নয়া দিল্লি: সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দল এবং জোটকে দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। ৪ জুন, দীর্ঘদিন পর তাঁর মুখে দেখা গিয়েছে স্বস্তির হাসি। নিজেও ওয়ানাড় এবং রায়বরেলী দুই আসন থেকেই বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু, এই সুসময়েও তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ – শ্যাম রাখবেন না কূল। ২৬ এপ্রিল, দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের দিন ভোট দিয়েছিল ওয়ানাড়। তার বেশ কয়েকদিন পর, তাঁকে উত্তর প্রদেশের রায়বরেলী থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। দুটি আসনেই জিতে যাওয়ায়, একটি আসন তাঁকে ছেড়ে দিতেই হবে। কোন আসন ছাড়বেন তিনি? এখন এটাই তাঁর কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন। একটি আসন তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনকে বাঁচিয়েছিল, আরেকটির সঙ্গে রয়েছে আবেগের বন্ধন।
৪ জুন ফল ঘোষণার পর, সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধীকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, “আমি দুই আসন থেকেই জিতেছি। রায়বরেলী এবং ওয়ানাড়ের ভোটারদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি কোন আসনটি রাখব, তা এখনও ঠিক হয়নি। আমি এই বিষয়ে আলোচনা করে তারপর জানাব।” ওয়ানাড়ে, রাহুলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি এবং সিপিআই। সিপিআই প্রার্থী ছিলেন দলের বিশিষ্ট নেত্রী অ্যানি রাজা, আর বিজেপির হয়ে লড়েন রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন। দুই পক্ষই দাবি করেছে, রায়বরেলীতে জিতে গেলে, ওয়ানাড় কেন্দ্র ত্যাগ করবেন রাহুল। মুশকিলের বিষয় হল, দুই জায়গার সঙ্গেই কংগ্রেসের অনেক পুরোনো যোগ রয়েছ। ফলে, কোনও একটিকে বেছে নেওয়া রাহুলের পক্ষে বেশ কঠিন।
২০০৯-এ সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর, তৈরি হয়েছিল ওয়েনাড় কেন্দ্র। তারপর থেকে এখানকার মানুষ একটানা কংগ্রেসকে আশীর্বাদ করেছেন। ২০১৯-এ তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে ওয়ানাড় থেকে লড়তে এসেছিলেন রাহুল গান্ধী। তাঁর বরাবরের কেন্দ্র অমেঠীতে স্মৃতি ইরানির কড়া চ্যালেঞ্জ ছিল। অমেঠী তাঁকে ফেরালেও, ওয়ানাড় তাঁকে লোকসভায় পাঠিয়েছিল। সূত্রের খবর, চলতি বছরের নির্বাচনের আগে, কংগ্রেসের শীর্ষ কর্তাদের রাহুল গান্ধী সাফ জানিয়েছিলেন, ওয়ানাড় থেকে তিনি ফের দাঁড়াতে চান। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনের দুর্দিনে যারা তাঁকে সমর্থন করেছে, সেই ভোটারদের তিনি ত্যাগ করতে চান না।
অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশের রায়বরেলী কেন্দ্রের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের যোগ প্রথম নির্বাচনের সময় থেকে। ১৯৫২ সালে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জামাই তথা ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। এরপর, এখানে প্রার্থী হন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৬১ সালের নির্বাচনে ৫৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জমিতেছিলেন তিনি। জরুরী অবস্থার পরের ভোটে অবশ্য এখানেই, ভারতীয় লোকদলের রাজ নারায়নের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীকে। পরবর্তীকালে, এই আস থেকে প্রার্থী হন সনিয়া গান্ধী। প্রায় দুই দশক ধরে এখানে জয়ী হয়েছেন সনিয়া। প্রচারের সময় সনিয়া রায়বরেলীর জনতাকে বলেছিলেন, “আমার ছেলেকে আপনাদের হাতে সঁপে দিলাম।” এই আবেদের টানকেও উপেক্ষা করা রাহুলের পক্ষে কঠিন হবে।