Narendra Modi in Ram Mandir Movement: রাজনীতি বা ভোটের প্রচার নয়, রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা মোদীর স্বপ্নপূরণ

Narendra Modi in Ram Mandir Movement: রাম মন্দির আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন অবশ্যই বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর জোশী প্রমুখরা। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী না থাকলে, হয়তো এই আন্দোলন সর্বভারতীয় আকার ধারণ করত না। পাঁচ দশক ধরে বিশ্বাস এবং ভক্তির পথে তাঁর এই যাত্রাই রাম মন্দিরের স্বপ্নকে সাকার করেছে। কীভাবে? আসুন দেখে নেওয়া যাক -

Narendra Modi in Ram Mandir Movement: রাজনীতি বা ভোটের প্রচার নয়, রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা মোদীর স্বপ্নপূরণ
ছয় দশক ধরে রাম মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নরেন্দ্র মোদীImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Jan 21, 2024 | 5:39 PM

অযোধ্যা: ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রামলালার প্রথম আরতি করার দায়িত্বও ন্যাস্ত হয়েছে তাঁর উপরই। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই সম্মান জানাচ্ছে রাম মন্দির তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট? তিনি কি কোনও সাধু-সন্ত না ধর্মগুরু? বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার নামে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করছেন। না, নির্বাচনী প্রচার তিনি করছেন না। আসলে অনেকেরই জানা নেই, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচার করলেও, ২০২০ সালের ৫ অগস্টের আগে প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি অযোধ্যায় কোনওদিন প্রচারে যাননি। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অযোধ্যায় আসবেন না। তাই, রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা আসলে তাঁর কাছে ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞা পূরণ। কেন বলছি? পাঁচ দশক ধরে বিশ্বাস এবং ভক্তির পথে তাঁর যাত্রাই এর জবাব দেয়।

স্বয়ংসেবক

গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই, যখন নরেন্দ্র মোদী শুধুমাত্র আরএসএস-এর এক স্বয়ংসেবক ছিলেন, সেই সময় থেকেই রাম মন্দির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাম মন্দির আন্দোলনকে গোটা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ছোট-বড় যাত্রার আয়োজন করেছিলেন।

রাম শিলা পূজনের সময় এক সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী

রাম শীলা পূজন

১৯৮৯ সালে রাম শীল পূজন উৎসবের সময়, বিজেপির কার্যকর্তা হিসেবে, গুজরাটের গ্রামে গ্রামে ঘুরে রাম মন্দির তৈরির জন্য ইট সংগ্রহ করেছিলেন মোদী।

‘গণ আদালতে অযোধ্যা’

একই সময় তিনি গুজরাটের বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯০ সালে, ‘গণ আদালতে অযোধ্যা’ নামে তাঁর এক বক্তৃতা অত্যন্ত বিখ্য়াত হয়েছিল। সেই বক্তৃতা রেকর্ড করে তার ক্যাসেট বিতরণ করেছিল বিজেপি।


আদবানির রথযাত্রা

১৯৯০-এর সেপ্টেম্বরে সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যা রাম রথ যাত্রা শুরু করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। সেই সময় গুজরাট বিজেপির সবাপতি হিসেবে, গুজরাটে এই রথযাত্রায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের ৬০০টি গ্রামের মধ্য দিয়ে যায় এই যাত্রা। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর ছিল মোদীর। আর এই সময় নবরাত্রী থাকায়, জল ছাড়া সারাদিনে কিছুই খেতেন না তিনি। প্রতিদিন এইভাবে ১৮ ঘণ্টার উপর তাঁকে খাটতে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানির স্ত্রী কমলা আদবানি। মোদীর স্বস্থ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাঁকে তিনি বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দেন। মোদীর জবাব ছিল, “এটাই আমার জীবন, আমি এই জীবনই উপভোগ করি।”

আদবানির রথযাত্রায় মোদী

দিল্লি বোট ক্লাব

দিল্লি বোট ক্লাবে, ১৯৯১ সালে অযোধ্যা রাম মন্দির আন্দোলনের সমর্থনে এক বড় মিছিল বের করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সারা দেশ থেকে বহু সংখ্যক সাধু-সন্ত-ভক্তরা জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। মজার বিষয়, একজন সাধারণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেই ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদীও।

দিল্লি বোট ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক মোদী

স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান

এরপর, ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত, রাম মন্দির আন্দোলনের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন প্রদেশের গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সব মিলিয়ে ১০ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছিল এই অভিযানে।

তবেই ফিরে আসব…

১৯৯২ সালে একতা যাত্রার সময়, নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, “রাম মন্দিরের নির্মাণকাজ যখন শুরু হবে, তখনই আমি ফের অযোধ্যায় ফিরব।” সেই কথা রেখেছেন মোদী। প্রায় তিন দশক পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অযোধ্যায় ফেরেন, রাম মন্দিরের ভূমি পূজন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে মোদী

স্বয়ংসেবক থেকে প্রধান সেবক

স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদী, ২০১৪ সালে দেশের প্রধান সেবক হন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই, ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও তিনি বরাবর রাম মন্দির আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে গিয়েছেন। তিনি বারংবার বলেছেন, এই মন্দির জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করবে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘ কয়েক দশকের জমি বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের রায় দেয়। নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য এক ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই বিতর্কিত মামলার নিষ্পত্তির উপর জোর দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সাফ জানিয়েছিলেন, রায় রামলালার পক্ষে না গেলেও তিনি তা মেনে নেবেন।

রাম মন্দির নির্মাণের ঘোষণা

২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে, লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন, সরকার রাম মন্দিরের নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য ‘শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’কে অনুমোদন দিয়েছে।

একতা যাত্রায় মুরলীমনোহর জোশীর সঙ্গে রামলালার মন্দিরে নরেন্দ্র মোদী

রাম মন্দিরের ভূমি পূজন

এর ছয় মাস পর, ২০২০ সালের ৫ অগস্ট, অযোধ্যায় এসে রাম মন্দিরের ভূমি পূজন করেন। এরপর থেকে, রাম মন্দির নির্মাণের কাজে যাতে কোনও বাধা না আসে, তা নিশ্চিত করেছে মোদী সরকার। মন্দির নির্মাণস্থলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে মোদী সরকার। শুধু তাই নয়, মন্দিরকে কেন্দ্র করে অযোধ্যার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও ১১,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে অযোধ্যা রেল স্টেশনের পুনর্গঠন, অমৃত ভারত ট্রেন চালু, ৬টি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালু ইত্যাদি।