মমতার হাত থেকে নেওয়া নগদ পুরস্কারের অর্থে কী করলেন চন্দন সেন?
দু’দিন আগে ধন্যধান্য অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে টেলি সম্মান পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দন সেন। ‘সেরা শ্বশুর’ বিভাগে তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি পান পুরস্কার এবং এক লক্ষ টাকার সম্মান। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিয়ে কেউ কেউ তাঁকে কটাক্ষ করে ‘চটিচাটা’ বলতেও ছাড়েননি।

অনবদ্য অভিনয় দক্ষতার জন্যে বরাবরই চর্চা থেকেছেন অভিনেতা চন্দন সেন। বরাবরই তিনি স্পষ্টবাদী। নিজের অবস্থান ও লক্ষ্যে তিনি স্থির। বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী এই শিল্পী খোলাখুলি মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনাও করে থাকেন, আর সেই কারণে নানা বাধা–বিপত্তিও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে বলেই একশ্রেণির দাবি। নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য সরকারি প্রেক্ষাগৃহ না পাওয়ার অভিযোগও এনেছেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থান ও ব্যক্তিগত মতাদর্শের বাইরে গিয়ে সাম্প্রতিক এক ঘটনা প্রমাণ করল— চন্দন সেন প্রথমেই একজন সচেতন নাগরিক এবং শিল্পী।
দু’দিন আগে ধন্যধান্য অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে টেলি সম্মান পুরস্কার গ্রহণ করেন চন্দন সেন। ‘সেরা শ্বশুর’ বিভাগে তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি পান পুরস্কার এবং এক লক্ষ টাকার সম্মান। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিয়ে কেউ কেউ তাঁকে কটাক্ষ করে ‘চটিচাটা’ বলতেও ছাড়েননি। তবে চন্দন সেন সেই সমালোচনার কোনওটিকেই গুরুত্ব দেননি। বরং সম্মাননা থেকে পাওয়া অর্থ কীভাবে ব্যবহার করেছেন, তা গোপনেই রেখেছেন। তার আসর সত্যি জানলে অনেকেরই তাঁর প্রতি সম্মান কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন চন্দন সেনের ঘনিষ্ঠ, অভিনেতা ও বামপন্থী নেতা দেবদূত ঘোষ। তিনি জানান, চন্দন কিছুই নিজে থেকে বলেননি; বরাবরই তিনি প্রচারবিমুখ। দেবদূত কৌতূহলবশে তাঁকে ফোন করে জানতে চান—এই এক লক্ষ টাকা দিয়ে কী করবেন? আগেও সরকারি পুরস্কারের অর্থ তিনি চা-বাগানের শ্রমিকদের দান করেছিলেন। তাই এবার কী করবেন তা জানার কৌতূহল ছিল প্রবল।
চন্দন সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ দেখো।” এরপরই দেবদূতের ফোনে পৌঁছায় চারটি ছবি। দেখা যায়—পুরস্কারের পুরো অর্থ তিনি চারটি ভিন্ন সংস্থায় ভাগ করে দান করে দিয়েছেন। প্রতি সংস্থায় ২৫ হাজার টাকা করে। ১. ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য কাজ করা একটি এনজিও, ২. সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ পরিষেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান, ৩. একটি সামাজিক সেবা সংস্থা, ৪. ‘অভয়া মঞ্চ’।
নিজে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন চন্দন সেন। চিকিৎসার জন্য তাঁরও প্রয়োজন বিপুল অর্থ। তাঁর নাট্যসংগঠন ‘অশোকনগর নাট্য আনন্দ’-এরও আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে পাশে সরিয়ে রেখে দান করলেন পুরো পুরস্কারের নগদ অর্থ। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন—“সরকারি সম্মাননার অর্থ আসলে জনগণের। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই সিদ্ধান্ত।”
টলিউড জুড়ে এখন একটাই কথা—চন্দন সেন শুধু প্রতিভাবান অভিনেতাই নন, মানবিকতার উদাহরণও। তাঁর এই সিদ্ধান্তে শিল্পী–সমাজ গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।
