‘‘আমার বোর্ডিংয়ের বাইরে গাড়ি থামল, নামলেন উত্তমকুমার; সব মেয়েরা দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে উত্তমকুমারকে দেখতে…’’, বললেন সুপ্রিয়াকন্যা সোমা

Uttam Kumar Birthday: উত্তমকুমারের জন্মদিনে তাঁর সম্পর্কে নানা কথা TV9 বাংলাকে শেয়ার করলেন সুপ্রিয়া দেবীর কন্যা সোমা চট্টোপাধ্যায়।

‘‘আমার বোর্ডিংয়ের বাইরে গাড়ি থামল, নামলেন উত্তমকুমার; সব মেয়েরা দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে উত্তমকুমারকে দেখতে...’’, বললেন সুপ্রিয়াকন্যা সোমা
Follow Us:
| Updated on: Sep 03, 2021 | 5:16 PM

বাবা বিশ্বনাথ চৌধুরী ও মা সুপ্রিয়া চৌধুরীর ছাড়াছাড়ি হতে দেখেছেন মাত্র ৫ বছর বয়সে। তারপর ৭-৮ বছর বয়স যখন, বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করলেন ‘মহানায়ক’ উত্তমকুমার। মায়ের সঙ্গে ‘প্রেমের সম্পর্ক’-এ আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। মহানায়কের সঙ্গে সুপ্রিয়াকন্যার শৈশব কীভাবে কেটেছিল, বলতে গিয়ে স্মৃতির সরণি দিয়ে হাঁটলেন সোমা চট্টোপাধ্যায়। শুনল TV9 বাংলা।

প্রশ্ন: সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে উত্তমকুমারের যখন সম্পর্ক তৈরি হয়, আপনার বয়স তখন কত ছিল? আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল সেই সময়…

আমার বয়স তখন ৭-৮ বছর। একদিন জানতে পারি উত্তমকুমারের সঙ্গে মায়ের (সুপ্রিয়া দেবী) সম্পর্ক আছে। খুব ছোট ছিলাম তো, সেরকম কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না আমার। তার উপর আমি বোর্ডিং স্কুলে পড়তাম। তবে এটুকু বলতে পাড়ি, আমি মায়ের খুব বাধ্য মেয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে যা বলতেন, আমি শুনতাম। মায়ের জীবনের একটা অধ্যায় ছিল সেটা। মা যাতে ভাল থাকে, সেটাই আমার প্রধান দেখার বিষয় ছিল। ফলে মায়ের উপরই সবটা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। ওঁদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও দিন নিজের মতামত প্রকাশ করিনি।

প্রশ্ন: সুপ্রিয়া দেবীর প্রতি উত্তমকুমারের প্রেমের বহিঃপ্রকাশ কীরকম ছিল?

উত্তমকুমারকে দেখে আমার বারবারই মনে হয়েছিল মায়ের উপর তিনি ভীষণ নির্ভরশীল। মা-ই সব দেখভাল করতেন। মা অনেককিছু করেছিলেন উত্তমকুমারের জন্য। অনেক আত্মত্যাগ ছিল মায়ের।

প্রশ্ন: তার মানে আপনি মনে করেন উত্তমকুমারের সাফল্যের পিছনে সুপ্রিয়া দেবীর মস্ত বড় ভূমিকা আছে?

একেবারেই তাই। উত্তমকুমারের সাফল্যের পিছনে সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন স্তম্ভ। এতগুলো বছর পর এই সত্যিটা আমাকে বলতেই হবে। মা ওঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমাকে ‘বাবি’ (উত্তমকুমার) বলেছিলেন, ‘তোর মায়ের সঙ্গে আমার বোধহয় আর দেখা হল না।’ মাকে তো অনেক কথা অনেকে বলেছেন সারাজীবন। কিন্তু মা নিজেকে চিনতেন। আর আমি মাকে চিনতাম।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে উত্তমকুমারের সম্পর্ক কেমন ছিল?

ঠিক ছিল। আমি তো বোর্ডিং স্কুলে পড়তাম। তারপর মাত্র ১৯ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমার মেয়েকে ভীষণ ভালবাসতেন ‘বাবি’। আমি আমার নিজের বাবাকে খুব মিস করতাম। তাঁকে (বাবাকে) ‘বাবি’ বলে ডাকতাম। উত্তমকুমারকেও ‘বাবি’ বলে ডাকতাম। এমনটা মা আমাকে শিখিয়েছিলেন। নিজের বাবার জায়গায় বসেছিলেন উত্তমকুমার। আমি বিষয়টা মেনে নিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: সুপ্রিয়া দেবীর জীবনে উত্তমকুমার আসার পর আপনার বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল?

