছে। তারা ভারতের হারে কষ্ট পেয়েছে।’
এদিন তাঁর কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট আক্ষেপের সুর, ‘খেলাকে আর মানুষ শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছে না। এটা আমার খারাপ লাগে। খেলাতে হারজিত থাকবেই। তবে তা নিয়ে যে হিংসার ছবি সামনে আসে তা কাম্য নয়। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলোয়াড়রা এক সময় হয়তো বাংলাদেশের নামও জানত না। এখন হয়তো জানে। আমরা ফুটবল বিশ্বকাপে খেলিও না। অথচ দেখবেন, ওই দুই দলের খেলা হলে বাংলাদশে হিংসার ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে। মারধর, জামা-জার্সি ধরে টানাটানি চলতেই থাকে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে। এটা তো কাম্য নয়।’ এই মন্তব্যের পরই শোরগোল পড়ে যায় নেট দুনিয়ায়। চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে বচসা তুঙ্গে।
নেটপাড়ার প্রতিক্রিয়া–
কেউ লিখলেন, আপনি হয়তো বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে কোনটা প্রেম আর কোনটা বিদ্বেষ!! ভারত বিদ্বেষী হতে গেলেই যে পাকিস্তান প্রেমী হতে হবে সে থিউরী আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমি মনে করি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিই এখন ভারত বিদ্বেষী। যার ভিতরে নূন্যতম দেশ-প্রেম আছে সে কখোনোই ভারত-প্রেমী হতে পারে না। বরং বাংলাদেশি হয়ে যাদের মধ্যে ভারত-প্রীতি বেশি, বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরীর মতো লোকেরা, তারা ঠিক ঐ প্রজাতীর মধ্যেই পড়ে, যেই প্রজাতীর মধ্যে ৭১ সালে পাকিস্তান প্রীতি ছিল।
আবার লাইভে এসে বললেন, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের পরাজয়ের পর বাংলাদেশের মানুষ আনন্দ উল্লাস করায় অনেকের মনেই এখন ভারত বিদ্বেষ নিয়ে #চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। আমার কথা হল, বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করাকে কি কখনোই #ভারত বিদ্বেষ বলা যায়?
কারও কথায় আবার চঞ্চল চৌধুরীরা ভুলে যান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষেরা স্বাধীন। খেলায় প্রতিবেশী দেশকে সমর্থন করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদিও এই প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্যই করেননি চঞ্চল চৌধুরী।
