দুধকে (Milk) বলা হয় সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। একটি স্বতন্ত্র পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হলেও, দুধ দিয়ে সুস্বাদু ডেজার্ট বা নানান স্বাদের রেসিপি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। এমনিতেই দুধের কথা কানে এলেই বাঙালি দুকলি একটি গান গেয়ে ফেলেন। তাতে বুড়ো থেকে বাচ্চা সকলেই আপ্লুত। দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন। দুধের নানা পুষ্টিগুণ (Nutrients) আপনাকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখতে পারে। ডায়েটের ক্ষেত্রেও দুধের কোনও বিকল্প নেই। দুধকে একটি সম্পর্ণ খাবার বললেও ভুল হবে না। বিভিন্ন খনিজ, ভিটামিন, ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার আয়ুর্বেদেও (Ayurveda) একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। পরিপাক ও পুষ্টিগুণের জন্য দুধের গুণের শেষ নেই।
মা-ঠাকুমারা প্রতিদিনই বাড়ির ছোট্ট শিশুকে দুধ খাওয়ার কথা বলেন। সৌন্দর্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হাড় মজবুত বা দ্রুত বড় হয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। সেই চেষ্টা কখনও বিফলে যেত না যদিও। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখান সকলেই প্রায় জানেন যে, কোন মানুষের কতটা পুষ্টির প্রয়োজনে দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের প্রতিটি প্রয়োজন অনুযায়ী দুধ পানের সময় ও পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে দুধ খাওয়ার সঠিক সময় ও কতটা পরিমাণ খাবেন, তা জেনে নিন…
দুধ খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি
দুধ সবার জন্যই উপকারী। কিন্তু আপনার পছন্দ এবং পুষ্টির চাহিদা প্রতিটি বয়সের সাথে পরিবর্তিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। তাই দুধ পান করার সঠিক সময় কী হওয়া উচিত, তার উল্লেখ রয়েছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। আর এর সঙ্গে একমত আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদেরও। তাঁদের কথায়, আয়ুর্বেদ অনুসারে, প্রাপ্চবয়স্কদের জন্য দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল রাতে শোওয়ার আগে। তবে শিশুদের জন্য ভোরবেলা দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, রাতে দুধ পান করা ‘ওজস’ বাড়ায়। ওজস আয়ুর্বেদে এমন একটি পর্যায় হিসাবে পরিচিত যখন আপনার পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। হালকা গরম দুধ পান করলেও অনিদ্রায় উপশম পাওয়া যায়। দুধেরও উপশমকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এইভাবে শোবার আগে দুধ পান করা আপনাকে শান্ত করতে পারে এবং আপনাকে একটি ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে। রাতে সক্রিয় না থাকার কারণে, আপনার শরীর রাতে দুধ থেকে সর্বোচ্চ ক্যালসিয়াম তৈরি করতে সক্ষম হয়।
আয়ুর্বেদ অনুসারে মিল্কশেক পান করা নিষিদ্ধ
আয়ুর্বেদিক নিয়ম অনুসারে, আম, কলা, তরমুজ এবং অন্যান্য টক ফল কখনই দুধ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা উচিত নয়। দুধের সঙ্গে মিশ্রিত কলা গ্যাস্ট্রিক ফায়ার হ্রাস করতে পারে। যার ফলে বিষাক্ত পদার্থগুলি সাইনাস কনজেশন, সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, ফুসকুড়ি এবং আমবাতের মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
দুধে অ্যালার্জি থাকলে
অনেকেরই ল্যাকটোজের কারণে দুধ হজম হয় না। ল্যাকটোজ হব এক ধরনের প্রাকৃতিক চিনি যা দুধে পাওয়া যায়। এই চিনি মানুষের পক্ষে হজম করা কঠিন। যদারে শরীরে প্রাকৃতিক ল্যাকটোজ তৈরি করে না। বর্তমানে তাদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রকমের দুধ পাওয়া যায়। তাতে কোনওরকম ল্যাকটোজ থাকে না। নিয়মিত দুধে ল্যাকটোজ যোগ করলে ও উপস্থিত ল্যাকটোজ ভেঙে তৈরি করা হয়। নিয়মিত দুধের সমস্ত পুষ্টিই থাকে। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে আক্রান্তদের জন্য দুধ ও এর পণ্যগুলির পুষ্টি ও স্বাদ পাওয়ার অন্যতম দুর্দান্ত উপায়।