নয়া দিল্লি: অবশেষে রাজধানীর বুকে এক বিশাল সমাবেশ করতে চলেছে বিরোধী দলগুলির জোট, ‘ইন্ডিয়া’। গত বছর জুলাইয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু, চলতি বছরের শুরু থেকে জোটের অবক্ষয় শুরু হয়েছিল। জোট, ঐক্যবদ্ধভাবে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন করছে না, রাজনৈতিক মহলে সেই প্রশ্ন বারংবার উঠেছে। অবশেষে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের গ্রেফতারি, তা ঘটাল। ৩১ মার্চ দিল্লির রামলীলা ময়দানে এই বিশাল সমাবেশ করবে ইন্ডিয়া জোট। রবিবার, দিল্লির মন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা গোপাল রাই এই সমাবেশের কথা জানিয়েছেন। সমাবেশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ সমাবেশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে, আবগারি নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই ঘটনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর তড়াচ্ছে বিরোধীরা। তারই মধ্যে এই সমাবেশের কথা ঘোষণা করা হল।
ভোটের আগে ইন্ডিয়া জোট অনেকটাই অগোছালো হয়ে পড়েছিল। বাংলার মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিক দলগুলির মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল। আরএলডি, জেডিইউয়ের মতো বেশ কয়েকটি দল, এনডিএ শিবিরে গিয়ে ভিড়েছে। তবে, কেজরীবালের গ্রেফতারি, ইন্ডিয়া জোটের জন্য শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনা জোটকে অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। আপের সঙ্গে যাবতীয় তিক্ততা ভুলে, কেজরীবালের সমর্থনে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন দিল্লি কংগ্রেসের নেতারাও। কেজরীবালের গ্রেফতারির পর, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বিরোধীদের নিশানা করার কাজে লাগানো হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে ইন্ডিয়া জোট। জোটের যে প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছিল, সেই দলে তৃণমূলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এই অবস্থায় রামলীলা ময়দানের সমাবেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
রবিবার বিকেলে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে ইন্ডিয়া জোট। দিল্লির মন্ত্রী গোপাল রাই বলেন, “কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে রাজনীতিবিদদের ভয় দেখানোর জন্য এবং বিরোধীদের নির্মূল করার জন্য ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী। ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন হোক বা বিহারের তেজস্বী যাদব, সবার বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। কেজরীবালকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আপ নেতাদের বিক্ষোভ প্রতিরোধে দিল্লিকে দুর্গে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অরবিন্দ কেজরীবালের পরিবারকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মধ্যে, আপের সদর দফতর সিল করে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রচার করতে পারছে না।”
দিল্লি কংগ্রেসের সভাপতি অরবিন্দর সিং লাভলি বলেছেন, “এটা কি গণতন্ত্র? আপনি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করছেন, ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করছেন। আমাদের নেতা রাহুল গান্ধী গণতন্ত্র বাঁচাতে লড়াই করেছেন। কংগ্রেস পিছপা হবে না।” সিপিএম নেতা রাজীব কুনওয়ার বলেছেন, ৩১ মার্চ ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত নেতারা এই সমাবেশে যোগ দেবেন। আমরা দিল্লির জনগণের কাছে এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। গণতন্ত্রের উপর এই আক্রমণ আমরা সহ্য করব না।” তবে, সভা করার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গোপাল রাই বলেছেন, “অনুমতি না পেলে তা গণতন্ত্রের জন্য আরও উদ্বেগজনক হবে।”