জয়পুর: গায়ে আগুন। তীব্র যন্ত্রণা সহেও রাস্তায় হেঁটে চলেছেন। সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছেন। কিন্তু, কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং আশপাশে দাঁড়িয়ে অনেকে ভিডিয়ো করতে ব্যস্ত রইলেন। এমনই অভিযোগ উঠল জয়পুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
শুক্রবার জয়পুরে একটি পেট্রোল পাম্পের বাইরে একটি ট্যাঙ্কারে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। আগুন ধরে যায় একের পর এক গাড়িতে। এই দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে বছর বত্রিশের মোটর মেকানিক রাধেশ্যাম চৌধুরির।
ওইদিন ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে রাধেশ্যামের ভাই আখেরাম একটি ফোন পান। তাঁকে হীরাপুর বাস টার্মিনালে আসতে বলা হয়। রাধেশ্যাম সমস্যায় পড়েছেন জানিয়ে ফোন করা হয়েছিল। ফোন পেয়েই দুই প্রতিবেশীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন আখেরাম।
গিয়ে দেখেন, তাঁর ভাই রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছেন। আখেরাম বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে জানান যে আমার দাদা দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬০০ মিটার হেঁটে এসেছেন। সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। কিন্তু, কেউ সাহায্য করেননি। বরং ভিডিয়ো করছিলেন।”
শুক্রবার সকালে মোটরবাইকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রাধেশ্যাম। দুর্ঘটনায় তাঁর বাইক পুড়ে গিয়েছে। জখম অবস্থায় গাড়িতে করে সোয়াই মান সিং হাসপাতালে রাধেশ্যামকে নিয়ে যান তাঁর ভাই। আখেরাম বলেন, “হাসপাতালে যাওয়ার পথে দাদার জ্ঞান ছিল। তিনি আমায় দুর্ঘটনার কথা বর্ণনা করেন। বিস্ফোরণের পরই বাইক ছেড়ে দাদা পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, আগুনের গ্রাস থেকে রক্ষা পাননি। সেই অবস্থাতেই দৌড়েছিলেন। কেউ সাহায্য না করার পর এক ব্যক্তিকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলেছিলেন।” রাধেশ্যামের শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়।
শুক্রবারের দুর্ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ট্রাকটিতে রাসায়নিক দ্রব্য ভর্তি ছিল। আর ট্যাঙ্কারে ছিল তেল। বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। তার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও কালো ধোঁয়া দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজস্থান সরকার।