আমি যে পাড়ায় থাকি, লেক গার্ডেন্সে সন্ধ্যাদির বাড়িও অনেকটা কাছাকাছি। আমার সঙ্গে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পরিচয় হয়, তখন আমি অনেক ছোট। সলিল চৌধুরির মারফতই আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। সলিল চৌধুরির একটি অনুষ্ঠানের জন্য উনি এসেছিলেন এইচ এম ভির রিহার্সল রুমে। লেক মার্কেটের কাছে ছিল সেই রিহার্সল রুম। ইন্দোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের জন্য বাংলার সমস্ত তাবড় তাবড় শিল্পীরা একত্রিত হয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানেরই রিহার্সলের কথা বলছি।
সেই প্রথম দিনের রিহার্সলের কথা আমার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। ঘরে ঢুকতেই সলিল চৌধুরি বলে উঠলেন, সন্ধ্যা এসো। কেমন আছ? এই প্রশ্নে তাঁর উত্তর, সলিলদা কয়েকদিন শরীরটা ভাল ছিল না। আমি তো ভাবছিলাম আসতে পারব কিনা! কিন্তু জানো তো গানের টানেই কীরকম চলে এলাম। শুধু তাই নয় তিনি বললেন, যখন গান গাই , জানো তো সলিলদা তখন মনেই হয় না বয়স হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সলিলদার উত্তর, সেই কারণেই তো আমরা চির যৌবন। এই বলে সলিলদা হাসতে লাগলেন।
সন্ধ্যাদির এত এত গানের মধ্যে ‘যদি নাম ধরে তাকে ডাকো’ আমার অন্যতম প্রিয় গান। সন্ধ্যাদি সম্পর্কে সবাই বলে, উনি ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তা তো বটেই, তবে আমার এরও একটা কথা মনে হয়, উনি অসম্ভব ভাল একজন মানুষ ছিলেন। সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে তো বটেই,ওঁনার সঙ্গে সমস্ত মিউজিশিয়ানদের ভাল সম্পর্ক ছিল। সকলকে তিনি ভালবাসতেন। সবাই নিজের ভাই বলে পরিচয় করাতেন। ওঁনার এক স্নিগ্ধ, আনন্দময়ী ব্যক্তিত্ব ছিল। শিল্পী সন্ধ্য়া মুখোপাধ্যায় এবং মানুষ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দুইই অনন্য। এই অতুলনীয় শিল্পীকে আর পাবো না। কিন্তু তাঁর গান থেকে যাবে। তাঁর ভদ্র ব্যবহার, সৌজন্যতা, স্নিগ্ধতা যেন আমরা শিখতে পারি।
আরও পড়ুন- Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান