Tongue Scraping: প্রতিদিন জিভ পরিষ্কার করতে বলছে চরক সংহিতা! কারণ জানলে অবাক হয়ে যাবেন
Ayurveda Tips: আয়ুর্বেদের অবশ্যপাঠ্য পুস্তক চরক সংহিতা। এই শাস্ত্রে প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ জানলে ভাববেন আগে করেননি কেন!
করোনা মহামারী (Coronvirus Pandemic) আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে আমরা আগের চাইতে অনেক বেশি করে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শিখেছি। তা সত্ত্বেও একটা বিষয় এখনও অবহেলিত থেকে গিয়েছে। তা হল মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যের (Oral Health) যত্ন নেওয়া। এতদূর পড়ে আপনার মনে হতে পারে— ‘কেন, আমি তো রোজই ব্রাশ করি!’ ঠিকই করেন। তবে প্রতিদিন আপনার দাঁত ব্রাশ করা (Teeth Brush) মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়! নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করার পাশাপাশি, আপনার জিভ পরিষ্কার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে ফ্রেশ হওয়ার সময়, একটি তামার ইউ-আকৃতির স্ক্রাবার দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কারের অভ্যেস আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন— জিহ্বা নিয়মিত পরিষ্কার করলে তা শরীরের সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে । তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, জিভ ছোলা বা স্ক্রাব শুধু মুখ নয়, তার সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখারও একটি পর্যায়।স্ক্রাবের সাহায্যে জিহ্বায় পড়া আবরণ তুলে ফেললে মুখগহ্বর অবিলম্বে আসে সতেজতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্ক্রাবারের সাহায্যে জিহ্বা পরিষ্কার একটি প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য। জিহ্বা এবং মুখগহ্বর হল আপনার মন, শরীরের সিস্টেম এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে প্রধান প্রবেশদ্বার! অতএব, এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্বাস্থ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। জিহ্বা স্ক্রাব করলে জিভের উপর জমা নানা অপদ্রব্য অপসারিত হয়।
জিভের উপর পড়া এই আবরণের কারণেই শ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে এবং অনেক রোগ জীবাণুর বৃদ্ধি হয়। এই আবরণটি উল্টোপাল্টা খাদ্যগ্রহণ, দুর্বল হজম এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়ুর্বেদের অবশ্যপাঠ্য চরক সংহিতাতেও জিহ্বা পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ জিহ্বা মুখগহ্বরের দুর্গন্ধ এবং স্বাদহীনতা ইত্যাদি দূর করে। এই সাধারণ অনুশীলনটি শরীর থেকে খারাপ পদার্থ অপসারণের একটি সরাসরি উপায়।
আয়ুর্বেদে জিহ্বা এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ সংযোগ বর্ণনা করা হয়েছে। জিহ্বার যে কোনও বিবর্ণতা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে অসুস্থতা বা ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত দেয়। জিহ্বার বিভিন্ন অংশের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশের সম্পর্ক রয়েছে। জিহ্বা উপকারী এবং ক্ষতিকারক উভয় ব্যাকটেরিয়াকে আশ্রয় দেয়। ব্যাকটেরিয়া এবং খাদ্য কণা জিভের প্যাপিলির মধ্যে জমা হতে থাকে। এই কণাগুলিকে সময়মতো পরিষ্কার না করা হলে, তা একটি শ্লেষ্মার আস্তরণে ঢেকে যায় যা ক্রমাগত জমতে জমতে শ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে। তাছাড়া পরিষ্কার জিভ খাদ্যের স্বাদ আরও ভালোভাবে সনাক্ত করতেও সাহায্য করে। ফলে রান্নায় স্বাদ আনার জন্য লবণ, চিনি এবং মশলাও বেশি খরচ করতে হয় না। লবণ, চিনি এবং মশলা যত কম খাওয়া যাবে, স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকে। তাই জিহ্বা পরিষ্কার করা স্বাস্থ্যবিধির একটি অত্যাবশ্যক অংশ। চিকিৎসকরা বলছেন ব্রাশ করার পরেই জিভ স্ক্রাব করুন।
কীভাবে করবেন জিভ পরিষ্কার?
• আপনার মুখ খুলুন এবং আলতো করে আপনার জিহ্বা বের করুন।
• স্ক্র্যাপারটি জিহ্বার পিছনে শক্তভাবে রাখুন এবং মৃদু চাপ দিয়ে সামনের দিকে টানুন।
• স্ক্র্যাবারে জমা নোংরা ধুয়ে ফেলুন। স্ক্র্যাবিং যতটা সম্ভব মৃদুভাবে করা উচিত।
• ৩-৪ রাউন্ড স্ক্রাব করার পরে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।
• প্রতিবার ব্যবহারের পর গরম জলে স্ক্র্যাবার ভালো করে ধুয়ে নিন ও পরিষ্কার জায়গায় রাখুন।
‘আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে— জিভের আদর্শ স্ক্র্যাবার হতে হবে সোনা, রূপা, তামা, টিন বা পিতলের।
মনে রাখবেন—
• দিনে দু’বার, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে একবার জিভ পরিষ্কার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
• মসৃণ প্রান্তযুক্ত একটি ভাল মানের স্ক্র্যাবার কিনুন।
• আপনার জিহ্বার উপর হালকাভাবে স্ক্র্যাবার দিয়ে ঘষুন। খেয়াল রাখবেন যেন জিহ্বায় আঘাত না লাগে।
• জিহ্বা স্ক্রাব করার সময় খুব বেশি চাপ দিতে হবে না। না হলে জিহ্বার সংবেদনশীল পৃষ্ঠের ক্ষতি হতে পারে ও স্বাদকোরকগুলির নষ্ট হতে পারে।
• সাদা দাগ বা আলসার লক্ষ করলে স্ক্রাব করবেন না।
• স্ক্রাব করার জন্য টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)