EXCLUSIVE Satyajit Ray: মুকুলের স্বার্থে ‘ছোট্ট নায়ক’-এর প্রযোজককে ফোন করেছিলেন খোদ সত্যজিৎ, অস্কারজয়ীর জন্মদিনে স্মৃতিচারণ কুশলের
Satyajit Ray Birthday: প্রথম মুক্তি পেলেও কুশল চক্রবর্তীর প্রথম অভিনীত ছবি 'সোনার কেল্লা' নয়। এর পিছনে আছে মস্ত অজানা গল্প। সেই অজানা কথাই খোলামেলাভাবে কুশল শেয়ার করেছেন TV9 বাংলার সঙ্গে।
স্নেহা সেনগুপ্ত
আজ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। আজ ২রা মে। ১০১ বছর বয়স হল মহান পরিচালকের। আজকের দিনে মানুষ তাঁর প্রিয় পরিচালককে অনেকভাবেই মনে করবেন। ছবিতে, গল্পে, সুরে… তাঁরাও মনে করবেন, যাঁদের সঙ্গে মানিকবাবু (সত্যজিৎ রায়ের ডাক নাম) কাজ করেছিলেন। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। কিংবা মিশেছিলেন তাঁর সঙ্গে। ঠিক সেভাবেই আজ তাঁর কথা মনে করলেন বাংলার এক সুদক্ষ অভিনেতা কুশল চক্রবর্তী। আলোচনায় বেরিয়ে এল অজানা কথা। কুশল চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘সোনার কেল্লা’র যোগ সকলেরই জানা। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ফেলুদা গল্পের প্রথম ছবি ‘সোলার কেল্লা’। কুশলই সেই ছবির ৬ বছরের ছোট্ট অভিনেতা। বলা ভাল ছবির ‘ছোট্ট নায়ক’ – জাতিস্মর মুকুল। বাংলা সিনেমার আইকনিক চরিত্র। সত্যজিৎ রায়ের অমোঘ সৃষ্টি এই চরিত্রটিও। কিন্তু ক’জন মানুষ জানেন মুকুল চরিত্রে অভিনয় করার আগে ‘ছোট্ট নায়ক’ বলে একটি ছবিতে অভিনয় করছিলেন কুশল। ‘সোনার কেল্লা’-এ অভিনয়ের সময় কুশলের অভিনয় ও ক্যামেরার সেন্স দেখে সন্দেহ হয়েছিল সত্যজিতের। কৌতূহলবশত তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং জানতে পেরেছিলেন কুশল আগেই ‘ছোট্ট নায়ক’-এর শুটিং করে ফেলেছেন। কুশল চক্রবর্তী সেই অজানা কথাই খোলামেলাভাবে শেয়ার করেছেন TV9 বাংলার সঙ্গে। কী-কী ঘটনা ঘটেছিল, কীভাবে ‘ছোট্ট নায়ক’-এর আগে ‘সোনার কেল্লা’ রিলিজ় করেছিল, জানুন কুশলের বয়ানে।
হারিয়ে গেছে ‘ছোট্ট নায়ক’, তবে কুশলের স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল করে
“শিশু শিল্পী কারা? বাংলার মাস্টার বিট্টু (পরবর্তীকালে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী), মাস্টার তাপু কিংবা হিন্দিতে মাস্টার অলংকার, মাস্টার রাজু… খুব জনপ্রিয় শিশু শিল্পী তাঁরা। আমি কিন্তু তাঁদের মতো ‘শিশু শিল্পী’ একেবারেই নই। তাঁদের মতো আমার জার্নিও ছিল না। ছোটবেলায় আমি কেবল দুটি ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। একটি ‘সোনার কেল্লা’ ও অন্যটি ‘ছোট্ট নায়ক’। জানেন কি, ‘ছোট্ট নায়ক’-এর শুটিং করেছিলাম ‘সোনার কেল্লা’র আগে। সেই ছবিতে অনেক বড়-বড় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলাম সেই সময়। পাহাড়ি সান্যাল, বিকাশ রায়, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পদ্মাদেবী, ছায়াদেবী, জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেই ছবিতে। আর আমি ছিলাম সেই ছবির ‘ছোট্ট নায়ক’। অর্ধেক শুটিং করেছিলাম ‘সোনার কেল্লা’র শুটিংয়ের আগে। তখন আমার ৫ কি সাড়ে ৫ বছর বয়স ছিল। বাকিটা শুটিং করেছিলাম ‘সোনার কেল্লা’র শুটিংয়ের পর। ছবিটা ‘সোনার কেল্লা’র রিলিজ়ের পর রিলিজ় করে। সেই ছবিটি সম্পর্কে কেউ বিশেষ জানেন না। পরবর্তীকালে সেই ছবিটাকে আমি কোথাও খুঁজেও পাইনি। ইউটিউবেও না, কোথাওই না। মনে আছে, দূরদর্শনে একবার দেখিয়েছিল অনেক বছর আগে। তবে আমার কাছে কিছু স্টিল ছবি আছে। আপনাদের দেব।”
