দেশে লেগেই রয়েছে করোনা সংক্রমণের ওঠাপড়া। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৫৮ হাজার মানুষ। বেড়েছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও, ৮ হাজারের গণ্ডি পার করেছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই দেশের ২৯টি রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট। এদিকে, গতকালই দেশে করোনা টিকাকরণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে বিধিনিষেধ জারি করা হলেও দেশের একাধিক প্রান্তে ধরা পড়ছে নিয়ম ভাঙার চিত্র। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন একনজরে-
মার্চ মাসেই ভারতে শুরু হতে পারে ১২-১৪ বছর বয়সীদের কোভিড টিকাকরণ। এমনটাই জানিয়েছেন ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন (NTAGI) এর কোভিড-১৯ ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান ডাঃ এন কে অরোরা। মার্চের মধ্যে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের ততদিনে কোভিডের দুটো টিকায় সম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই মার্চ থেকেই ১২-১৪ বয়সীদের টিকাকরণ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। এখনও অবধি ১৫-১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭.৪ কোটি (৭,৪০,৫৭০০) জনসংখ্যার মধ্যে ইতিমধ্যে ৩.৪৫ কোটির বেশি জনসংখ্যার কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। অরোরা বলেছেন, আগামী ২৮ দিনের মধ্যে তাদের দ্বিতীয় ডোজও দেওয়া হয়ে যাবে।
বিস্তারিত পড়ুন : ফেব্রুয়ারিতে শেষ হতে পারে ১৫-১৮ বছরের টিকাকরণ, মার্চেই ১২-১৪ বছরের টিকাকরণ
করোনায় আক্রান্ত গৌতম দেব। বর্তমানে শিলিগুড়ির এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
যাঁরা অসুস্থ, তাঁদেরকে বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যাঁরা পাননি তাঁরা খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নম্বরে নিজেদের আধার কার্ড এবং নাম, ফোন নম্বর দিয়ে এসএমএস করতে পারবেন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকরা বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেবেন।
১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণ আর খুব বেশি দেরি নেই। বর্তমানে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এবার ১২ বছর বয়স থেকেই নেওয়া যাবে টিকা। নীতি আয়োগ সদস্য এনকে অরোরা জানিয়েছেন আগামী মার্চ মাস থেকে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হবে।
প্রথম-দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই কি তৃতীয় ঢেউয়ে আচরণ করবে কোভিড! স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত দু’বছরে ঢেউ পরবর্তী পর্বেই রাজ্যে মৃত্যুহার ছিল সবচেয়ে বেশি। দৈনিক বুলেটিনে আক্রান্তের সংখ্যা যখন নিম্নমুখী তখন বেড়েই চলেছে কোভিডে মৃতের সংখ্যা। আর এখানেই প্রথম-দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু কমানো যাবে কি না সেই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। একবার চোখ বোলানো যাক প্রথম থেকে শুরু করে তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত কোভিডে মৃত্যুহারের দিকে।
ভুবনেশ্বরের এইমস (Bhubaneshwar AIIMS)হাসপাতালে মোট ২৫০ জন চিকিৎসক, পড়ুয়া ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এবার বন্ধ করে দেওয়া হল সমস্ত বহির্বিভাগের (OPD) সমস্ত পরিষেবা। রবিবারই ভুবনেশ্বর এইমসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পড়ুয়ারা করোনা আক্রান্ত হওয়ায়, সোমবার থেকে সমস্ত স্পেশালিটি ও সুপার স্পেশালিটি বিভাগগুলির বহির্বিভাগ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা যাতে মসৃণভাবে চালানো যায়, সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সুপারিন্টেডেন্ট তথা অধ্যাপক ডঃ সচ্চিদানন্দ মোহান্তি।
বিস্তারিত পড়ুন: AIIMS Bhubaneswar shuts OPD: করোনা আক্রান্ত ২৫০ চিকিৎসক-পড়ুয়া, বহির্বিভাগ বন্ধ হল ভুবনেশ্বর এইমসে
ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে দিল্লির করোনা সংক্রমণ। আগামিদিনে এই সংক্রমণ আরও কমবে বলেই আশাবাদী দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈন। এ দিন তিনি বলেন, “আজ দিল্লিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার আক্রান্তের খোঁজ মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও অবধি প্রায় ২ কোটি ৮৫ লক্ষ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে রাজ্যে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০০ শতাংশই করোনা টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছেন।”
Delhi to report around 14,000-15,000 cases today, much less than y'day. Around 2.85cr doses have been administered in Delhi; 100% eligible population inoculated with 1st dose, 80% with 2nd dose, & 1.28 lakh people received precautionary dose: Delhi Health Minister Satyendar Jain pic.twitter.com/azwOgxHI8z
— ANI (@ANI) January 17, 2022
করোনামুক্ত হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এ দিন তিনি সকালে তিনি বিজেপির সদর দফতরে যান। সেখানে উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন।
After recovering from #COVID19, BJP president JP Nadda reached BJP headquarters. He will hold meetings related to Assembly elections in Uttar Pradesh, Punjab, Uttarakhand. pic.twitter.com/qKdkcLRPKE
— ANI (@ANI) January 17, 2022
