অযোধ্যা: ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ‘মৌনি মাতা’ও, তিন দশক পর নীরবতা ভাঙার। তাঁর আসল নাম সরস্বতী দেবী। ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধা ঝাড়খন্ডের ছোট্ট শহর ধানবাদের বাসিন্দা। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনই তিনি শপথ নিয়েছিলেন, অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আর কথা বলবেন না। ধীরে হলেও, তাঁর এই তপস্যা, এই সাধনা ফল দিয়েছে।
১৯৮৬ সালে তাঁর স্বামী দেবকিনন্দন আগরওয়ালের মৃত্যুর পর থেকে, রামকেই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সরস্বতী দেবী। প্রতিদিন ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে, ছয়-সাত ঘণ্টা ধ্যান করেন তিনি। সন্ধ্যায় আরতি করে রামায়ণ-ভগবদ্গীতার মতো ধর্মীয় বই পড়েন। তিনি দিনে মাত্র একবার খাবার খান, নিরামিষ – ভাত, ডাল এবং রুটি। এছাড়া, সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা এক গ্লাস করে দুধ খান তিনি। ২০০১ সালে, মধ্য প্রদেশের চিত্রকূটে সাত মাস ধরে তপস্যা করেছিলেন তিনি। রামায়ণ অনুসারে, এই চিত্রকূটে তাঁর নির্বাসনের বছরগুলির একটা বড় সময় কাটিয়েছিলেন রাম। এছাড়া, চারধাম, অযোধ্যা, কাশী, মথুরা, তিরুপতি বালাজি, সোমনাথ মন্দির, বাবা বৈদ্যনাথধামের মতো তীর্থস্থান পরিদর্শন করেন সরস্বতী দেবী।
২০২০ সাল পর্যন্ত অবশ্য তিনি পুরোপুরি মৌন থাকতেন না। দুপুরে এক ঘণ্টা করে কথা বলতেন। বাকি সময়, আকারে-ইঙ্গিতে বা লিখে-লিখে ভাব প্রকাশ করতেন। কিন্তু, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের ভূমি পূজন করা পর থেকে তিনি কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন, মৌনিমাতা তাঁর অজ্ঞীকার পূরণের জন্য অপেক্ষা করছেন। রাম মন্দিরের মোহান্ত নৃত্য গোপাল দাসের পক্ষ থেকে রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে তিনি অযোধ্যা পৌঁছেও গিয়েছেন। লিখে লিখে সরস্বতী দেবী বলেছেন, “আমার জীবন প্রায় শেষ। রামলালা আমাকে তাঁর মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার উপলক্ষে ডেকেছেন। আমার তপস্যা ও ধ্যান সফল হয়েছে। ৩০ বছর পর, রাম নাম নিয়েই আমি আমার মৌন ব্রত ভাঙব।”