‘ছোট্ট নায়ক’-এর সঙ্গে সত্যজিৎ যোগ
“‘ছোট্ট নায়ক’-এর পরিচালক ছিলেন যুগ্মভাবে শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। ছোট্ট নায়কের সঙ্গেও কিন্তু আছে সত্যজিৎ রায়ের যোগ। কীভাবে, সেটাই বলছি…
আমি যখন ‘সোনার কেল্লা’-এ অভিনয় করছি, সত্যজিৎ রায় আমাকে নির্দেশ দিতেন কী করতে হবে, কী করতে হবে না। বলতেন, ‘তুমি ডানদিকে তাকাও’। আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘কোন ডানদিকে? ক্যামেরার ডান দিকে না আমার ডান দিকে?’ আমাকে বলতেন, ‘তুমি কথা বলতে-বলতে এসে এখানে দাঁড়াবে, তারপর দাঁড়িয়ে আবার চলে যাবে…’। আমি বলতাম, ‘আমাকে তিনটে জায়গা চক দিয়ে মার্ক করে দাও’। উনি তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘এগুলো ও বুঝল কী করে?’ নিজের ডানদিক মানে ক্যামেরার ডান দিক নয়, বাঁ দিক… বাবা বলেছিলেন, ‘ও তো অন্য একটি ছবির শুটিং করছে। শুটিং চলছে’। সত্যজিৎ রায় বললেন, ‘সে কী তুমি তো আমাকে সেটা বলোনি’। বাবা বললেন, ‘সেটা যে বলতে হয় আমার তো জানা ছিল না’। তারপর তিনি “ছোট্ট নায়ক”-এর প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলেন।
সত্যজিৎ রায় ফোন করলেন ‘ছোট্ট নায়ক’-এর প্রযোজককে। বললেন, ‘আমি সত্যজিৎ রায় বলছি, আপনার ছবিতে যে বাচ্চা ছেলেটি আছে, সে আমার ছবির হিরো। আপনাকে একটা অনুরোধ করছি, আমার ছবি রিলিজ় হওয়ার আগে আপনি আপনার ছবিটি রিলিজ় করবেন না’। প্রযোজক মেনেও ছিলেন বিষয়টি। ওঁর মনে হয়েছিল, সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করছি, সেটা আগে রিলিজ় করলে ‘ছোট্ট নায়ক’ও আলাদা মাইলেজ পাবে। তাই আগে ‘সোনার কেল্লা’ই রিলিজ় করল। কিন্তু ‘ছোট্ট নায়ক’ সেই জায়গায় যেতে পারল না। এমনটা কেন হল বুঝতেই পারলাম না। একেবারেই জনপ্রিয় ছবি নয় ছবিটি। কিন্তু গল্পটা দারুণ সুন্দর ছিল। ওই সময় দাঁড়িয়ে ওরকম একটা গল্প, ভাবাই যায় না।”
ছোট্ট নায়কের গল্প
“বড়লোকের মেয়ে ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বয়সে ছোট্ট একটি ছেলে পার্কে খেলত। একদিন মেয়েটি কিডন্যাপ হয়ে যায়। বাচ্চা ছেলেটি সেই কিডন্যাপারকে দেখে। ছেলেটি কিডন্যাপারকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। কলকাতার রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের মানুষকে মিট করে সে। চোর, বদমাইশ, নিঃসঙ্গ দাদু… এদের সঙ্গে দেখা হয়। পুলিশও বুঝতে পারে বাচ্চা ছেলেটির দিকে নজর রাখলে অপহরণকারীর কাছে পৌঁছতে পারবেন তাঁরা।”
কিছুটা হলিউডের ‘বেবিস ডে আউট’-এর মতো মনে হচ্ছে তাই তো। কিন্তু এই ভাবনার জন্ম বাংলাতেই হয়েছিল ‘বেবিস ডে আউট’ তৈরির অন্তত ৩০ বছর আগে। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা গল্প। কতজন মনে রেখেছেন?
আরও পড়ুন: Dev: অস্কার পেলেন দেব! আবেগে ভাসছে পরিবার ও তাঁর অনুরাগীরা
আরও পড়ুন: Aparajito: মহিলা পাননি, একজন পুরুষকে দিয়েই সত্যজিতের ‘ইন্দিরা ঠাকুরণ’ পুনর্নির্মাণ করেন অনীক দত্ত