Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Valentine’s Day: লিঙ্গ-মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীর ভালবাসার রামধনু যেন হার মানায় ‘বধাই দো’র চিত্রনাট্যকেও

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে প্রেম কিন্তু নিষিদ্ধ নয়। ভালবাসার জন্যই টিকে থাকে ভালবাসা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দুজন ছেলের মধ্যেও ভাল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু প্রেমে কমিটমেন্টের সুযোগ থাকে কি? উল্টো প্রশ্ন তুললেন বাপ্পাদিত্য...

Valentine's Day: লিঙ্গ-মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীর ভালবাসার রামধনু যেন হার মানায় 'বধাই দো'র চিত্রনাট্যকেও
যেখানে ভালবাসার রামধনু যেন হার মানায় 'বধাই দো'র চিত্রনাট্যকেও
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 14, 2022 | 11:53 AM

মাঘের শেষে বসন্তের আলতো ছোঁয়ায় সবে বদলাতে শুরু করেছে প্রকৃতির রং। ঝরা পাতা উড়ে জড়ো হয়েছে মাঝ রাস্তায়। শুকনো ডাল এখন নতুন কুঁড়ি আসার অপেক্ষায়। এমন দিনেই তো ধরা দেয় প্রেম! যদিও প্রেমের জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন নেই, ক্ষণ নেই, নেই কোনও শুভ তিথি। তবুও প্রেম তাঁর ধর্ম, তিনি বাঁচেন প্রেমে। প্রেম পুজোর সাতটা দিনের এখানেই ইতি। কিন্তু প্রেম উদযাপনের জন্য তো আর কোনও ছুতো লাগে না! তবুও আমরা এখনও অভ্যাসের ভিড়ে মিশে কিছু মানুষের গায়ে সেঁটে দিই ‘প্রান্তিক’-এর তকমা। আর সেই মানুষদের আলোর রাস্তায় ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে মেইনস্ট্রিম-এর সঙ্গে তার সহাবস্থানের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এক সোশ্যাল কমিউনিকেটরের নাম বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। লিঙ্গ ও এলজিবিটিকিউআই+ অধিকার নিয়ে সোশ্যাল কমিউনিকেটর হিসেবে মিলেনিয়ালদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ স্থাপন করে চলেন নিজের সংস্থা ‘প্রান্তকথা’র বিবিধ কার্যকলাপের মাধ্যমে। ‘প্রান্তকথা’র প্রাণপুরুষ আজ আলাপ করালেন ‘প্রেমিক বাপ্পাদিত্যর’ সঙ্গে। শোনালেন তাঁর প্রেমজীবনের গল্প…

Bappadittya-inside

এরি সখী মোরে পিয়া ঘর আয়ে… বহুবার প্রেম এসেছে তাঁর জীবনে। প্রথম প্রেম কলেজে। কলেজের এক জুনিয়রের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম ৪ বছর। ব্যস… তারপর সেই প্রেমের ওখানেই ইতি। কিন্তু ইউনিভার্সিটি-তে গিয়ে সেই তালিকাটা আরও লম্বা হল। বন্ধুরা খানিক আড়চোখে দেখল। তবে এখানেই থেমে থাকেনি প্রেম। কখনও তাঁর প্রেম হয়েছে বন্ধু ট্রান্স-মহিলার সঙ্গে। আত্মীয়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে তাঁদের ছবি দেখে বাহবাও দিয়েছেন। আবার সদ্য সোশ্যাল মিডিয়া মারফত প্রেম প্রস্তাব এসেছে তাঁর থেকে প্রায় ২০ বছরের ছোট এক যুবকের থেকে। প্রেমে পড়লেও বিয়েতে তাঁর ঘোরতর আপত্তি। অনেক ঝামেলা-লড়াই করে বাড়িতে বুঝিয়েছেন বিয়ে না করার সিদ্ধান্তের কথা। বাপ্পাদিত্যর কথায়,”বিয়ে মানেই সেখানে সম্পর্ক বা ভালবাসার আর কোনও নিজস্বতা থাকে না। প্রতিটা নিয়ম, আচার-অনুষ্ঠান আমাদের উপর একরকম জোর করেই চাপিয়ে দেওয়া। মা-বাবার বয়স হচ্ছে, আর তাই তাঁদের দায়িত্বভার নিতে হবে বলেই বিয়ে করা। বিয়ের পর সন্তানের জন্ম দেওয়াটাও যেন অবশ্য কর্তব্য। কোথাও গিয়ে তখন যেন ফিকে হয়ে যায় দু’টি মানুষের ভালবাসা।” তবুও প্রেম তাঁর সহজাত। প্রেম বিনে প্রাণ বাঁচেনা।