ছিল তো। আমি তো দিল্লিতে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। ওখানে কিছুদিন কাটিয়ে আসতাম।

প্রশ্ন: তিনি কী বলতেন উত্তমকুমার সম্পর্কে?

বাবা কিছু বলতেন না। বাবাও তো আবার বিয়ে করেছিলেন।

প্রশ্ন: আপনি কখনও উত্তমকুমারকে আপনার বাবার জায়গায় বসাতে পেরেছিলেন?

পাঁচ বছর বয়সে নিজের পরিবারকে চোখের সামনে ভেঙে যেতে দেখেছি। আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। প্রত্যেক মেয়ের মতো আমিও বাবাকে ভালবেসেছিলাম। বাবা চলে গেলেন অন্যত্র। তাই পাঁচ বছর বয়স থেকে আমার জীবন মা-কেন্দ্রিক হয়ে গেল। অনেক ছোটবেলা থেকে উত্তমকুমারকে আমাদের বাড়িতে এসে থাকতে দেখেছি। মা যা করেছেন, আমি তাই-ই মেনে নিয়েছি। তাই আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আমি ঠিক মতো দিতে পারব না। উত্তমকুমার একজন ফিল্মস্টার ছিলেন। মায়ের সঙ্গে তিনি থাকতেন ঠিকই, কিন্তু নিজের পরিবারকে ত্যাগ করতে পারেননি। আমার মনে হত, তিনি যথেষ্ট শক্ত মানুষ নন। আমার মাকেই অনেক বেশি শক্ত (স্ট্রং) মানুষ বলে মনে হয়েছে চিরকাল।

প্রশ্ন: উত্তমকুমারের স্ত্রী গৌরী দেবী, তাঁর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীরকম ছিল?

নৈনিতালের বোর্ডিং স্কুলে আমার শৈশব কেটেছে। তিনমাসের ছুটিতে আসতাম কলকাতায়। তখন উত্তমকুমারের ছেলে গৌতম আমাদের বাড়িতে আসত। ওঁর বাবার (উত্তমকুমার) সঙ্গে দেখা করত। বাবা-ছেলের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। মায়ের সঙ্গেও গৌতমের সম্পর্ক ভাল ছিল। আমরা ভাল বন্ধু ছিলাম। তবে আমি ওঁদের ভবানীপুরের বাড়িতে কখনও যেতাম না। গৌতমই বরাবর আসত আমাদের বাড়িতে।

প্রশ্ন: উত্তমকুমারের স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে আপনার কথা হত?

আমার এখন ঠিক মনে নেই। একবার কথা হয়েছিল মনে হয়। মানুষটিকে সেই অর্থে চিনতাম না আমি।

প্রশ্ন: আপনার ছেলে শন, অর্থাৎ সুপ্রিয়া দেবীর নাতি, এখন চুটিয়ে অভিনয় করছেন। ও দিকে, উত্তমকুমারের নাতি গৌরব অভিনয় করছেন… ওঁদের মধ্যে কি কোনও বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে?

এটা আমি ঠিক বলতে পারব না। আমার মনে হয় বনি (শন বন্দ্যোপাধ্যায়) খুব ইন্ট্রোভার্ট মানুষ। খুব বেশি মেলামেশা করতে পারে না ও মানুষের সঙ্গে।

প্রশ্ন: উত্তমকুমারের সঙ্গে কাটানো সবচেয়ে মধুর সময়…

একবার পুজোর ছুটিতে নৈনিতালে আমার বোর্ডিং স্কুলে এসেছিলেন ওঁরা… মা আর ‘বাবি’ (উত্তমকুমার)। তারপর আমরা রানিক্ষেতে যাই। পুজোর পাঁচদিন ওখানেই কাটিয়েছিলাম আমরা। আমার আজও মনে আছে, আমার স্কুলের বাইরে উত্তমকুমার গাড়ি থেকে নামলেন। সব মেয়েরা দৌড়ে-দৌড়ে তাঁকে দেখতে গেল…! কী ভিড় জমেছিল সেদিন…!

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