নয়া দিল্লি: প্রতিবেশী দেশে দাঁড়িয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করেছিলেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই (Wang Yi)। তার কড়া জবাব দিয়েছে বিদেশমন্ত্রক (Foreign Ministry)। এরইমাঝে ভারত সফরে এলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তার এই ঝটিকা সফর সম্পর্কে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar) জানালেন, বিগত দুই বছরে ভারত-চিনের মধ্যে সম্পর্ক অপরিকল্পিত মোড় নিয়েছে। তিনি বলেন, “খুব কম সংখ্যক মানুষই হয়তো কল্পনা করতে পেরেছিলেন যে বিগত দুই বছরে ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক এমন মোড় নেবে।”
২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ঘিরে ভারত ও চিনের মধ্যে যে বিরোধ শুরু হয়েছিল, তা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয় গালওয়ান সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে। গালওয়ানের ওই সংঘর্ষে শহিদ হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। বহু চিনা সৈন্যেরও মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু হয়। চিনকে শায়েস্তা করতে এবং দেশের আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কয়োকশো অ্যাপ্লিকেশন যেমন ব্যান করা হয়। তেমনই চিনা দ্রব্যও বয়কট শুরু হয়। চিনের অর্থনীতির সবথেকে বড় অংশই উৎপাদন ও রফতানির উপরে নির্ভরশীল। ভারতের মতো বড় বাজার হাতছাড়া হলে, অর্থনীতিতে ব্যপক চাপ সৃষ্টি হতে পারে, এই কথা মাথায় রেখেই তাই ফের একবার সুসম্পর্ক তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে চিন।
বিগত দুই বছরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে একাধিকবার ভারত ও চিনের মধ্যে সেনাস্তরীয় ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-ও একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তবে বিগত দুই বছরে এই প্রথম উচ্চ-স্তরীয় বৈঠক হতে চলেছে। ভারত-চিনের টানাপোড়েনের সমাধানে বিদেশনীতির গুরুত্ব ব্যাখ্যাও করেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “২০২০ সালের সে মাসের সংঘর্ষের পর থেকে সেনাস্তরীয় বৈঠকের সঙ্গেই তাল মিলিয়েই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনাও হয়েছে। তাল মিলিয়ে বিদেশ ও প্রতিরক্ষানীতির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পৌঁছনোর পর চিনা বিদেশমন্ত্রীর কোনও বিশেষ কর্মসূচি ছিল না। আজ, শুক্রবার ওয়াং ই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে সূত্রের খবর।যদিও এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে, ভারত ও চিনের টানাপোড়েন নয়া মোড় নিয়েছে পাকিস্তানে চিনা বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে। সম্প্রতিই মুসলিম শাসিত ও অধ্যুষিত দেশগুলি ‘অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন’-র তরফে পাকিস্তানে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন, কাশ্মীর নিয়ে ফের একবার অনেক ইসলামিক বন্ধুদের ডাক শোনা যাচ্ছে। চিনও এই বিষয়ে একই আশা রাখে।
এরপরই ভারতের তরফে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়ে দিয়েছেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ভারতের অভ্যন্তরীণ। তিনি মনে করিয়ে দেন, চিন বা অন্য কোনও দেশের এই ইস্যুতে মন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই।