AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘এটা সত্যজিতের সিনেমা, দেরি করবে না!’, উত্তমকে কেন বলেছিলেন মানিকবাবু?

সৌমিত্রকে নিয়ে একাধিক ছবি করলেও, উত্তম কেন ডাক পেলেন এত দেরিতে, তা একবার সোজাসুজিই সত্যজিৎকে প্রশ্ন করেছিলেন মহানায়ক। উত্তরে অবশ্য সত্যজিৎ শুধুই হেসেছিলেন। তবে নায়ক পরবর্তী নানান সাক্ষাৎকারে উত্তম, বার বারই বলেছিলেন, তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি হল সত্যজিতের নায়ক!

'এটা সত্যজিতের সিনেমা, দেরি করবে না!', উত্তমকে কেন বলেছিলেন মানিকবাবু?
| Updated on: Sep 10, 2025 | 7:13 PM
Share

শোনা যায়, সত্যজিৎ ও উত্তমের মধ্যে প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব থাকলেও, অল্প বিস্তর ইগোর লড়াই ছিল দুজনের মধ্যে। একে তো সত্যজিতের উপর অভিমান ছিল মহানায়কের। সৌমিত্রকে নিয়ে একাধিক ছবি করলেও, উত্তম কেন ডাক পেলেন এত দেরিতে, তা একবার সোজাসুজিই সত্যজিৎকে প্রশ্ন করেছিলেন মহানায়ক। উত্তরে অবশ্য সত্যজিৎ শুধুই হেসেছিলেন। তবে নায়ক পরবর্তী নানান সাক্ষাৎকারে উত্তম, বার বারই বলেছিলেন, তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি হল সত্যজিতের নায়ক! অন্যদিকে, সত্যজিৎও মনে করেন, উত্তম ছাড়া নায়ক আর কেউ করতে পারতেন না। কেননা, নায়কের মধ্যে দিয়ে, সত্যজিৎ তো উত্তমের গল্পই বলেছিলেন। তাই ইগোর লড়াই কখনই বাড়াবাড়ির পর্যায় যায়নি। তবে নায়ক ছবির প্রিমিয়ারে এই লড়াই অল্প ঝলক পেয়েছিল অনুরাগীরা।

সালটা ১৯৬৬ সাল। তারিখ ৬ মে। মুক্তি পেল সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’। বসুশ্রীতে হয়েছিল এই ছবির প্রিমিয়ার। গোটা ইন্ডাস্ট্রি হাজির হয়েছিলেন এই প্রিমিয়ারে। একে তো সত্যজিতের ছবি, তার উপর উত্তম কুমার। সবে মিলে মহানায়ক ও মহান পরিচালকের জুটির ম্যাজিক দেখার জন্য সিনেপ্রেমীদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। আর সেই প্রিমিয়ারেই একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন উত্তম। তবে সেই কাণ্ডের সূত্রপাত করেন সত্যজিৎই।

জানা যায়, ৬ তারিখ সকালে উত্তমকে ফোন করেন সত্যজিৎ। নায়ককে তিনি জানান, ঠিক তিনটের সময় বসুশ্রীতে চলে এসো। উত্তরে উত্তম বলেছিলেন, “একদম কাঁটায় কাঁটায় আসা তো সম্ভব না। তাছাড়া আমি এলে ভীড় হবে ভীষণ, কারণ আমি সুপারস্টার। একটু লেট হবে ভিড় ঠেলে আসতে।” উত্তমের মুখে এমন কথা শুনে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলেন সত্যজিৎ। কেননা, এর আগে তাঁর ছবির কোনও অভিনেতাই এমনটা বলেননি, তাঁর মুখের উপর। কিন্তু মহানায়ক বলে, সত্যজিৎ ছাড় দেননি। স্পষ্টই উত্তমকে জানান, “এটা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা। সময় মতো আসবেন, ব্যস।”

ঘড়ির কাঁটায় ৩ টে বাজল। বসুশ্রীর সামনে জনতার ভিড়। আর সেই ভিড়ের মুখে একটাই স্লোগান। মহানায়ক! উত্তম আসলেন, একটু দেরি করেই। ভিড় বাড়ল আরও, অনুরাগীদের দেখে হাতও নাড়ালেন। তারপরই ঘটল সেই ঘটনা। বসুশ্রীর মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে গিয়ে উত্তম দাঁড়ালেন। সত্যজিতের দিকে তাকিয়ে মাইকে উত্তম বললেন “আপনারা উত্তেজিত হবেন না, শান্ত হোন। এটা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা!” সেদিন উত্তমের ম্যাজিক স্বচক্ষে দেখেছিলেন সত্যজিৎ। হালকা হেসেছিলেন, কারণ তিনি বুঝেছিলেন, ঠিক মানুষকে নিয়েই ঠিক ছবি বানিয়েছেন তিনি। নায়ককে ইতিহাস রচনা করবে, তা প্রিমিয়ারেই টের পেয়েছিলেন সত্যজিৎ।