Air India-TATA Sons: এমন এক অক্টোবরেই শুরু, ৮৯ বছর পর উত্তরসূরীর হাত ধরে ঘরে ফিরল এয়ার ইন্ডিয়া

Air India History: অনেকেই বলছেন, বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। কারণ এই এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাস শুরু হয়েছিল টাটাদের হাত ধরেই। এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা আবার ফিরল টাটার হাতে।

Air India-TATA Sons: এমন এক অক্টোবরেই শুরু, ৮৯ বছর পর উত্তরসূরীর হাত ধরে ঘরে ফিরল এয়ার ইন্ডিয়া
অলংকরন: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 08, 2021 | 11:23 PM

আজ হয়ত অনেক ভারতবাসীর কাছে বিমান সফর তেমন কোনও আকাশ কুসুম স্বপ্ন নয়। কাজের প্রয়োজনে নিত্যদিন দিল্লি-কলকাতা কিংবা মুম্বই উড়ে যেতে হয় বিমানে। তবে ১৯৩২ সালে একটি বিমান যখন কিছু চিঠিপত্র নিয়ে অবিভক্ত ভারতের করাচি (Karachi) থেকে মুম্বইয়ের (Mumbai) দিকে উড়ে এল, সে দিন দেশে এক নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়েছিল। ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক বিমান হিসেবে সেটাই ছিল প্রথম সফর। আর যার হাত ধরে উড়েছিল ভারতের সেই স্বপ্নের উড়ান, তিনি হলেন জেআরডি টাটা (JRD Tata)। ৮৯ বছরের পুরনো সেই ইতিহাস হয়ত আজ অনেকটাই মলিন। তবে টাটা সন্সের (TATA Sons) হাতে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা যাওয়ার পর অনেকেই বলছেন, বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। কারণ এই এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) ইতিহাস শুরু হয়েছিল টাটাদের হাত ধরেই।

জল্পনা অনেকদিন ধরেই ছিল। অবশেষে আজ সরকারি অনুমোদনের পর এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা চলে গেল টাটা সন্সের হাতে। এই ঘোষণার পরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন রতন টাটা (Ratan Tata)। তিনি পোস্ট করেছেন এক পুরনো ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান থেকে নেমে আসছেন জাহাঙ্গির রতনজি দাদাভাই টাটা। লিখেছেন, ‘জেআরডি টাকার হাত ধরে বিশ্বের অন্যতম অভিজাত এয়ারলাইন্স হয়ে উঠেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। তিনি উল্লেখ করেছেন সেই হৃতগৌরব ফেরানোর দায় আবারও টাটার কাঁধে।’

বৃত্ত সম্পূর্ণ

যে সম্পদ টাটার ছিল, কার্যত সেটাই আবার ফিরে এল তাদের হাতে। ভারতে প্রথম লাইসেন্স প্রাপ্ত পাইলট ছিলেন জেআরডি টাটা। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা হয় টাটা এয়ারলাইনসের। ১৯৩২-এ প্রথমবার সংস্থা বিমান ওড়ায় টাটা এয়ারলাইনস। পরে সেই সংস্থার নাম বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই উড়ান সংস্থা।

পরে বেসরকারি উড়ান সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়া। দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা হারায় এই সংস্থা। কারণ তুলনামূলকভাবে সস্তায় ওড়ার সুযোগ করে দেয় আরও অনেক সংস্থা।

২০০৭-এর ‘ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস লিমিটেড’-এর সঙ্গে যুক্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু কোনওভাবেই লাভের মুখ দেখানো সম্ভব হচ্ছিল না এই সংস্থাকে। ২০২৩-তে ইউপিএ সরকারের আমলেও এই সংস্থার বেসরকারিকরণের কথা ভাবা হয়। টাটা গ্রুপের হাতে বর্তমানে রয়েছে দুটি উড়ান সংস্থা- এয়ার এশিয়া ও ভিস্তারা। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে পুরনো আবেগ রয়েছে টাটার। তাই তারা যে কোনও মূল্যেই টাটারা মালিকানা পেতে চেয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

