চণ্ডীগঢ়: প্রতি পরতে যেন রহস্য মোড়া। লুধিয়ানা বিস্ফোরণ কাণ্ডে তদন্তে নেমে এবার পঞ্জাবের সেন্ট্রাল জেলে পৌঁছল তদন্তকারী দল। সেখান থেকে ৭টি ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই ফোনগুলির মধ্যে বেস কয়েকটি ব্যবহার করেছিল বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত গগনদীপ।
গত সপ্তাহেই পঞ্জাব পুলিশ(Punjab Police)-র তরফে জানানো হয়েছিল, গত ২৩ ডিসেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলা আদালতে যে বিস্ফোরণটি হয়েছিল, তা ঘটিয়েছিল গগনদীপ সিং নামক এক ব্যক্তি। তিনি প্রাক্তন পুলিশকর্মী। তিনি হেড কন্সটেবল ছিলেন, কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
মাদক পাচার কাণ্ডে তিনি মদত দিতেন, এই প্রমাণিত হওয়ায়, দুই বছরের জন্য জেলেও পাঠানো হয় তাঁকে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। গত ২৩ তারিখ লুধিয়ানার রেকর্ডরুমের পাশে শৌচালয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল ওই মামলার যাবতায় প্রমাণ লোপাট করতেই। প্রাথমিক তদন্তের পর জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এই তথ্যগুলি জানিয়েছে।
মাদকচক্রে অভিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ায়, দুই বছর লুধিয়ানার সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিল গগনদীপ। গতকাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল সেখানে অভিযান চালিয়েই জেলের একাধিক সেল মোট ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। আপাতত ওই ফোনগুলিকে ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে যাচাইয়ের জন্য।
সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় রঞ্জিৎ সিং ও সুখবিন্দর সিংয়ের। জেলবন্দি থাকাকালীন তারাও লুকিয়ে ফোন ব্যবহার করত বলে জানা গিয়েছে। ওই দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ফোনগুলি দিয়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কলও করা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া ৭টি ফোনের মধ্যে ২টি ফোন সবথেকে বেশি ব্যবহার করত গগনদীপই।
লুধিয়ানা বিস্ফোরণকাণ্ডে খলিস্থানি সংগছনের যোগ রয়েছে, তা প্রথমদিন থেকেই সন্দেহ করা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার জার্মানি থেকে গ্রেফতার করা হয় খলিস্তানপন্থী জঙ্গি জসবিন্দর সিংকে। জানা গিয়েছে, ধৃত জসবিন্দর সিং মুলতানি কানাডা-ভিত্তিক খলিস্তানপন্থী শিখ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর সদস্য। শুধু লুধিয়ানাই নয়, দিল্লি মুম্বইতেও হামলার ছক ছিল তাঁর। সূত্রের খবর, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নির্দেশেই দিল্লি ও মুম্বইতে হামলার ছক কষেছিলেন জসবিন্দর। লুধিয়ানা বিস্ফোরণকাণ্ডের পরেই খলিস্তানি গোষ্ঠীর ধৃত সদস্য জার্মানিতে পালিয়ে যান।
গগনদীপের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করতেই লুধিয়ানার রেকর্ডরুমের পাশে শৌচালয়ে যে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল, তবে এর পিছনে জসবিন্দরের আরও বড় কোনও উদ্দেশ্য ছিল। তবে গোয়েন্দা জেরায় এখনও জসবিন্দর মুখ খোলেনি বলেই জানা গিয়েছে।
জসবিন্দরের সঙ্গে জেল থেকেই গগনদীপের যোগাযোগ হয়েছিল নাকি আগে থেকেই পরিচয় ছিল, তা জানতে গগনদীপের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জেরা শুরু করেছে পঞ্জাব পুলিশ ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। ইতিমধ্যেই আদালত চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। গগনদীপের স্ত্রী, ভাই ও প্রেমিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গগনদীপে বন্ধু, যারা জেলে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেত, তাদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দারা।