Panic Attack: প্যানিক অ্যাটাক হলে কী করবেন? কী ভাবে নিজেকে শান্ত করবেন?
Panic Attack: কেউ আবার প্যানিক অ্যাটাককে 'পাগল' বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন প্যানিক অ্যাটাক হওয়া মানে পাগল হয়ে যাওয়া বা মানসিক কোনও সমস্যা নয়। এটি মনের ভিতরের নির্দিষ্ট কোনও আবেগজনিত সমস্যার জন্য হতেই পারে।

কোনও কিছু থেকে ভয়, অতীতে পাওয়া কোনও মানসিক ধাক্কা, ব্রেকআপ, ছোটবেলার কোনও ভয় বা বাজে অভিজ্ঞতা হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়া এই রকম নানা কারণে হতে পারে প্যানিক অ্যাটাক। আবার হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনও কিছুতেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলেও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক শুনলেই কেউ কেউ বলেন বাড়াবাড়ি করছে। কেউ আবার বিষয়টিকে কোনও সমস্যা বলে গুরুত্ব দিতেই চান না। কেউ আবার প্যানিক অ্যাটাককে ‘পাগল’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন প্যানিক অ্যাটাক হওয়া মানে পাগল হয়ে যাওয়া বা মানসিক কোনও সমস্যা নয়। এটি মনের ভিতরের নির্দিষ্ট কোনও আবেগজনিত সমস্যার জন্য হতেই পারে।
প্যানিক অ্যাটাক হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা, শ্বাসকষ্ট, হাতের তালু ঘেমে যাওয়া, মনে হচ্ছে যেন চারপাশ থেকে আপনাকে চেপে ধরছে বা আশপাশ কালো হয়ে আসার মতো নানা ধরনের অনুভূতি হতে পারে। ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা সমস্যা দেখা যায়।
আসলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এই সমস্যা দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা কথা পরিষ্কার করে বোঝাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যানিক অ্যাটাকের নেপথ্যের কারণ যাই হোক না কেন মদ্দা বিষয়টি হলে তার ফলে নিজের ভেতরে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড মানসিক চাপ। যা যা বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় সেই সবই ওই মানসিক চাপের ফল। তাই এই সময়ে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টিকে সামলানো প্রয়োজন। তার আগে বোঝা প্রয়োজন আপনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে বা হয়েছে তা নিশ্চিত হবেন কী করে?
প্যানিক অ্যাটাকের সাধারণ উপসর্গ কী?
দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া বা হৃদকম্পন। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, মাথা ঘোরা, হাত বা মুখে অবশভাব বা ঝিঝি ধরা, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর বা মৃত্যুভয়ের অনুভূতি প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
মনে রাখবেন প্যানিক অ্যাটাক মানে হার্ট অ্যাটাক নয়। এটি কোনও শারীরিক দুর্বলতা বা কারও মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টাও নয়। স্রেফ দীর্ঘ দিন ধরে নেওয়া প্রচণ্ড মানসিক চাপের ফল।
একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হল প্যানিক অ্যাটাক। প্যানিক অ্যাটাক কম হলেও হঠাৎ করে আসে। সাধারণত দীর্ঘদিনের স্ট্রেস জমতে জমতে একসময় যে বিস্ফোরণ হয় সেটাই প্যানিক অ্যাটাক। আপনি হয়তো ভাবছেন, ‘আমি সামলে নিচ্ছি।’ ওপর ওপর হয়তো সবই করছেন কিন্তু ভেতর ভেতর ডুবে থাকছেন সেই চাপের মধ্যে। সে হিসাব রাখছে আপনার আপনার প্রত্যেক ডেডলাইনের। স্নায়ুতন্ত্র হিসাব রাখছে সব কিছুর।
মনে রাখবেন, স্ট্রেস হল ধিকিধিকি জ্বলা আগুন। আর প্যানিক সেই ছাপা আগুন হঠাৎ জ্বলে উঠলে যা হতে পারে সেটাই।
আপনিও এই প্যানিক অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে আছেন কিনা বুঝবেন কীভাবে?
উদ্বেগ, ট্রমা বা মুড ডিসঅর্ডারের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ইতিহাস। উচ্চ-চাপের কাজ বা ব্যক্তিগত পরিসরে অশান্তি। থাইরয়েডের অসামঞ্জস্যতা বা রক্তে শর্করার ওঠানামার মতো শারীরিক সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অভাব। সোশ্যাল মিডিয়া, খবর বা ক্যাফেইনের অতিরিক্ত প্রভাব থাকলে সাবধান হতে হবে।
প্যানিক অ্যাটাক হলে কী করণীয়?
৪-৭-৮ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ম –
৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন – ৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন – ৮ সেকেন্ডে ছাড়ুন। এটি হৃদস্পন্দনকে ধীর করে। স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে।
ঠান্ডা জলের শেক –
মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপ্টা দিতে পারেন। বরফের টুকরো ঘষতে পারেন, এতে মস্তিষ্ক ভয় থেকে সংবেদনের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।
গ্রাউন্ডিং টেকনিক –
৫টি জিনিস দেখুন, ৪টি স্পর্শ করুন, ৩টি কথা শুনুন, ২টি গন্ধ নিন, ১টি স্বাদ নিন। এই টেকনিক আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
হাঁটাচলা করুন –
ঘরের মধ্যে হলেও হাঁটুন—এতে অ্যাড্রেনালিন খরচ হয় এবং শরীর ফ্রিজ মোড থেকে বেরিয়ে আসে।
মনে রাখবেন, এইসব নিয়ম মেনে তাৎক্ষ্ণীক ভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদী কোনও সমাধান নয়। তাই নিজের সমস্যাকে খুঁজে বার করুন। প্রয়োজনে কাউন্সিলর বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাৎক্ষণিক সমাধান নয় স্থায়ী প্রতিকারের চেষ্টা করুন।