অক্টোবরের ভোরে…

১৯৩২ সালে টাটা এয়ার সার্ভিস শুরু করে। ১৯৩২ সালের এমনই এক অক্টোবরে প্রথম টাটা র সেই বিমান করাচি থেকে তৎকালীন বম্বের উদ্দেশে ওড়ানো হয়। বিমাল উড়িয়েছিলেন খোদ জেআরডি টাটা। একটি এয়ার মেল বিমান ওড়ানো হয়েছিল। সিঙ্গল ইঞ্জিনের দে হাভিলান্ড পুস মথ বিমান ছিল সেটি। মুম্বইয়ের জুহু এয়ারস্ট্রিপে অবতরণ করে সেই বিমান। পরে জেআরডি টাটা স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন সেই অক্টোবরের ভোরো কী ভাবে মনে মনে শুধু প্রার্থনা করছিলেন তিনি। একটা ছোট টিম নিয়ে কী ভাবে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই গল্পও শুনিয়েছিলেন পরে।

এরপরই সাপ্তাহিক এয়ার মেল সার্ভিস শুরু করা হয়। করাচি থেকে মাদ্রাজের মধ্যে চলাফেরা করত সেই বিমান। আমেদাবাদ থেকে মুম্বইয়ের মধ্যেও চালু হয় বিমান। তৎকালীন সময়ে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছিল সংস্থার।

বিমান উড়ল বিদেশে

পরে শুরু হয় যাত্রী পরিষেবা। প্রথমে ডোমেস্টিক বিমান পরিষেবা শুরু হয়। বম্বে থেকে ছোট বিমানগুলিতে নিয়ে যাওয়া হত যাত্রীদের। ধীরে ধীরে টাটা এয়ারলাইন্সের ব্যপ্তি বাড়তে থাকে। ১৯৩৮ সালে ভারত ছাড়িয়ে কলম্বো এবং দিল্লির শুরু হয় সেই পরিষেবা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব়য়্যাল ফোর্সের যাতায়াত সহ একাধিক বিষয়ে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিমানগুলিকে রক্ষনাবেক্ষনেও সাহায্য করেছিল টাটা।

সরকারের হাতে এয়ার ইন্ডিয়া

১৯৫৩ সালে কেন্দ্র এয়ার কর্পোরেশন আইন পাশ করে। টাটার কাছ থেকে এয়ারলাইন্সের মালিকানার ওকটা বড় অংশ কিনে নেয় সরকার। কিন্তু সরকার কিনে নিলেও জে আর ডি টাটা ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেই কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু সরকার মালিকানা নেওয়ার পর ফের একবার নাম বদলে যায়। নাম বদলে করা হয় এয়ার ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশানাল লিমিটেড।

ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আবার টাটার ঘরে

২০০৫ সালে নামে আরও একটা ছোট্ট পরিবর্তন আনে এয়ার ইন্ডিয়া। নামে থাকা দুটি শব্দের মাঝখান থেকে উড়িয়ে দেওয়া হয় হাইফেন। এয়ার-ইন্ডিয়া হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়া। পরে ২০০৭ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যুক্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ২০০১ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথম এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ফের ইন্ডিয়া বেসরকারি করনের চেষ্টা করা হয়। দেখা যায় ঋণের বোঝা ৫০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু সেই সময় কোনও সংস্থা দরপত্র জমা দেয়নি। তখন কেন্দ্র চেয়েছিল ২৪ শতাংশ শেয়ার নিতে হবে কোনও সংস্থাকে। তাতেও যখন কাজ হল না তখন ২০২০-তে নতুন কৌশল নিল কেন্দ্র। ১০০ শতাংশ মালিকানা তুলে দেওয়ার কথা বলা হল কেন্দ্রের তরফে। এরপরই দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্র জমা দেয় স্পাইস জেট কর্তা অজয় সিংহ। কিন্তু তাঁর ১৫ হাজার কোটির দরপত্রকে ছাপিয়ে যায় রতন টাটার ১৮ হাজার কোটি। এরপরই সেই দরপত্রে অনুমোদন দিল কেন্দ্র। তাই এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিহাস যখন প্রায় ১০০ বছরের পথ অতিক্রম করতে চলেছে, তখন আবারও পুরনো মালিকের ঘরে ফিরল এয়ার ইন্ডিয়ার মহারাজ।

আরও পড়ুন: Air Force Day 2021: ভারতীয় বায়ু সেনার ৮৯ বছর, শুভেচ্ছায় ভাসলেন আকাশ যোদ্ধারা