‘অমিতাভ বচ্চনকে ছেড়ে দাও’, বিয়ের আগের রাতে জয়া ভাদুড়িকে কেন এমন বলেছিলেন বাঙালি পুরোহিত?
রাতারাতিই বিয়ের আয়োজন করে, টুক করে বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন তাঁরা। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানও ছিল একেবারেই ছিমছাম। জানা যায়, মুম্বইয়ের পালিহিল এলাকায় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটেই সাজানো হয়েছিল অমিতাভ ও জয়ার বিয়ের আসর। হাতে গোণা কজন, তাঁদের সামনেই জয়ার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন অমিতাভ! মানা হয় সমস্ত বাঙালি বিয়ের আচার অনুষ্ঠানও!

সালটা ১৯৭৩। তারিখটা ৩ জুন। হঠাৎই গোটা দুনিয়া চমকে দিয়ে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুরি। বলিউড গুঞ্জনে তখন অমিতাভ ও রেখার প্রেম নিয়ে নানা চর্চা। টুকটাক সেই গসিপে এন্ট্রি নিতেন জয়াও। তবে অমিতাভের জীবন থেকে রেখা সরে গিয়ে, টুক করে যে জয়ার সঙ্গে ছাদনাতলায় যাবেন অমিতাভ, তা কেউই ভাবতে পারেননি। এমনকী, ভাবতে পারেননি জয়া বচ্চনের বাবা জনপ্রিয় সাংবাদিক তরুণ কুমার ভাদুরি এবং জয়ার পরিবারের অন্যান্য লোকজনও। কিন্তু যখন দুজনেই নিলেন সিদ্ধান্ত, তখন রাতারাতিই বিয়ের আয়োজন করে, টুক করে বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানও ছিল একেবারেই ছিমছাম। জানা যায়, মুম্বইয়ের পালিহিল এলাকায় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটেই সাজানো হয়েছিল অমিতাভ ও জয়ার বিয়ের আসর। হাতে গোণা কজন, তাঁদের সামনেই জয়ার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন অমিতাভ! মানা হয় সমস্ত বাঙালি বিয়ের আচার অনুষ্ঠানও! কিন্তু জানেন কী, বিষয়টা এমনটা নাও হতে পারত, যদি জয়া পুরোহিতের কথা শুনে এই বিয়েকে বাতিল করতেন! হ্যাঁ, এমনটাই ঘটেছিল বিয়ের ঠিক আগের দিন রাতে। পুরোহিতের একটা কথায় থমকে গিয়েছিলেন জয়া ও তাঁর পরিবার!
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। জয়া ও অমিতাভের বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদেরই ভাদুরি পরিবারেরই এক পুরোহিত। যাকে রাতারাতিই কলকাতা থেকে মুম্বইতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর কাছে প্রথমে কোনও খবরই ছিল না এই বিয়ের। মুম্বই পৌঁছে সব জানার পর পুরোহিত তো অবাক!
বিয়ের ঠিক আগের রাত। ড্রয়িং রুমে বসে রয়েছেন জয়া ভাদুরির বাবা তরুণ কুমার, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, জয়া ও অমিতাভ বচ্চন। আলোচনা চলছে বিয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে। যেহেতু বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই পরিচিত ছিলেন না বিগ বি, সেহেতু পুরোহিত মশাই তাঁকে বোঝাচ্ছিলেন বাঙালি বিয়ের আচার অনুষ্ঠান। ঠিক সেই সময়ই ঘটে যায় সেই ঘটনা। যা কিনা অবাক করে দিয়েছিল জয়াকে।
হঠাৎ করেই আলোচনার মাঝে পুরোহিত মশাই আলদা করে কথা বলতে চান জয়ার সঙ্গে। পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলতে ড্রয়িং রুম থেকে অন্য ঘরে যান জয়া। আর তখনই বোমা ফাটালেন সেই পুরোহিত।
পুরোহিত ঠিক কী বলেছিলেন জয়াকে?
জয়াকে একলা ডেকে পুরোহিত বলেন, ”তোমাকে ছোট থেকে দেখছি। তুমি আমার মেয়ের মতো। ওই অবাঙালি, অব্রাহ্মণকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়ে না। এই বিয়ে করো না। এতে তোমার ভাল হবে না। ওরা বাঙালিদের মতো নয়, তুমি কষ্ট পাবে।” সেদিন জয়া পুরোহিতকে কিচ্ছুটি বলেননি। তবে অমিতাভকে জানিয়ে ছিলেন পুরোহিতের কথা। তবে অমিতাভ সরাসরি পুরোহিতকে কিচ্ছুটি না বললেও, বিয়ের সময় বাঙালি বিয়ের প্রত্যেকটি আচার অনুষ্ঠান নিষ্ঠাভরে পালন করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জয়াকে সুখী রাখার জন্য সব করতে রাজি।
৫২ বছরে পা দিয়েছে অমিতাভ বচ্চন ও জয়া বচ্চনের দাম্পত্য। তাঁদের দুই সন্তান শ্বেতা ও অভিষেকও এখন নিজেদের সংসারে ব্যস্ত। ওঠা-পড়া জীবন অধ্য়ায় নিয়েই জয়া ও অমিতাভের সংসার। যা কিনা আজও অনেকের কাছেই সুখী দাম্পত্যের উদাহরণ। হয়তো সেই বাঙালি পুরোহিতও পরে গিয়ে মেনে নিয়ে ছিলেন জয়া ও অমিতাভ একেবারে ‘রবনে বনাদি জোড়ি’।