করোনার আগের দুটি ঢেউয়ের মতো এবারও সবথেকে বিপযর্স্ত মহারাষ্ট্রই। সেখানে একদিনেই ৪১ হাজার ৩২৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এই নিয়ে রাজ্য়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ লক্ষ ১১ হাজার ৮১০-এ। একদিনেই নতুন করে ৮ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মেলায় রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্য়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৩৮-এ।
অন্যদিকে, দিল্লিতে রবিবার নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ২৮৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। রাজ্যে সংক্রমণের হারও ৩০.৬৪ শতাংশ থেকে কমে ২৭.৮৭ শতাংশে কমে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গেও কিছুটা কমেছে সংক্রমণ। রবিবার স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৩৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৯ হাজার ৯৭৩ জন। সুস্থতার হার ৯০.৪৯ শতাংশ। পজিটিভিটি রেট ২৭.৭৩ শতাংশ।
করোনার পাশাপাশি দেশে ওমিক্রন সংক্রমণও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ২০৯। এরমধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর খোঁজ মিলেছে মহারাষ্ট্রে, সেখানে মোট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৩৮। দিল্লি, গুজরাটকে টপকিয়ে এরপরই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য়ে বর্তমান ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৭২। দেশের ২৯টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট।
দেশে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৪১। দেশের মোট সংক্রমণের ৪.৪৩ শতাংশই সক্রিয় রোগী। দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেলেও, দৈনিক সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে দৈনিক সংক্রমণের হার ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯.৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাপ্তাহিক সংক্রমণও বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৪১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গতকালই দৈনিক সংক্রমণে বৃদ্ধি হয়েছিল। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২ লক্ষ ৭১ হাজার ২০২ -এ। তার একদিনের মধ্যেই সংক্রমণ কমে দাঁড়াল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৯-তে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টাতেই দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭৩ লক্ষে।
করোনা সংক্রমিত হলেও থাকতে হবে না একান্তবাসে, এমনই নতুন নিয়ম আনতে চলেছে ব্রিটেনের বরিস সরকার। দ্য টেলেগ্রাফ সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পাকাপাকিভাবে একান্তবাস বা সেল্ফ-আইসোলেশনের নিয়ম তুলে দিতে চাইছেন। একান্তবাসে থাকার নির্দেশিকা জারি থাকলেও, নিয়ম ভাঙলে যে আইনি শাস্তির মুখে পড়তে হত, এবার থেকে তা আর হবে না। আগামী সপ্তাহেই এই নতুন নিয়ম নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
বিস্তারিত পড়ুন: UK COVID-19 Self Isolation Rules: করোনা হলেও থাকতে হবে না ঘরবন্দি হয়ে, একান্তবাসের নিয়ম তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা বরিস সরকারের
বিজ্ঞানী-গবেষকদের পূর্বাভাস ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের জেলা প্রশাসনগুলিও আলাদাভাবে সংক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেমন, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ইন্দোরে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফে বিধিনিষেধ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসা সামগ্রী ও হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুণে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা সংক্রমণের গতির নিরিখে মুম্বইয়ের থেকে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু বিগত দুই সপ্তাহ ধরে মুম্বইয়ে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী ছিল, সেই হিসাবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে পুণেতে করোনা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে।
কেমব্রিজ ট্রাকারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই বিহার, চণ্ডীগঢ়, কর্নাটক, পঞ্জাব, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। দৈনিক সর্বোচ্চ আক্রান্তের খোঁজ মিলতে পারে এই রাজ্যগুলি থেকে। অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, ওড়িশা, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকবে। এরমধ্যে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে আবার বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, সেই কারণে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি।
নতুন বছরের শুরু থেকেই দিল্লি, মুম্বই কিংবা কলকাতার মতো বড় শহরগুলিতে ক্রমশ বাড়ছিল করোনা সংক্রমণ। দিল্লি-মুম্বইতে লকডাউন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছতেই হঠাৎ করে এই শহরগুলিতেই কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ। রবিবারই দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈন জানান, হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যায় এই পতন সংক্রমণের একটি সমতল পর্যায়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও বর্তমানে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে সংক্রমণের হারেও পতন হয়েছে।
কিছুটা স্বস্তি দিয়ে কমল দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৫৮ হাজার মানুষ, যা গতকালের সংক্রমণের তুলনায় ৪ শতাংশ কম।