Voting Ink: হাতে ভোটের কালি লাগলে তা ওঠে না কেন? জানেন এই কালি কোথায় পাওয়া যায়?
Election Ink: দেশের সব জায়গায় নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত এই বিশেষ কালি পাওয়া যায় না। একমাত্র কর্নাটক রাজ্যের মাইসোর পেইন্ট অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড (এমভিপিএল) নামে একটি কোম্পানিতেই নির্বাচনের কালি তৈরি করা হয়। কোম্পানিটি ১৯৩৭ সালে মহীশূর প্রদেশের তৎকালীন মহারাজা নালভাদি কৃষ্ণরাজা ওয়াদিয়ারের হাত ধরে তৈরি হয়েছিল।
নয়া দিল্লি: আগামী মাস থেকেই শুরু গণতন্ত্রের সবথেকে বড় উৎসব। দুই মাস জুড়ে দেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্রের মসনদে কে বসবেন, তা নির্ধারণ হবে এই নির্বাচনের মাধ্যমেই। নির্বাচন ঘিরে উৎসাহ-উন্মাদনার কোনও অভাব নেই। তবে ভোটের সবথেকে বড় পরিচয় হল হাতের কালি। ভোটারদের হাতে দেওয়া হয় এক ধরনের বিশেষ কালি, যা দেখে বোঝা যায় ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। এই কালি কিন্তু যে-সে কালি নয়, চাইলেই দোকানে পাওয়া যায় না এই কালি। হাতে কালি লাগানোর পর তা সহজে তুলেও ফেলা যায় না। এই কালির বিশেষত্ব কী জানেন?
কোথায় তৈরি হয় নির্বাচনের কালি?
দেশের সব জায়গায় নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত এই বিশেষ কালি পাওয়া যায় না। একমাত্র কর্নাটক রাজ্যের মাইসোর পেইন্ট অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড (এমভিপিএল) নামে একটি কোম্পানিতেই নির্বাচনের কালি তৈরি করা হয়। কোম্পানিটি ১৯৩৭ সালে মহীশূর প্রদেশের তৎকালীন মহারাজা নালভাদি কৃষ্ণরাজা ওয়াদিয়ারের হাত ধরে তৈরি হয়েছিল। গোটা দেশে শুধুমাত্র এই কোম্পানিরই নির্বাচনে ব্যবহৃত কালি তৈরির লাইসেন্স রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি আরও অনেক ধরনের কালি তৈরি করলেও, নির্বাচনের কালি তৈরিই এই সংস্থার মূল পরিচয়।
কবে এই কালি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল?
১৯৬২ সালের নির্বাচনে এই কালি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। ভারতীয় নির্বাচনে নীল কালি অন্তর্ভুক্ত করার কৃতিত্ব দেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেনের। এমভিপিএল কোম্পানি এই নির্বাচনের কালি সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে না। এই কালি শুধুমাত্র সরকার বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতেই সরবরাহ করা হয়।
কেন আনা হল এই বিশেষ কালি?
নির্বাচনের কালির বিশেষ বিষয় হল, এটি সহজে মুছে যায় না। জল দিয়ে ধোয়ার পরও কয়েকদিন থেকে যায়। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হয়? ১৯৫০-এর দশকে বিশেষ কালি তৈরির কাজ শুরু হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল জাল ভোট ঠেকানো। কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (CSIR) বিজ্ঞানীরা ১৯৫২ সালে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে (CSIR-NPL) এই বিশেষ কালির ফর্মুলা তৈরি করেছিলেন। পরে এটি ন্যাশনাল রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (NRDC) পেটেন্ট করে।
নির্বাচনের কালি কেন মুছে যায় না?
নির্বাচনের কালি না মোছার কারণ হল, এটি তৈরির সময় সিলভার নাইট্রেট নামক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সিলভার নাইট্রেট জলের সংস্পর্শে এলেই নীলচে কালো হয়ে যায় এবং বিবর্ণ হয় না। নির্বাচন আধিকারিকরা যখন ভোটারের আঙুলে নীল কালি লাগান, তখন সিলভার নাইট্রেট শরীরে উপস্থিত লবণের সঙ্গে মিলিত হয়ে সিলভার ক্লোরাইড তৈরি করে, যা কালো রঙের হয়।
এই সিলভার ক্লোরাইড জলে দ্রবীভূত হয় না, ত্বকের সঙ্গেই লেগে থাকে। এমনকী, সাবান দিয়েও ধুলেও উঠে যায় না। নির্বাচনী কালি যে আঙুলে লাগানোর এক সেকেন্ডের মধ্যেই তার ছাপ ছেড়ে যায়। এই কালিতে অ্যালকোহলও থাকায় এটি ৪০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে শুকিয়ে যায়।
নির্বাচনী কালির চিহ্ন তখনই মুছে যায় যখন ত্বকের কোষ ধীরে ধীরে পুরনো হয়ে যায় এবং খসে পড়ে। এই কালি সাধারণত ২ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত ত্বকে থাকতে পারে।
সারা বিশ্বে কালি সরবরাহ করা হয়-
প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে এই ভোটের কালি ভরে পাঠানো হয়। এটি শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে এই কালি নির্বাচনে ব্যবহৃত হয়। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডা, ঘানা, নাইজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মলদ্বীপ সহ ২৫টি দেশে মাইসোর পেইন্ট এবং বার্নিশ লিমিটেডের বিশেষ কালি রফতানি করা হয়।