TRP Effects: ‘খুব ভাল টিআরপি মানেই আমি কেউকেটা হয়ে গিয়েছি?’ ধারাবাহিকের সাপ্তাহিক রিপোর্টকার্ড নিয়ে কী বললেন শিল্পীরা

TRP List: প্রকাশ্যে আসা উইকলি রেজ়াল্ট এখন প্রভাব ফেলছে ধারাবাহিকেও। কোনও ধারাবাহিক কেন বন্ধ হচ্ছে, কেন পাল্টে যাচ্ছে প্রাইমটাম স্লট, সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বর্তমানে নেটপাড়া সতর্ক নজর রেখে চলেছে বৃহস্পতিবারের রিপোর্টকার্ডে।

TRP Effects: 'খুব ভাল টিআরপি মানেই আমি কেউকেটা হয়ে গিয়েছি?' ধারাবাহিকের সাপ্তাহিক রিপোর্টকার্ড নিয়ে কী বললেন শিল্পীরা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 05, 2023 | 6:54 PM

জয়িতা চন্দ্র 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদবদল ঘটেছে ছোটপর্দার। বদল এসেছে চিত্রনাট্যে, বদল এসেছে ধারাবাহিকের ঘরানার। তবে দর্শক-দরবারে মেগার চাহিদায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। তবে কোন ধারাবাহিকের চাহিদা তুঙ্গে, কার কদর কমছে, এর তূল্যমূল্য বিচার এযাবৎকাল মৌখিক আলোচনাতেই সীমাবন্ধ ছিল। সাম্প্রতিককালে রীতিমত রিপোর্ট-কার্ড হাতে নিয়ে চুলচেরা বিচার চলছে সর্বত্র। কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, কার ঝুলিতে কত ভোট, সবটাই যেন জলের মতো পরিষ্কার, একেবারে হাতের মুঠোয়। কারণ সাপ্তাহিক টিআরপি-র তালিকা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

ফলে প্রকাশ্যে আসা উইকলি রেজ়াল্ট এখন প্রভাব ফেলছে ধারাবাহিকেও। কোনও ধারাবাহিক কেন বন্ধ হচ্ছে, কেন পাল্টে যাচ্ছে প্রাইমটাম স্লট, সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বর্তমানে নেটপাড়া সতর্ক নজর রেখে চলেছে বৃহস্পতিবারের রিপোর্টকার্ডে। আর শিল্পীরা? তাঁদের কপালে কতটা চিন্তার ভাঁজ ফেলছে এই টিআরপি তালিকা? টিআরপি-র চাপ কতটা প্রভাব ফেলে তাঁদের জীবনে, এই প্রশ্ন ছুড়ে দিল TV9 বাংলা:

দিব্যজ্যোতি দত্ত, বর্তমান ধারাবাহিক: অনুরাগের ছোঁয়া 

দীর্ঘদিন পর টিআরপি-র তালিকায় প্রথম স্থানে জায়গা করে নেয় ধারাবাহিক অনুরাগের ছোঁয়া। অভিনেতা দিব্যজ্যোতি দত্ত-র কথায়- ‘টিআরপি প্রভাব ফেলে না, এ কথা আমি মানব না। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম হলে বেশ ভাল লাগে। কাজে উৎসাহ পাওয়া যায়। দিনের শেষে দর্শকই টপবস। তাঁরা খুশি হয়েছেন। ব্যস, আর কী চাই।’

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্তমান ধারাবাহিক: ‘গৌরী এলো’ 

বেশ কয়েকমাস ধরে টিআরপি-র তালিকায় নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে ‘গৌরী এলো’। এই ধারাবাহিকের অভিনেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমার মতে, টিআরপি-র দু’টো দিক রয়েছে। যে কোনও প্রজেক্টই একটা টিম ওয়ার্ক। টিআরপি তালিকায় জায়গা করে নেওয়া মানেই সকলে খুশি। একটা বাণিজ্যিক দিক তো থাকেই। আর যদি ব্যক্তিগত মত জানতে চান, তবে বলব, টিআরপি-র তালিকায় চলে এসেছি মানে ভীষণ ভাল কাজ করে ফেলেছি, আর টিআরপি খারাপ মানে আমি খুব খারাপ অভিনয় করেছি, এটাও কখনওই নয়। টিআরপি-র সঙ্গে তাই আমার কোনও ব্যক্তিগত সংযোগ নেই। আমার কাজ হচ্ছে অভিনয় করা। টিআরপি হয়তো ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ভর করে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ওপর। বাকি তো আরও অনেক বিষয় থাকে… ধারাবাহিক কেমন, গল্প কেমন, কোন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে, কোন সময়ে তা সম্প্রচারিত হচ্ছে প্রভৃতি। ফলে এটা নিয়ে শিল্পীর মাথা ঘামানোর কী-ই বা থাকে? খুব ভাল টিআরপি মানেই আমি কেউকেটা হয়ে গিয়েছি, এমনটাও নয়।” আর ধারাবাহিক বন্ধের বিষয় বলব, আমরা তো ফ্রিলান্সার। অনিশ্চয়তার বিষয়টা আগে থেকেই জেনে এসেছি। এটা খুব একটা সিকিওর প্রফেশন নয়। তাই ওই ঝুঁকিটুকু নিতেই হয়। সেদিক থেকে বলব, টিআরপি-তে ভাল ফল করলে ধারাবাহিক বেশিদিন চলবে, এমন একটা আশা কাজ করে। ভাল লাগে এটা জেনে যে, দর্শকেরা দেখছেন।

