শিল্পীর চেয়েও মানুষ হিসেবে বেশি সমাদর করি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। ওঁর গান সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। ওঁর মতো গায়ক শতাব্দিতে কম আসেন। তাই সেই গান নিয়ে আলোচনা করা আমার কাছে ধৃষ্টতা। আর এরকম একজন মানুষ পাওয়াও খুবই বিরল। এত বছর ধরে একই রকম মানুষ ছিলেন। মানুষের তো পরিবর্তন হয়। কিন্তু তাঁর পরিবর্তন হয়নি। সকলের সঙ্গে সমান ব্যবহার করতেন। কোনও শিল্পীর মধ্যে বিভেদ করেননি। ছোট শিল্পী, বড় শিল্পী… সকলেই ওঁর কাছে সমান ছিলেন। সকলের মাথার উপর সমানভাবে হাত রেখেছিলেন। যে কোনও সময় যে কোনও প্রয়োজনে ওঁকে চাইলেই পাওয়া যেত। আমরা আজ গায়ক-গায়িকা হিসেবে একজন অভিভাবককে হারালাম। তিনি সারাক্ষণই মাথার উপর হাত রেখে গিয়েছেন।
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে, পরিবারের কেউ আজ চলে গিয়েছেন। প্রত্যেক মাসেই ১-২বার কথা হত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও ফোন করে একদিন বললেন, ‘আমার দু’টাকার ফোন। আমি তো হোয়াটসঅ্যাপ বুঝি না। তোমাকে আমি আমার দুটো গান পাঠাচ্ছি। আমাকে তুমি শুনে বলবে কেমন লাগল?’ আমি অপ্রস্তুত। বললাম, ‘আপনি কী বলছেন… আপনি আমাকে গান পাঠাবেন, আর আমি শুনে মতামত দেব!?’ তারপর নাতনির ফোন থেকে পাঠিয়েছিলেন।
…এটাই আমার পাওয়া। মাঝে মধ্যেই ফোন করে বলতেন, এটা শোনাও, ওটা শোনাও। আমার গুরুজির গান শুনতে চাইতেন। আমাকে বলতেন বারোটার পরে ফোন করে গান শুনিও। এরকম আরও অনেক অনেক স্মৃতি আজ ভিড় করে আসছে। আমার বাড়িতে এসেছেন। আমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে মায়ের সঙ্গে গল্প করতেন। আমার মায়ের এখন ৯১ বছর বয়স। মায়ের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল। আমি আজ চিন্তা করছি, এই খবর পেয়ে মায়ের মনের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাবে!
আমার মাকে ফোন করে বলতেন পুরনো কথা ভাববেন না, সামনের দিকে তাকান। দেখুন আমি ৯০ বছর বয়সেও কত রেওয়াজ করি। আমরা শিল্পার জীবনে অনেককিছুর সঙ্গে আপস করি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে সেই আপস করতে দেখিনি কখনও। এটাই আমি ওঁর কাছ থেকে শিখলাম।
আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান