প্রতিবাদ তুমি কার! তিলোত্তমার বিচার চেয়েও ‘আমরা-ওরা’র কোন খেলা টলিউডের মিছিলে?
পথে নামছে টলিউড--না, রবিবার আর তাঁদের কাছে মামুলি ছুটির দিন নয়, সে ঘোষণা আগেই এসেছিল। টলিপাড়ার বিভিন্ন শিল্পীরা জানিয়েছিলেন তিলোত্তমার বিচার চেয়ে সোচ্চার হবেন তাঁরা। দল-মত-নির্বিশেষে এক বাক্য স্লোগান উঠনে 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।
পথে নামছে টলিউড–না, রবিবার আর তাঁদের কাছে মামুলি ছুটির দিন নয়, সে ঘোষণা আগেই এসেছিল। টলিপাড়ার বিভিন্ন শিল্পীরা জানিয়েছিলেন তিলোত্তমার বিচার চেয়ে সোচ্চার হবেন তাঁরা। দল-মত-নির্বিশেষে এক বাক্য স্লোগান উঠনে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। সেই মর্মে টিভিনাইন বাংলার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তাঁরা। তবে শনিবার রাত বাড়তেই প্রকাশ্যে এল এক অন্য চিত্র! সত্যিই কি বিচার চাওয়া? নাকি তিলোত্তমার বিচার কোন রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বিচার চাওয়া হচ্ছে তা নিয়েই মশগুল হয়ে পড়লেন কুশিলবদের একটা বড় অংশ? ভিতর থেকেই কি স্লোগান উঠল, ‘প্রতিবাদ তুমি কার?”
শনিবার টিভিনাইন বাংলার তরফে বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে মিছিলে যোগদানের প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্টতই বলেন, “ওটা তো তৃণমূলের মিছিল”। জানিয়ে দেন উপস্থিত থাকবেন না তিনি। ওদিকে এই মিছিলের অন্যতম দুই প্রধান আয়োজন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও শিবপ্রসাদ জানান, এ মিছিল নাকি সাধারণ শিল্পীদের। রাজনৈতিক পরিচয় এখানে মুখ্য নয়। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি তো অবশ্যই যাব। শিল্পী হিসেবে ন্যায়বিচারের দাবিতে হাজির থাকব।” তৃণমূলের তারকা-সাংসদ (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক) ও টিভিনাইন বাংলাকে জোর গলায় বলেন, “যাব, কেন যাব না? দোষীর শাস্তির দাবি তো সকলের। শুক্রবার আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে দিদির সঙ্গে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মঞ্চ থেকে সরব হয়েছি, তবে এবার যাব শিল্পী হিসেবে।” অন্যদিকে সিপিআইএম ঘনিষ্ঠ রাহুল অরুণোদয়ও জানান, তিনি থাকবেন।
View this post on Instagram
কিন্তু রাত বাড়তেই ক্লাইম্যাক্সে এ কী পরিবর্তন! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল সাংসদের ফের ফোন। সাফ জবাব, “যাচ্ছি না। মনে হচ্ছে মিছিলটা সিপিআইএমের। এই যে এত দাবি-টাবি রেখেছে দেখলাম। আমরা তো যাব নির্যাতিতার বিচার চাইতে। এরকম শর্ত চাপালে তো মুশকিল। মনে হচ্ছে পিছনে কোনও এজেন্ডা আছে। অনীক দত্তরা হয়তো এই মিছিল আয়োজন করছেন।” সিপিআইমের মিছিল? পরিচালক অনীক দত্ত যে সিপিআইএম ঘনিষ্ঠ তা সকলেই জানেন। টিভিনাইন বাংলা ফের যোগাযোগ করে পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে। শুনেই আকাশ থেকে পড়লেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, “আমি ঠিক টলিউড কথাটা পছন্দ করি না, আমি বাংলায় ছবি করি। এত রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, আমার তো মনে হচ্ছে এটা ভন্ডামি হচ্ছে। যে দাবিগুলো রাখা হয়েছে শিল্পীদের তরফে তাতে প্রথমেই লেখা ‘সব’ অভয়ার (তিলোত্তমার) বিচার চাই। মানে সেই কামদুনি থেকে বগটুই সব টেনে আনা হবে তো এখানে? শিল্পী হিসেবে মিছিলে আমি যোগ দিতেই পারি, তবে যা ঘটেছে বিগত বেশ কিছু দিন ধরে সেইখানে দাঁড়িয়ে মিছিলে আমি স্বাধীনভাবে আমার দাবিগুলো রাখতে পারব তো? আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইব। তাতে কোনও অসুবিধে নেই তো?”
টলিউডের অন্দরে বিভাজন স্পষ্ট। শিল্পী হয়েও বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকেরই এই মিছিলে যোগদান থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে? বিচারে বাণী কি তবে সত্যি নিভৃতে কাঁদছে আজ? আরজিকরের সামনে জারি হয়েছে ১৬৩ ধারা। এমতাবস্থায় টেকনিশিয়ান থেকে তারকাদের মিছিল আরজিকর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। তবে রবিবার সৃজিত, শিবপ্রসাদ, অঙ্কুশ, অনিন্দ্যরা একজোটে টিভিনাইন বাংলাকে জানান তাঁরা হাজির থাকবেন। শোনা যাচ্ছে হাজির থাকবেন তৃণমূল বিধায়ক রাজ ও শুভশ্রীও। তাঁদের বক্তব্য রঙ নয়, বিচার চাইতেই উপস্থিত হবেন তাঁরা। হাজির থাকার আর্জি জানিয়েছেন ঐন্দ্রিলা সেন, কোয়েল মল্লিকেরাও। হাজির থাকবেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও। রবিবার আচমকাই তাঁর মাতৃবিয়োগ ঘটলেও উপস্থিত থাকবেন তিনি। এ সবের মধ্যেই প্রশ্ন একটাই, যে উদ্দেশ্য নিয়ে টলিউডে পক্ষ থেকে এই বিচার চাওয়া, তা আদপে সাফল্য পাবে তো? নাকি আমরা ওরার ঘেরাটোপে লক্ষ্মীলাভ হবে সুযোগ সন্ধানীদেরই? প্রশ্ন অনেক, উত্তর যদিও অজানা।