শ্বেতা ভট্টাচার্য, বর্তমান ধারাবাহিক: ‘সোহাগ জল’ 

একের পর এক জনপ্রিয়, হিট মেগা-সিরিয়াল অভিনেত্রী শ্বেতার ঝুলিতে। ফলে তাঁকে কোনও ধারাবাহিকে কাস্ট করা মানেই প্রথম হওয়ার দৌড়ে নাম লেখানো, এটা কি বাড়তি চাপ শ্বেতার কাছে? অভিনেত্রীর কথায়, “টিআরপি তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটেই। টিআরপি না থাকলে ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে আবার উল্টোটাও সত্য়ি। টিআরপিটাই যে আসল, এমনও নয়। কারণ অনেক ভাল গল্প থাকে, যেগুলো হয়তো টিআরপি-তে জায়গা করতে পারে না। কেন পায় না, কীসের জন্য পায় না, সেটা তো অনেক যুক্তি তর্কের বিষয়, আমি সেই বিষয়গুলোয় না গিয়ে একটা কথা বলব টিআরপি গুরুত্বপূর্ণ, তবে পাখির চোখ নয়। তবে আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, একটা বাড়তি দায়িত্ব কাজ করে। যেমন আমি এখন নতুন ধারাবাহিক ‘সোহাগ জল’ করছি। যেহেতু একটা সময় পর্যন্ত এত ভাল রেকর্ড আমার, সেটে অনেকেই দেখে বলে বসেন, ও শ্বেতাদি আছেন, শ্বেতাদি লক্ষ্মী, দিদি থাকলেই প্রজেক্ট হিট হয়। তখন ভিতর-ভিতর একটা টেনশন হয়, টিআরপি-তে সেই জায়গাটা যদি না করতে পারি, তখন কী হবে? তবে আমার বিশ্বাস, চিত্রনাট্য একটা বড় বিষয়। তার উপরও নির্ভর করে ধারাবাহিক কেমন হবে। গল্পে দাপট না থাকলে একজন অভিনেতা কী করবে বলুন?

রুবেল দাস, বর্তমান ধারাবাহিক: ‘নিম ফুলের মধু’ 

রিয়ালিটি শো থেকে উঠে এসে ‘যমুনা ঢাকি’ ধারাবাহিকে ঝড় তোলেন অভিনেতা রুবেল। তবে টিআরপি-র তালিকায় কড়া টক্করে তিনিও সামিল। শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক, অতীতের জনপ্রিয়তা কতটা মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে রুবেলের? অভিনেতা বলেন, “আমার তো মোটামুটি সোমবার থেকেই একট টেনশন কাজ করে, বিশেষত কোনও নতুন ধারাবাহিক শুরুর দিকে বেশি হয় এটা। কারণ প্রথম দুই থেকে তিন মাস খুব কঠিন সময়, এই সময়ই বোঝা যায় দর্শকেরা এই ধারাবাহিকটা নিচ্ছে কি না? এর ভবিষ্যত কী? নম্বর ১ না হলেও অন্তত যে স্লটে শো-টা যাচ্ছে, সেই স্লটে যেন প্রথম হতে পারি। অনেকগুলো চ্যানেল আছে, যেমন ধরুন রাত আটটায় আমার ধারাবাহিক সম্প্রচার হয়, আমি চাইব ওই সময় যেন অন্য কোনও ধারাবাহিক না লিড করে।”

আরাত্রিকা মাইতি, বর্তমান ধারাবাহিক: ‘খেলনা বাড়ি’ 

সেরার টক্করে বরাবর সামিল ‘খেলনা বাড়ি’ ধারাবাহিক। টিআরপি-র তালিকায় তিন থেকে চারে তার স্থান পাকা। তবে ধারাবাহিকের অভিনেত্রী আরাত্রিকা মাইতি কী বললেন টিআরপি প্রসঙ্গে? “আমার মনে হয়, টিআরপি নিয়ে কেউই সেভাবে মাথা ঘামাই না। মানে আমাদের টিমের ক্ষেত্রে বলছি। কারণ টিআরপি যেমনই হোক না কেন, নিজের একশো শতাংশ দিয়ে আমি কাজটা করে যাব। সেরাটা দেওয়া চেষ্টা করব, ভালবাসা পাওয়ার চেষ্টা করব। তবে এবার বিষয় হচ্ছে ধারাবাহিক দীর্ঘদিন টিকে থাকার বিষয় টিআরপি-টা জরুরি। সেটা দিন দিন বুঝতে পারছি। ফলে একটা সাধারণ আলোচনা হয়, এই সপ্তাহে এই-এই চমক গিয়েছে, তবে কি এই সপ্তাহে এমন কিছু হতে পারে? একটা ধারণা তৈরি হয় হয়তো। তবে সেটা চাপ নয়। আজ বৃহস্পতিবার টিআরপি বেরবে, এটা নিয়ে প্যানিক করা হয়, ভাল কাজ হলে নিজেরাই বুঝতে পারি যে এমন কিছু হতে চলেছে বা হতে পারে। চাপ নয়, তবে টিআরপি একটি ফ্যাক্টর তো বটেই।”