ভালবাসা মানে এলো চুল মাতোয়ারা… বাপ্পাদিত্যের মা ছিলেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। আর তাই মায়ের কড়া নির্দেশ ছিল সরস্বতী পুজোয় স্কুলের ত্রিসীমানায় তাঁর কোনও ছাত্রীর সঙ্গে ছেলেকে যেন না-দেখা যায়। তবুও মা শিক্ষিকা হওয়ার সুবাদে স্কুলে অবারিত দ্বার ছেলের। স্কুল ছুটির পরে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন একসঙ্গে বাড়ি ফিরবেন বলে। আবার কখনও প্রয়োজনে। সহপাঠীরা ভাবত ‘বন্ধু বুঝি হাতে চাঁদ পেয়েছে’। কিন্তু বন্ধু কোনওদিনই বিশেষ কোনও সুবিধে করে উঠতে পারেননি। তবে নিয়ম তিনি ভেঙেছিলেন। জীবনের প্রথম প্রেম মায়ের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীর সঙ্গেই।

হবে এক মিষ্টি মধুর প্রেমের উপাখ্যান… তবুও তাঁর শেষ কথা হল প্রেম। প্রেমেই তিনি সাবলীল। প্রেম ছাড়া জীবন! ভাবতেই পারেন না। আর তাই বাস্তবে এক্কেবারে ‘প্রেমিক’ মানুষ বাপ্পাদিত্য। বন্ধুত্বের সুন্দর সম্পর্কেও তিনি খুঁজে পান প্রেম। প্রেমে কখনওই বাধা হতে পারে না বয়স, লিঙ্গ, যৌনতা, ধর্ম। প্রেম অনেক বেশি উদার। সমাজ বাঁচুক প্রেমেই এমনটাই স্বপ্ন দেখেন তিনি।

তোমার আমার লাল-নীল সংসার… লিঙ্গ ও এলজিবিটিকিউআই+ অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব বাপ্পাদিত্য। আজ প্রচুর ছেলেমেয়ের কাছে আশ্রয়ের নাম তিনি ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রান্তকথা’। কিন্তু কোথাও গিয়ে, প্রেমের কথা সগর্বে ঘোষণা করতে কি ভয় পান তাঁরা? উত্তরে বাপ্পাদিত্য বলেন, “এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের মানুষদের ভালবাসার কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় কোথায়? তাহলে এত-এত ছেলেমেয়ের ভিটেমাটি ছাড়ার প্রয়োজন পড়ত না। শুধু আইন পাস হয়েছে। বদল আসেনি মানসিকতায়। আমাদের সমাজে প্রেম, বিয়ে এবং পরিবারই হল শেষ কথা। সমাজ-পরিবার এ ব্যাপারে একটু সহনশীল হলে রবি-বিনন্দনকে প্রাণের ভয়ে ঘর ছাড়তে হত না।”

কে প্রথম কথা দিয়েছি… একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে প্রেম কিন্তু নিষিদ্ধ নয়। ভালবাসার জন্যই টিকে থাকে ভালবাসা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দু’জন ছেলের মধ্যেও ভাল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু প্রেমে কমিটমেন্টের সুযোগ থাকে কি? উল্টো প্রশ্ন তুললেন বাপ্পাদিত্য। তাঁর প্রশ্ন, “এই কমিটমেন্টের পরিস্থিতি আদৌ থাকে কি? এই এলজিবিটিকিউআই+ গোষ্ঠীর মধ্যেও কিন্তু হিংসা রয়েছে। যদিও তাকে হিংসার পরিবর্তে ‘বেদনা’ বলতে চান তিনি। না-পাওয়ার যন্ত্রণা রয়েছে সকলের মধ্যেই। শুধুমাত্র নিজের ‘ভালথাকা’টুকু ছিনিয়ে আনার জন্য লড়াই করে চলেছেন নিরন্তর। গল্প-উপন্যাসে ঠাঁই হয় না এই সম্প্রদায়ের মানুষদের। প্রেম উদযাপনের যথেষ্ট সুযোগ তাঁদের কই?”

যব পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া… “জারি থাকুক প্রেমের লড়াই। রোজ প্রেমে আসুক নতুন ভোর। জীবন জুড়ে থাক প্রেমের আধিপত্যে। পিছিয়ে আসলে চলবে না। অনেক-অনেক দূর যেতে হবে আমাদের। ভয় দেখিয়ে ভালবাসাকে আটকে রাখা যায় না। ভালবাসার কোনও পরিধি নেই। আমার জীবনের ‘Ikigai’ হল প্রেম। প্রেমেই থাকতে চাই।”

(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন: Valentine’s Day: ‘আসুন, ভালবাসার দিনে ভালবাসাকে আরামে নিঃশ্বাস নিতে দিই…’

আরও পড়ুন: Valentine’s Day Special: ‘লাভ মি থোড়া অউর’… ইশকওয়ালা LOVE এবং AAJ KAAL-এর ভাষা